নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ জানুয়ারী৷৷ রাত পোহালেই পৌষ সংক্রান্তি পার্বণ৷ অনেকে আবার মকর সংক্রান্তিও বলে থাকেন৷ তা নিয়ে প্রতিটি
ঘরে চলছে উৎসবের ব্যস্ততা৷ এই পার্বণ বাঙালি অধ্যুষিত পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও বাংলাদেশে পালন করা হলেও ত্রিপুরার জাতি উপজাতি উভয় অংশের জনগণ ধুমধানের সঙ্গে পালন করে থাকেন৷
তীর্থমুখে শুরু হয়ে গেছে পূণ্যস্নান, অবগাহন, তর্পণ, অস্তি বিসর্জন, শ্রাদ্ধ ইত্যাদির প্রস্তুতি৷ এক সময় তীর্থমুখ উপজাতিদের তীর্থ স্নান হিসেবে পরিচিত হলেও বর্তমানে তীর্থমুখ জাতি উপজাতি উভয় অংশের মিলনস্থল হয়ে উঠেছে৷ ধর্মপ্রাণ মানুষেরা তীর্থ বা পুণ্য ক্রিয়াকর্মাদি করলেও বেশিরভাগ ধর্মপ্রাণ মানুষই মকর সংক্রান্তির পুণ্য লগ্ণটির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন৷ এদিন হাড় কাঁপানো ঠান্ডাকে উপেক্ষা করেই অগণিত পুণ্যার্থী গোমতীর জলে পুণ্যস্নানের জন্য সমবেত হয়েছেন৷ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে পুণ্যার্থীরা তীর্থক্ষেত্রে সমবেত হন৷
জানা গিয়েছে ইতিমধ্যে দূর দূরান্ত থেকে অগণিত পুণ্যার্থীরা দল বেঁধে তীর্থমখে পৌঁছে গেছেন৷ পাশাপাশি তীর্থমুখ পৌঁছে গেছেন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাধুসন্ত এবং সন্ন্যাসীরা৷ সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে তীর্থমুখের দুই ধারে মেলাও হয়৷ এই মেলাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের দূর দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা তারা তাদের পসরা নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন৷ এই উৎসবে এখন শুধুমাত্র বাঙালিরাই নন, জাতি উপজাতি সকলেই এখন এই সংক্রান্তির আনন্দে মেতে উঠেন৷ ত্রিপুরার উপজাতি অনুপজাতি উভয় অংশের জনগণ মূলত এই সংক্রান্তিতে হরেক রকম পিঠেপুলি, পায়েস তৈরি করেন৷ তবে এই উৎসবের অন্যতম আরও দুটি খাবার আছে সেগুলি বাতাসা ও তিলুয়া৷ কিন্তু, বর্তমান যুগে নানান মিষ্টিজাতীয় খাবরের ভিড়ে তিলুয়া ও বাতাসার কদর প্রায় নেই বললেই চলে৷ শুক্রবার বিকেল থেকে প্রতিটি গৃহস্থের ঘরে উন্মাদনা বিরাজ করছে৷ বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এখন ধান কেটে নেওয়া জমির মধ্যে বুড়ির ঘর বানিয়ে আগুন জ্বালিয়ে আনন্দ করার বিষয়টি আজকের রাতের বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়৷
তেলিয়ামুড়া সংযোজন ঃ তেলিয়ামুড়া, কল্যাণপুর, মুঙ্গিয়াকামী ব্লক ও তেলিয়ামুড়া পুর পরিষদের যৌথ উদ্যোগে চাকমাঘাট ব্যারেজ প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে পৌষ সংক্রান্তি মেলা ও প্রদর্শনী৷ আজ বিকালে প্রদীপ জ্বালিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ২ দিন ব্যাপী মেলার উদ্বোধন করেন পর্যটন দপ্তরের মন্ত্রী রতন ভৌমিক৷ উদ্বোধক হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পর্যটন মন্ত্রী শ্রী ভৌমিক বলেন, মেলা ও উৎসবের মাধ্যমে ঐক্য ও সম্প্রীতির মেল বন্ধন সুদৃঢ় হয়৷ এক সময় রাজ্যে অশান্তির বাতাবরণ ছিল, এর ফলে উন্নয়নের কাজকর্ম ঠিকভাবে করা যায়৷ সকলের সহযোগিতায় শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে৷ ফলে সামগ্রিকভাবে কৃষি, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জল, সড়ক এ গুলির উপর গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে৷ মেলার মাধ্যমে সম্প্রীতিকে আরো শক্তিশালী করতে তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান৷
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিধায়ক গৌরী দাস ও মনীন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, শান্তি সম্প্রীতি মেলবন্ধন বজায় না থাকলে মানুষের মধ্যে জাতি সত্তার বিকাশ হয়না৷ মেলার মাধ্যমে সম্প্রীতির মেল বন্ধন আরো সুদৃঢ় করতে উভয়ই সকলের প্রতি আহ্বান জানান৷ অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষন দেন তেলিয়ামুড়া ব্লকের পঞ্চায়েত সম্প্রসারণ আধিকারিক বিপ্লব আচার্য৷ উপস্থিত ছিলেন এম ডি সি ধনঞ্জয় দেববর্মা, কল্যাণপুর পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান সুনীল মুন্ডা, তেলিয়ামুড়া পুর পরিষদের চেয়ারপার্সন সজল কুমার দে, ভাইস চেয়ারপার্সন জয়দেব গুহ প্রমুখ৷ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তেলিয়ামুড়া পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান অমলেশ চৌধুরী৷ এই মেলা ও প্রদর্শনীতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, পুর পরিষদ, ব্লক প্রশাসন, মহকুমা প্রশাসন, প্রাণী সম্পদ বিকাশ, মৎস্য দপ্তর সহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের প্রদর্শনী স্টল খোলা হয়েছে৷ পর্যটন মন্ত্রী শ্রী ভৌমিক ফিতাকেটে প্রদর্শনী স্টলের উদ্বোধন করেন৷ মেলাতে উপজাতি নৃত্য, সংগীত, বাউল, গাজন ইত্যাদি পরিবেশিত হচ্ছে৷