BRAKING NEWS

‘আমরির সিস্টার ইন চার্জ নার্সিং পাসই করেন নি’, অভিযোগ

কলকাতা, ২৩ ফেব্রুয়ারি ( হি.স.): ‘আমরির সিস্টার ইন চার্জ নার্সিং পাসই করেননি’ । স্বাস্থ্য কমিশনে শুক্রবার জানালেন ওই হাসপাতালেরই নার্স স্মুতি প্রিয়দর্শিনী ।দুপুরে আমরি হাসপাতালে শিশুকন্যা ঐত্রির মৃত্যুতে স্বাস্থ্য কমিশনে তৃতীয় শুনানি হল । উপস্থিত ছিলেন ঐত্রির বাবা,মা । ছিলেন চিকিত্সক জয়তী সেনগুপ্ত । প্রাক্তন ইউনিট হেড জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায় ।

আগের দু’টি শুনানিতেও চাপে ছিল আমরি কতৃপক্ষ । নিজেদের স্বপক্ষে যুক্তি দিলেও গুরুত্ব পায়নি । হাসপাতালের বিবৃতি ও হলফনামায় পার্থক্য রয়েছে বলে দাবি ঐত্রির পরিবারের । আমরির সিস্টার ইন চার্জ নার্সিং পাসই যদি নাই করে থাকবেন তাহলে

হাসপাতাল কীভাবে কমিশনে তাঁর পাস সার্টিফিকেট দিল ? সে নিয়েও প্রশ্ন উঠে গল এদিন । ভেন্টিলেশনে না রেখেও চার্জ নেওয়া হয়েছে বলে শুক্রবার অভিযোগ করেন ঐত্রির বাবা মা । বিষয়টি নিয়ে নীরব আমরি কর্তৃপক্ষ । আগামী বুধবার ফের শুনানি বলে জানিয়ে দিল স্বাস্থ্য কমিশন । সেদিন একে অপরকে জেরার সুযোগ পাবেন তারা ।

এর আগেই ঐত্রির মৃত্যুতে আমরিকে তীব্র ভাবে ভর্ৎসনা করেছিল স্বাস্থ্য কমিশন । দ্বিতীয় দফার শুনানি দিন স্বাস্থ্য কমিশনের নির্দেশ মেনে হলফনামা পেশ করে ঐত্রির পরিবার । হলফনামা পেশ করে তারা তাদের অভিযোগ জানান । ‘অভিযুক্ত’ চিকি‍ৎসক জানান, ঐত্রিকে বাঁচানোর জন্য ইনজেকশন দেওয়া হয় । স্বাস্থ্য কমিশনের সদস্যরা বলেন, ইনজেকশনের লেবেল ১.৬ এমজি লেখা ছিল । ১.৬ এমএল ইনজেকশন দেওয়া উচিত । ৬ বার ওই ইনজেকশন ঐত্রিকে দেওয়া হয় যা ওই শিশুর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর । ‘অগমেন্টিক ইনজেকশন একবারই দিয়েছিলাম’ । শুনানিতে দাবি করেন আমরির নার্স । ঐত্রির মায়ের অবশ্য দাবি, ২ বার ইনজেকশন দেওয়া হয় ।

গত ১৭ জানুয়ারি মুকুন্দপুর আমরিতে মৃত্যু হয় আড়াই বছরের ওই শিশুর । সর্দি-জ্বর নিয়ে আমরিতে ভরতি হয়েছিল ঐত্রি । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণে মৃত্যু হয় ঐত্রীর । পরিবারের অভিযোগ, চিকিত্‍সার গাফিলতিতে মৃত্যু হয়েছে ঐত্রীর । এরপর সামনে আসে ময়না তদন্ত রিপোর্ট । ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও হাসপাতালে চিকিত্‍সার যাবতীয় নথি পরীক্ষা করে ঐত্রীর পরিবারকে লিখিত রিপোর্ট দিয়েছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ অজয় কুমার গুপ্ত । সেই রিপোর্টের ছত্রে ছত্রে যা লেখা হয়েছে, তাতে ভুল চিকিত্সার কারণেই মৃত্যুর ইঙ্গিত মিলেছে । রিপোর্টের ৫ নম্বর পাতায় চতুর্থ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ১৫ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে পরেই ২ বছর ৫ মাসের ঐত্রীকে দিনে ৪০০ মিলিগ্রাম পাওয়ারের ৩টি অগমেন্টাইন ইন্ট্রা ভেনাস ইনজেকশন দেওয়া হয় । অথচ, ওরাল প্রিপারেশন, সাসপেনশন, সিরাপ দিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের জরুরি চিকিত্‍সা শুরু করা যেত । রিপোর্টের পঞ্চম পাতার পঞ্চম অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ইনট্রাভেনাস অগমেন্টাইন ইনজেকশন দেওয়ার কারণে ছোট্ট শিশুর শরীরে বিভিন্ন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় । যেমন হেপাটিক এবং রেনাল ডিসফাংশন । ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম । শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ জয়তী সেনগুপ্ত টেলিফোনে ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরামর্শ দেন । অথচ, ট্রিটমেন্টের নথিতে কোথাও জয়তী সেনগুপ্তর নাম নেই । রিপোর্টের ষষ্ঠ পাতার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,ছোট্ট শিশুকে ৪০০ পাওয়ারের অগমেন্টাইন ইনজেকশন দেওয়ার পর কী প্রতিক্রিয়া হল, তা পর্যবেক্ষণের জন্য কোনও ব্যবস্থাই রাখা হয়নি। অ্যালার্জি পরীক্ষার রিপোর্ট না দেখেই একাধিকবার দেওয়া হয় ইনজেকশন । তবুও শরীরে মেলেনি কোনও অ্যালার্জি চিহ্ন । কারণ সঙ্গে চলছিল স্টেরয়েড ইনজেকশনও । তার থেকেই ফুসফুসে জল জমে । শরীরে একাধিক জায়গায় রক্ত জমতে শুরু করে । ধীরে ধীরে সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যায় ঐত্রির বলে জানান ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ অজয় কুমার গুপ্ত ।

চিকিত্‍সার চরম গাফিলতিতেই যে আড়াই বছরের ঐত্রীর মৃত্যু, মেডিক্যাল রিপোর্ট তুলে ধরে দাবি করেছেন ওই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ । ১৫ জানুয়ারি আমরির ল্যাবে হওয়া ঐত্রীর আইজিই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে রেজাল্ট ১৬৪ । অথচ তার সর্বোচ্চ সীমা ৬০-এর মধ্যে থাকার কথা । ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের দাবি, ইনজেকশন নেওয়ার পরে হুহু করে বেড়ে গিয়েছিল ঐত্রীর আইজিই লেবেল । এমন অস্বাভাবিক রিপোর্টের পরেও ঐত্রীকে বাঁচাতে কোনও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *