বীরভূম থেকেই তৃণমূল ভাঙ্গার সূচনা করবেন মুকুল

কলকাতা, ২৯ নভেম্বর ( হি.স.): বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ ও নেতাজিকে সামনে রেখেই ঘাসফুলে ভরা বাংলায় পদ্মের জোয়ার আনতে তৎপর হচ্ছেন বি জে পি নেতা মুকুল রায় ৷ বি জে পি-র কেন্দ্রীয় সদর দফতর থেকে চূড়ান্ত সম্মতি পাওয়ার পর এবিষয়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে মুকুল শিবিরে ৷ বাংলার জেলায় জেলায় তৃণমূলে ভাঙন ধরাতে ২৩ ডিসেম্বর থেকে ২৩ জানুয়ারী, টানা একমাস জেলা সফরে নামছেন তৃণমূলের ‘প্রাক্তন’ সেগেন্ড ইন কমান্ড ৷
মুকুল শিবির সূত্রের খবর, শুধু জেলায় জেলায় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকই নয়, বঙ্গে বিজেপির বিস্তারে জেলা সফরের সময় একাধিক জনসভাও করবেন মুকুল ৷
প্রাথমিকভাবে, দক্ষিণবঙ্গের অন্তত সাতটি জেলায় সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি ৷ রাজ্য নেতৃত্বর পাশাপাশি সেই সভাগুলিতে হাজির থাকবেন গেরুয়া শিবিরের একাধিক কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্বও ৷ সাতটির মধ্যে অন্তত একটি সভায় হাজির থাকার কথা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর ৷
কয়েকদিন আগেই দল-ভাঙনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বোলপুরের তৃণমূল সাংসদ-অধ্যাপক অনুপম হাজরা ৷ দলীয় কর্মীদের প্রতি তাঁর করুণ আর্জি ছিল, ‘মান অভিমান থাকলেও বি জে পিতে যাওয়ার মতো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবেন না’৷ বি জে পি সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের দোর্দন্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলেরর জেলা সেই বীরভূম থেকেই তৃণমূল ভাঙনের সূচনা করবেন মুকুল ৷ তাঁর প্রথম জনসভাটি হওয়ার কথা ডিসেম্বরের শেষে বীরভূমের সাঁইথিয়াতে৷ সূত্রের খবর, জনসভা হওয়ার কথা জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মোদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমান ও হুগলিতে ৷
মুকুল ঘনিষ্ট শিবির জানিয়েছে, বিবেকানন্দ,রামকৃষ্ণ ও নেতাজিকে সামনে রেখেই ‘স্বচ্ছ বাংলা’ গড়ার ডাক দেওয়া হবে জনসভাগুলি থেকে ৷ বাংলার রাজনীতি যেভাবে ক্রমেই কলুষিত হচ্ছে, তাতে মানুষের ‘মন’ পেতে বিবেকানন্দ, নেতাজি, রামকৃষ্ণর মতো ব্যক্তিত্বকে সামনে রেখেই প্রচারে নামছেন তিনি ৷ শুধু জনসভা নয়, জেলা সফরকে কেন্দ্র করে রাজ্যের জেলায় জেলায় মনীষীদের কাট আউট, ব্যানার, হোর্ডিং লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন মুকুল অনুগামীরা ৷ ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বাংলার রাজনীতিকে মনীষীদের ‘ব্যবহার’ করার প্রচলন শুরু করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মমতার দেখানো পথেই তাঁকে কুপোকাত করছে চাইছেন তৃণমূলের এই ‘প্রাক্তন’৷
কয়েকদিন আগেই হাওড়ার উলবেড়িয়ার জনসভা থেকে মুকুল রায়ের হুঙ্কার ছিল, ‘বাংলা থেকে তৃণমূলের বিদায় আর বেশি দেরি নেই’৷ সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই দিলীপ ঘোষ সহ বি জে পি-র এরাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রত্যেকের সঙ্গে সু-সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে সকলকে একত্রিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তিনি ৷ দলীয় বৈঠক নেতা থেকে কর্মী সকলকে উদ্বুদ্ধ করতে তাঁর একটায় মন্ত্রবাণী, রাজনীতিতে সেকেন্ড বলে কিছু হয় না ৷ হয় প্রথম হতে হবে নতুবা নিটফল জিরো ৷ রাজনীতিতে দ্বিতীয়ের কোনও মূল্য নেই ৷ পরাজয় পারজয়ই ৷ তাই দ্বিতীয় নয়, বি জে পি-কে বাংলায় প্রথম স্থান দখল করতে হবে ৷ এখন থেকেই সেই প্রক্রিয়া শুরুর ডাক দিচ্ছেন তিনি ৷
দলীয় সূত্রের খবর, বি জে পি-র অন্দরে যেভাবে ক্লাস নিতে শুরু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক সময়ের ছায়াসঙ্গী তাতে দলীয় কর্মীদের মনোবল আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ একইভাবে রাজ্যের জেলায় জেলায় গোপনে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন তিনি ৷ মুকুল ঘনিষ্ট শিবির সূত্রের খবর, জেলা সফরের একেকটি জনসভা থেকেই তৃণমূলের জেলা থেকে বুথ স্তরের একাধিক নেতা-কর্মী তো বটেই গেরুয়া নামাবলী গায়ে চড়াবেন একাধিক জন প্রতিনিধিও ৷ আপাতত, আগামী একমাস তৃণমূলকে বড়সড় ধাক্কা দেওয়ার পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে বাধ্য ছাত্রের মতো চূড়ান্ত পরিকল্পনা গড়তেই ব্যস্ত তৃণমূলের ‘প্রাক্তন’ ৷