সায়ন্তক চৌধুরী
এক লহমায় তাসের গরের মত ভেঙে গেল সিপিএমের দুর্গ৷ এ দুর্গ ছিল সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্বের ভরসার স্থল৷ বামফ্রন্টের দখলে থাকা একমাত্র রাজ্য৷ শিবরাত্রির সলতের মত টিমটিম করে জ্বলছিল সিপিএমের শেষ বাতি৷ কিন্তু বিজেপি হওয়ায় যেন কর্পূরের মত উড়ে গেল সিপিএমের শেষ দুর্গটিও৷ অভাবনীয় কিন্তু অস্বাভাবিক নয়৷ উত্থানের পর পতন রয়েছে৷ কিন্তু পতন যে এমনই সুনামির মত হবে তা কে ভেবেছে? স্বয়ং পলিটব্যুরোর বিচক্ষণ সদস্য তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারও ভাবতে পারেননি৷ কিন্তু হল তাই৷ বামফ্রন্ট তথা সিপিএমের এক নাগাড়ে গড়ে উঠা পঁচিশ বছরের রাজত্ব খড়কুটোর মত উড়ে গেল৷ জিরো থেকে হিরো হয়ে গেল বিজেপি৷ মাত্র দুই বছর নয়মাসে রাজ্যের রাজনীতির অঙ্গনে নিজ অস্তিত্ব ঘোষণা করে অভাবনীয় সফলতার মুখ দেখলেন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷
বিধানসভার নির্বাচনে পঁচিশ বছর রাজ্যের ক্ষমতায় ছিল সেই দল আজ অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে৷ বিধানসভার নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয় দলকে যেন খাদের কিনারে নিয়ে আসে৷ অথচ গৃহবধূর হোঁসেলে পর্যন্ত এ দলের অস্তিত্ব ছিল৷ এ দলের নেতাদের ইশারায় কমরেড বাহিনি নিমিষে মাঠে নামত৷ আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলতো৷ আজ সেই কমরেড বাহিনী দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে৷ তবে কি ৩রা মার্চ ভোটের ফলাফল ঘোষণার দিন যেসব ক্যাডার ঝান্ডা হাতে বিজয় মিছিলের জন্য তৈরি ছিল তারা যেন দলে দলে পদ্মবনে ঢুকে যাচ্ছে৷ যে সব ক্যাডার ভোট গণনার পর বিজেপি কর্মীকে দেখে নেবার হুমকি দিয়েছিল সেই ক্যাডাররা বোল পাল্টিয়ে গেরুয়া বসন পরে চোস্ত বিজেপি হয়ে গেল৷ ভোট গণনার একমাসের মধ্যে বড়সড় ধসের মুখে পড়লো সিপিএম৷ তবে কি সিপিএমের সংগঠন ঠুনকো ভিতের উপর দাঁড়িয়েছিল? কমরেডদের মনে কি এই সংগঠনের জন্য এতটুকু দরদ ছিল না? সবাই কি পাবার রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিল? দলের জয় পরাজয় থাকতে পারে৷ পরাজয়ের কারণ চিহ্ণিত করে দলকে ফের ক্যাডারদের হাল হকিকৎ দেখে মনে হচ্ছে হয় তারা ধান্দাবাজ ক্যাডার৷ নয়োত তারা নেতাদের চাপের মুখে নতি স্বীকার করেছে৷ তাদের মনে আদর্শ বলতে কিছুই নেই৷ আছে স্বার্থ সিদ্ধির করেছে৷ তাদের মনে আদর্শ বলতে কিছুই নেই৷ আছে স্বার্থ সিদ্ধির ফন্দি ফিকির৷
এই ফন্দিবাজদের দৌলতে বিজেপি ফুলে ফেঁপে উঠছে৷ হঠাৎ করে যেন বিজেপিতে ঢোকার সুনামির ঢল নেমেছে৷ রাতারাতি কমরেডের তকমা ঝেড়ে ফেলে গেরুয়া বসন পরে সাচ্চা বিজেপি বনে যাবার প্রতিযোগিতায় নেমেছে ধান্দাবাজ কমরেডরা৷ বিজেপির জন্য বিষয়টি সুখকর নয়৷ তাই সিপিএমের অঙ্গ সংগঠন গুলোও হুমকির সরকার এই দাবি মেনে নেবে৷ ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি সনদ পৌঁছ গেছে৷
মুখে৷ এখন আর সিপিএমের ডাকে হাজার কমরেড মাঠে নামে না৷ সিপিএমের মিটিং মিছিলে মহিলারা ছিল সিংহভাগ জুড়ে৷ বর্তমানে সেই মহিলাদের সিকিভাগও দেখা যাচ্ছে না৷ এ যেন একে একে নিভিছে দেউটির মত অবস্থা সিপিএমের৷ তাই সিপিএমের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ জাগে৷ তবে কি রাজ্য বিরোধী দল শূণ্য হয়ে পড়বে৷ এমন শংকা অবান্তর নয়৷
এক সময়ে রাজ্য বিরোধী দল ছিল কংগ্রেস৷ সেই কংগ্রেসের সাইনবোর্ড হাওয়ায় দুলছে৷ রাজ্য জুড়ে কংগ্রেস সমর্থক বর্তমানে দুই শতাংশ নেমে এসেছে৷ কংগ্রেসের এর চেয়ে আর কি শৌচনীয় পরিস্থিতি হতে পারে? কংগ্রেস সুপ্রিমো পিসিসির সভাপতি বীরজিৎ সিনহাকেও ছোঁট ফেলার মতলবে আছে৷ তাই যদি হয় রাজ্যে কংগ্রেস তলিয়ে যাবে হাওড়া নদীতে৷ আর তৃণমূল কংগ্রেসের কথা যত কম বলা যায় ততই ভালো৷ কেননা, এ দলের সুপ্রিমো বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী হবার স্বপ্ণে বিভোর৷ ছোট্ট রাজ্য ত্রিপুরার দিকে নজর দেবার সময় তার কই? তাহলে আর বিরোধী হিসাবে রাজ্যে ভবিষ্যতে থাকবে কোন দল? যে দল বিজেপির সাথে টেক্কা দিতে পারবে? এখন পর্যন্ত তেমন দল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ তাই আগামীতে গণতন্ত্রের জন্য যে অশনি সংকেত দেখা দিচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ তবে কি রাজ্য বিরোধী শূণ্য হতে চলেছে?
2018-04-13