নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩১ জানুয়ারি৷৷ মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়েছে৷ মোট ৩২০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন৷ ঘোষণা অনুযায়ী বামফ্রন্ট, কংগ্রেস, বিজেপি এবং আইপিএফটি তাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছে৷ কিন্তু, আশ্চর্যের বিষয় হল আইএনপিটি-এনসিটি ফোরাম তাদের ঘোষণা অনুযায়ী প্রার্থী জমা দেয়নি৷ এনসিটি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে কোন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা জমা না দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়াল৷ তবে, আইএনপিটি ১৬টি আসনে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন৷ অন্যদিকে প্রার্থীর নাম ঘোষণা না দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস একাই ২৫টি আসনে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে৷ এছাড়াও আমরা বাঙালী, টিপিপি, টিএসপি, এসইউসিআই, এনইআইডিপি, আদি বিজেপি এবং নির্দল প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন৷
নির্বাচন দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুসারে সিপিআইএমের ৫৭ জন, সিপিআইএমএলের ৫ জন, সিপিআইয়ের ১ জন, আরএসপির ১ জন, ফরোয়ার্ড ব্লকের ১ জন, কংগ্রেসের ৬০ জন, তৃণমূল কংগ্রেসের ২৫ জন আমরা বাঙালীর ২৩ জন, আইএনপিটি ১৬ জন, আইপিএফটির ১২ জন, বিজেপির ৫৬ জন, টিপিপির ৭ জন, টিএসপির ৯ জন, এনইআইডিপির ৩ জন, আদি বিজেপির ১ জন এবং নির্দল প্রার্থী ৩৮ জন আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন৷
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, আইএনপিটি এবং এনসিটির ফোরাম সম্ভবত ভেঙ্গে গেছে৷ কারণ, নির্বাচন দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী শুধু আইএনপিটির প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন৷ এনসিটির কোন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়নি৷ এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের ২৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ঘটনাটি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে খুবই বৈচিত্রময় বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ কারণ, তৃণমূল কংগ্রেস আইএনপিটি এবং এনসিটির সাথে নির্বাচনী আতাতের ঘোষণা দিয়েছিল৷ সে জায়গায় এনসিটি এই জোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছে৷ তার বদলে রাজ্য বিধানসভার প্রায় অর্ধেক আসনে প্রার্থী দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস নতুন চমক দিয়েছে বলেই দাবি রাজনৈতিক মহলের৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এরাজ্যেও প্রায় অর্ধেক আসনে প্রার্থী দিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জী৷ দলের রাজ্য পর্যবেক্ষক সব্যসাচী দত্ত ইতিপূর্বে জানিয়েছিলেন, বিধানসভা নির্বাচনে কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল কংগ্রেসও সক্রিয় অংশগ্রহণ করবে৷
বুধবার সারা রাজ্যেই সুবিশাল মিছিল করে বিজেপির প্রত্যাশীরা তাঁদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন৷ রাজধানী আগরতলার সবকয়টি বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রত্যাশীরা আজ তাঁদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন৷ মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় গেরুয়া বসনে এবং নরেন্দ্র মোদীর অঙ্কিত টি শার্ট পরে যুবকরা মহামিছিলে শামিল হয়েছিলেন৷ আগরতলার মর্যাদাপূর্ণ বনমালীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি বিপ্লব কুমার দেব৷ মাথায় গেরুয়া রংয়ের মণিপুরি পাগড়ি পরে ছাউনি ছাড়া গাড়িতে দাঁড়িয়ে গোটা এলাকা প্রদক্ষিণ করেন তিনি৷ মনোনয়নপত্র দাখিলের সয়ম তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিজেপি’র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব, ত্রিপুরার নির্বাচনী প্রভারী ড হিমন্তবিশ্ব শর্মা এবং রাজ্য প্রভারী সুনীল দেওধর৷
রাজ্যের অন্যান্য জেলা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, প্রচুরসংখ্যক কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে বিজেপি’র প্রত্যাশীরা তাঁদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে তাঁদের মনোনয়ন দাখিল করে বিজেপি প্রচারে এক অন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে৷ একই সঙ্গে সিপিআইএম এর প্রত্যাশীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় আয়োজিত মিছিলের মতোই জৌলুস, ঢাক, ডোল, নৃত্য ইত্যাদিও বিজেপি’র মিছিলে লক্ষ করা গেছে৷
এদিন বিজেপির ৬ বিধায়ক যথাক্রমে সুদীপ রায়বর্মণ, আশীষ কুমার সাহা, দিলীপ সরকার, বিশ্ববন্ধু সেন, প্রণজিৎ সিংহরায় এবং দিবাচন্দ্র রাঙ্খল নিজ নিজ কেন্দ্রে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন৷ এছাড়াও প্রাক্তন বিধায়ক রতন লাল নাথ, বিজেপির সহসভাপতি সুবল ভৌমিক, প্রাক্তন মন্ত্রী রতন চক্রবর্তী, সুরজীৎ দত্ত এদিন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন৷ অন্যদিকে কংগ্রেস বিধায়ক গোপাল রায় ও রত্না দত্ত সহ দলের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন৷
বৃহস্পতিবার মনোনয়ন পত্রগুলি পরীক্ষা করে দেখবে নির্বাচন কমিশন৷ শুক্র ও শনিবার মনোনয়ন প্রত্যাহার করা যাবে৷ শনিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের অন্তিম তারিখ৷