BRAKING NEWS

রাজ্যে নির্বাচনকে ঘিরে বেআইনী হস্তক্ষেপ হতে পারে, জানালেন বিজন ধর

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ জানুয়ারি৷৷ আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে সিপিএম যথেষ্ট উদ্বিগ্ণ৷ উদ্বেগের কারণ

আগরতলায় সাংবাদিক সম্মেলনে বিজন ধর৷ ছবি নিজস্ব৷

সম্পর্কেও সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে বিজেপি এবং আরএসএস নেতাদের বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার উপস্থিতির খবর সত্যি হলে রাজ্যে নির্বাচনকে ঘিরে বেআইনী হস্তক্ষেপ হতে পারে৷ এমনই আশঙ্কা করছে সিপিএম৷ তাই, বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টিতে নেওয়া হয়েছে৷ তদন্ত করে খবরের সত্যতা প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সিপিএম, জানান বিজনবাবু৷ সাথে যোগ করেন, ভূয়ো ভোটার নিয়ে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করার বদলে অযথা অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি করা হচ্ছে৷ তাঁর বক্তব্য, ফেব্রুয়ারীর মধ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া সমাপ্ত করতে হবে৷ তা সত্বেও এখনো নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা দিচ্ছেনা কমিশন৷ অথচ নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ রাজ্যে এসে জানিয়েছিল, নির্দিষ্ট সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ তাঁর কথায়, নির্বাচন সঠিক সময়ে হবে না এমন কোন সন্দেহ না থাকলেও, এবিষয়ে আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছি না৷

মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর বলেন, সংবাদ সংস্থা পিটিআই’র খবর অনুযায়ী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সরকারী বাসভবনে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব এবং আরএসএস নেতা কৃষ্ণগোপাল পূর্বোত্তরের তিন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে বৈঠক করেছেন৷ উদ্বেগের বিষয় হল, সেই বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালও উপস্থিত ছিলেন৷ বিজনবাবুর মতে, রাজনৈতিক সভায় সরকারী কর্তৃপক্ষের উপস্থিতি ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত বহন করছে৷ তাই নির্বাচন কমিশনের কাছে এই খবরের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে সিপিএম৷ পাশাপাশি পার্টির পলিটব্যুরো এই খবরের যথার্থতা নিয়ে কেন্দ্রের স্পষ্টিকরণ চেয়েছে৷

বিজনবাবু বলেন, এই খবরের সত্যতা প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি নির্বাচন কমিশনের কাছে জানিয়েছে সিপিএম৷ তাঁর মতে, এই খবর সত্যি হলে শুধু ষড়যন্ত্র নয়, তাতে নির্বাচনী বিধিও উলঙ্ঘন করা হয়েছে৷ যা সুষ্ঠ নির্বাচনের সম্পূর্ণ বিরোধী৷

এদিকে, ভূয়ো ভোটার নিয়ে রাজ্যে অযথা অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি করা হচ্ছে বলে এদিন বিজনবাবু উষ্মা প্রকাশ করেন৷ তিনি বলেন, ভোটার তালিকা নিয়ে বিভিন্নভাবে প্রচার হচ্ছে৷ তাতে ভূয়ো ভোটারের আশঙ্কা প্রতিফলিত হচ্ছে৷ তাঁর কথায়, ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া কিংবা যুক্ত করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ফর্ম রয়েছে৷ এই ফর্মের মাধ্যমেই আবেদন জানানো সম্ভব৷  তাঁর বক্তব্য, ভোটার তালিকা যথাসম্ভব নির্ভুল থাকা উচিৎ৷ কিন্তু, এনিয়ে অযথা অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি করা হচ্ছে৷

বিজনবাবুর মতে, কোনও মেয়ের বিয়ের পর তাঁর পৈত্রিক বাড়িভিত্তিক ভোটার তালিকায় নাম থাকতেই পারে৷ দেখতে হবে, একাধিক স্থানে যাতে নাম না থাকে৷ আবার কেউ বিদেশে চলে গেলে কিংবা পঠন পাঠনের জন্য বা চাকরিসূত্রে বাইরে গেলে ভোটার তালিকায় তাঁর অবস্থান কী হবে, সে নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে একটি নির্দিষ্ট নীতির প্রণয়ন করা প্রয়োজন৷ কারণ, প্রত্যেক ভোটারেরই ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে৷ অন্যথায় এই বিষয়ে দ্বিমত থাকবেই৷

বিজনবাবু বলেন, কোন কোন মহকুমায় ভোটার তালিকা নিয়ে বহু আপত্তি জমা পড়েছে৷ কিন্তু, সমস্ত দিক দেখেই নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ বলে তিনি মনে করেন৷ তাঁর কথায়, ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়া মনোনয়ন জমা দেওয়ার অন্তিম তারিখ পর্যন্ত চলবে৷ কিন্তু, নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ রাজ্যে এসে যথা সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানালেও, এখনো পর্যন্ত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেনি কমিশন৷

তাঁর বক্তব্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ কবে নির্বাচন ঘোষণা হবে তা নিয়ে উদগ্রীব হয়ে আছেন৷ এই অবস্থায় নির্বাচন ঘোষণা এখনও না হওয়ায় অনেকেই সোশাল মিডিয়ায় তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ নির্বাচন ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহের মধ্যে শেষ করতেই হবে৷ কারণ মার্চ মাসের ৪ তারিখ থেকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষা শুরু হয়ে যাচ্ছে৷ তাতে  প্রকারান্তরে বিজন ধর ভোটার তালিকা নিয়ে কথিত অভিযোগ এবং নির্বাচন ঘোষণা এখনও না করার প্রসঙ্গে তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলেই মনে হয়েছে৷

এদিকে, ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নিতানিয়াহুর ভারত সফরকে কেন্দ্র করে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে সিপিএম৷ পার্টির মতে, ভারতের দীর্ঘদিনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ঐতিহ্য নষ্ট করছে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার৷ এবিষয়ে বিজনবাবু বলেন, জোট নিরপেক্ষতার ঐতিহ্য নষ্ট করে দিচ্ছে মোদী সরকার৷ দেশের সার্বভৌমত্ব, সুরক্ষা ইত্যাদিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা হচ্ছে, শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জুনিয়র পার্টনার হওয়ার লক্ষ্যে৷ তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের বর্তমান সরকারকে ব্যবহার করে ক্রম-অগ্রগতির পথে এগিয়ে চলা চিনকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে৷ একের পর এক চুক্তি হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগ করার জন্য৷ এটা ভালো লক্ষণ নয়৷ এক প্রশ্ণের উত্তরে তিনি বলেন, চিন ভারতীয় ভূখন্ডের দখল করেছে কিংবা দখল করার চেষ্টা করছে বলে বিবৃতি আসেনি৷ যদি এ ধরনের কোনও বয়ান আসে তবে সিপিএম অবশ্যই তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে৷ একই সঙ্গে বেঞ্জামিন নিতানিয়াহুর ভারত সফরের প্রতিবাদে সিপিআইএম সারা দেশের সঙ্গে রাজ্যেও এদিন বিক্ষোভ সমাবেশ এবং মিছিল সংগঠিত করেছে বলেও তিনি জানান৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *