সিপিএম-বিজেপিতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উত্তপ্ত কমলপুর, গুরুতর জখম চারজন, নিখোঁজ আরও দুই

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ জানুয়ারী৷৷ কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যে বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে গেলেও রাজনৈতিক সন্ত্রাস এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি৷ কমলপুরে রাজনৈতিক সন্ত্রাস নতুন মাত্রা পেয়েছে৷ প্রতিপক্ষীয় দুই রাজনৈতিক দলের প্রচুর সংখ্যক কর্মী  আহত হয়েছেন৷ নিখোঁজ হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন৷ বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে ব্যাপক রাজনৈতিক সংঘর্ষ শুরু হয়েছে৷ এরপর ভোর হতেই সমগ্র কমলপুরে বিভিন্ন এলাকা রণক্ষেত্রের রূপ নেয়৷ উভয় পক্ষই পুলিশের সামনে মারপিট করছে৷ উত্তেজিত জনতাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি পুলিশ৷ ফলে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানো হয়৷ জারী করা হয়েছে ১৪৪ ধারা৷

সিপিএম বিধায়ক অঞ্জন দাস জানিয়েছেন, বিজেপির কর্মী সমর্থকরা অতর্কিত হামলা সংঘটিত করেছে৷ ফলে চারজন এখন পর্যন্ত গুরুতর ভাবে আহত হয়েছেন৷ দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের জি বি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে৷ বাকিদের কমলপুর বিমল সিনহা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে৷ তিনি অভিযোগ করেন, জনগণকে ভয় দেখিয়ে বিজেপি সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরী করছে৷ সিপিএমের প্রচারসজ্জা নষ্ট করার প্রতিবাদ করাতেই এই হামলা সংঘটিত হয়েছে৷ অন্যদিকে, বিজেপির স্থানীয় নেতা অমিত বর্মণ বলেন, সিপিএমের ক্যাডাররা এলাকায় বিজেপির প্রচারসজ্জা নষ্ট করেছে৷ এরপর সংঘবদ্ধ হয়ে বিজেপির কার্য্যালয়ে তারা হামলা চালায়৷ তবে এখন আর আগের দিন নেই৷ বিজেপির সব সমর্থক এমনকি সাধারণ মানুষও ক্যাডারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুললে এরা ভয়ে পালিয়ে যায়৷ কিন্তু, আচমকা হামললায় দুজন আহত হয়েছেন৷ আরও দুজনের কোনও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না৷ সম্ভবত ক্যাডাররা তাদের তুলে নিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছে৷

তিনি বলেন, বিজেপির কর্মীরা আপহৃতদের জন্য অনুসন্ধান করেেছ৷ ফলে বিভিন্ন এলাকাায় ক্যডাররা হামলা সংঘঠিত করছে৷ কিন্তু, বিজেপির কর্মী সমর্থকরা প্রতিরোধ করছে৷ সিপিএমের পায়ের তলায় মাটি সরে যাচ্ছে৷ তাই এ ধরনের সন্ত্রাসরাজ কায়েম করা হচ্ছে৷ এদিকে মহকুমা পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বালিগাঁও থেকে সন্ত্রাসের সূত্রপাত৷ পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় আধাসামরিক জওয়ানরা বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছে৷ কিন্তু, তার পরেও বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটছে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটালেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি৷ অতিরিক্ত বাহিনী চেয়ে পাঠানো হয়েছে৷

এদিকে, নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে গত চবিবশ ঘন্টায় রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক রাজনৈতিক সন্ত্রাস শুরু হয়েছে৷ তবে, বিজেপি কোনও রাখঢাক না করে সিপিএমের ভাষায় জবাব দিতে দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে৷ শুক্রবার রাতে বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি সুবল ভৌমিক এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে সারা রাজ্যে ১১ জন বিজেপি কর্মী, সিপিএম ক্যাডারদের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছে৷ রাতের অন্ধকারে ছয়টি পার্টি অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ তিনটি পার্টি অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে৷ রাতের অন্ধকারে ব্যাপকহারে সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে৷ বিলোনীয়া, কয়েরপুর, ধর্মনগর, অমরপুর, কমলপুরে এখনও সন্ত্রাস চলছে৷ তবে বিজেপির কর্মীরাও সন্ত্রাসের মোকাবিলা করে প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন৷

তিনি বলেন, সিপিএম পোড়ামাটি নীতি নিয়েছে৷ বুঝতে পারছে ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না৷ তাই রক্ত ঝরিয়ে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারকে বাধ্য করছে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করচে৷ তবে কোনও চক্রান্তেই কাজ হবে না৷ জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন৷ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুবল ভৌমিক আরও জানান, বিজেপি কর্মীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁরা যেন জোট বেঁধে থাকেন৷ যেকোনও ধরণের আক্রমণ প্রতিহত করতে হবে৷ মনে রাখতে হবে কমিউনিস্টরা শান্তিপূর্ণ  উপায়ে পৃথিবীর কোথাও ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি৷ এই বিষয়গুলি মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে কর্মীদের৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *