রাঁচি, ৬ জানুয়ারি (হি.স.): পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির দেওঘর ট্রেজারি মামলায় সাড়ে ৩ বছরের কারাদণ্ড হল রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) সুপ্রিমো তথা বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের| পাশপাশি লালুকে পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে রাঁচির বিশেষ সিবিআই আদালত| লালু প্রসাদ যাদব ছাড়াও পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় সাড়ে তিন বছরের জেল এবং পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে ফুল চন্দ, মহেশ প্রসাদ, বেক জুলিয়াস, সুশীল কুমার, সুনীল কুমার, সুধীর কুমার এবং রাজা রামকে| গত তিন দিন ধরে ঝুলে থাকার পর অবশেষে শনিবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ সাজা ঘোষণা করল রাঁচির বিশেষ সিবিআই আদালত| রাঁচির বিশেষ সিবিআই আদালতে লালুকে আনলে পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠতে পারে, এই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লালু সহ বাকি দোষীদের সাজা ঘোষণা করেন রাঁচির বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারপতি শিবপাল সিং| রায় ঘোষণার প্রাক্কালে বিকেল ৪টে নাগাদ ভিডিও কনফারেন্সিং রুমে উপস্থিত হন লালু সহ সব অভিযুক্তই| এরপর বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় দোষীসাব্যস্ত লালু প্রসাদ যাদবের সাড়ে তিন বছরের হাজতবাসের সাজা ঘোষণা করে রাঁচির বিশেষ সিবিআই আদালত| একই সঙ্গে পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে|
দেওঘর পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় ২০১৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে দোষীসাব্যস্ত হয়েছিলেন আরজেডি সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদব সহ ১৬ জন| সেই থেকে তাঁদের ঠাঁই হয় রাঁচির বিরসা মুণ্ডা জেলে| তবে, আদালত মুক্তি দিয়েছে বিহারের আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্র সহ ৬ জনকে| পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় প্রথমে গত বুধবার লালু সহ ১৬ জনের সাজা ঘোষণা হওয়ার কথা ছিল| কিন্তু, আইনজীবী বিন্ধেশ্বরী প্রসাদের অকাল প্রয়াণের কারণে বুধবার পিছিয়ে দেওয়া হয় লালু প্রসাদ যাদব সহ ১৬ জনের সাজা ঘোষণা| বিশেষ সিবিআই আদালতের তরফে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার সাজা ঘোষণা করা হবে| অথচ, বৃহস্পতিবারও পিছিয়ে দেওয়া হয় লালু সহ ১৬ জনের সাজা ঘোষণা| আদালতের তরফে জানানো হয়, শুক্রবার সাজা ঘোষণা করা হবে| কিন্তু, শুক্রবারও পিছিয়ে দেওয়া হল লালু সহ ১৬ জনের সাজা ঘোষণা| এরপর শনিবার বিকেল চারটে নাগাদ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাজা ঘোষণা করলেন বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারপতি শিবপাল সিং|
শুক্রবারই সিবিআই বিশেষ আদালতে সাজা কমানোর আর্জি জানান আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ যাদব| আইনজীবী চিত্তরঞ্জন সিনহা মারফত রাঁচির বিশেষ সিবিআই আদালতে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় দোষীসাব্যস্ত লালু প্রসাদ যাদব অনুরোধ করেন, ‘আমার বয়স ও শারীরিক অবস্থার কথা বিচার করে সাজা কম করা হোক|’ বিশেষ সিবিআই আদালতে লালুর আইনজীবী জানান, ‘লালু কিডনির সমস্যায় ভুগছেন, এছাড়াও তিনি ডায়াবেটিস রোগী| এমনকি লালুর হার্টের অপারেশনও হয়েছে| তাই লালুর সাজা কমানো হোক|’ লালুর আইনজীবীর এই সমস্ত বক্তব্যে আমল দিলেন রাঁচির বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারপতি| শনিবার পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির দেওঘর ট্রেজারি মামলায় সাড়ে ৩ বছরের কারাদণ্ড হল লালুর|
পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় রাঁচির বিশেষ সিবিআই আদালতের রায়কে ‘স্বাগত’ জানিয়েছে জনতা দল ইউনাইটেড বা জেডি(ইউ)| বিশেষ সিবিআই আদালতের রায় ঘোষণার পরই জেডি(ইউ)-র সিনিয়র নেতা কে সি ত্যাগী বলেছেন, ‘এই রায়কে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি| বিহারের রাজনীতিতে লালু অধ্যায়ের সমাপ্তি হল|’ তবে, লালু প্রসাদ যাদবের সাজা ঘোষণার প্রাক্কালে মা রাবড়ী দেবীকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন লালু পুত্র তথা বিহারের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব ও আরজেডি নেতারা| সেখানে নাম না করে বিজেপি-জেডিইউ জোটের দিকে আঙুল তোলেন তেজস্বী| পাশাপাশি উচ্চ আদালতে জামিনের আবদেন করা হবে, তাও স্পষ্ট করে দেন তেজস্বী যাদব| লালুর আরেক পুত্র তেজ প্রতাপ যাদব জানিয়েছেন, ‘আমরা নিশ্চিত লালু প্রসাদ যাদব জামিন পাবেন| বিচার ব্যবস্থার উপর আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে| আমরা নত হচ্ছি না|’ আইনজীবী মহল সূত্রে অবশ্য খবর, রাঁচি আদালতে কেউই জামিনের আবেদন করতে পারবেন না| প্রত্যেককেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হবে|
১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে দেওঘর ট্রেজারি থেকে বিপুল অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগেই দায়ের হয় এই মামলা। লালু তখন অবিভক্ত বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। এই মামলায় মোট অভিযুক্ত ৩৪ জন। তাঁদের মধ্যে ১১ জন ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছেন। সেই সময় ক্ষমতায় না থাকায় আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্রকে গত ২৩ জিসেম্বরেই বেকসুর খালাস করে দিয়েছেন বিচারক। মুক্তি পেয়েছেন আরও পাঁচ অভিযুক্ত। দোষীদের তালিকায় রয়েছেন লালু-সহ ১৬ জন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিন অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার বেক জুলিয়াস, ফুল চন্দ এবং মহেশপ্রসাদ। রয়েছেন এক বাঙালি অফিসার সুবীর ভট্টাচার্যও।