হাসপাতালেই নেই ওষুধ, মিলেনি অ্যাম্বুলেন্স, গন্ডাছড়ায় চিকিৎসায় গাফিলতিতে মৃত্যু দেড় মাসের শিশুর

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৯ জানুয়ারী৷৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরীর সফরের তিন দিন পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ৪৫ দিনের এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে গন্ডাছড়ায়৷ এই শিশুর মৃত্যুর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন অভিভাবকরা৷

গন্ডছড়া মহকুমার রইস্যাবাড়ি থানার অধীন মায়া কুমার পাড়ার বাসিন্দা ললি মোহন ত্রিপুরা৷ তাঁর ৪৫ দিন তথা দেড় মাসের শিশুপুত্র বন্যজয় ত্রিপুরার মৃত্যু হয়েছে গন্ডাছড়া মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতির দরুন৷

জানা গিয়েছে, শিশুটি স্তন্যপান করার পর আচমকা বমি করতে থাকে মঙ্গলবার সকালে৷ তা দেখে শিশুটির মা বাবা সাথে সাথেই রইস্যাবাড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়৷ রইস্যাবাড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঐ শিশুকে গন্ডাছড়া মহকুমা হাসপাতালে রেফার করে দেয়৷

ললি মোহন ত্রিপুরা রইস্যাবাড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের কাছে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা দেওয়ার জন্য দাবী জানান৷ কিন্তু চিকিৎসকর জানান যে অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া সম্ভব নয় কারণ অফিসের কাজে অ্যাম্বুলেন্সটি ধলাই জেলা সদর আমবাসায় গিয়েছে৷ তখন হতাশ হয়ে শিশুটির বাবা ললি মোহন ত্রিপুরা অন্য এক জনের কাছ থেকে টাকা ধার করে এক হাজার টাকায় ভাড়া করে অন্য গাড়ি দিয়ে অসুস্থ শিশুপুত্র বন্যজয় ত্রিপুরাকে গন্ডাছড়াস্থিত মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসেন৷ বেলা তখন সাড়ে দশটা৷ হাসপাতালের চিকিৎসকরা শিশুটিকে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন৷ শুধুমাত্র একটি সেলাইন দিয়েছে সরকারী ভাবে৷ কর্তব্যরত চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রে কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে দায়িত্ব খালাস করে দেন৷ ব্যবস্থাপত্র হাতে পেয়ে হাসপাতালের বাইরে দোকান থেকে ৪৬০ টাকার ওষুধ কিনে নিয়ে আসেন শিশুটির বাবা৷

যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরী স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারীক এবং চিকিৎসকদের সাথে মহকুমা শাসকের অফিসে পর্যালোচনা বৈঠক করেছিলেন গত ছয় জানুয়ারী৷ মন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রত্যেক রোগীকে বিনামূল্যে হাসপাতাল থেকে সব ধরনের ওষুধ প্রদান করতে৷ হাসপাতালে যদি ওষুধ মজুত না থাকে তাহলে বাইরে থেকে কিনে এনে দিতে হবে৷ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে টাকার কোন ঘাটতি নেই বলেও মন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন৷  কিন্তু এক্ষেত্রে তেমন কিছুই নজরে আসেনি৷

এদিন দুপুরের পরে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে৷ অবস্থা সংকটজনক দেখে গন্ডাছড়া হাসপাতালের চিকিৎসক ঐ শিশুকে আগরতলায় জি বি হাসপাতালে রেফার করে দেন৷ কিন্তু, এখানেও হাসপাতালের তরফ থেকে অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করা হবে না বলে জানিয়ে দেয়৷ ঐদিকে, দরিদ্র এই উপজাতি পরিবারটি আগরতলায় জি বি হাসপাতালে শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসতে গাড়ি ভাড়া পর্যন্ত ছিল না৷ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মায়ের কোলেই মৃত্যু হয় দেড় মাসের শিশুপুত্রটির৷ সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে মৃত্যুর এক ঘন্টা পরও শিশুটির হাত থেকে চিকিৎসক কিংবা নার্সরা সেলাইনের সূচটি পর্যন্ত খুলেননি৷ শিশুর মৃত্যুর পর পরিবারের লোকজন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আবারও অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার জন্য বলেছিলেন যাতে মৃতদেহটি বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন৷ কিন্তু, এক্ষেত্রেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চরম অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন৷ তাদেরকে অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়নি৷ শেষে মৃত শিশুটির বাবা গাড়ি ভাড়া করার জন্য গন্ডাছড়া বাজারের এদিকে ওদিকে ঘুরছিলেন৷ অবাক করার বিষয় হচ্ছে এই ধরনের ঘটনা গন্ডাছড়া মহকুমা হাসপাতালে প্রায়শই ঘটে চলছে৷ এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রী কিংবা দপ্তরে কোন আধিকারীক তেমন কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *