কলকাতা, ২৭ নভেম্বর (হি. স.): ফের তৃণমূলের নদিয়া জেলা সভাপতি হলেন গৌরীশংকর দত্ত৷ দলীয় কোন্দলে দীর্ণ নদিয়ার নেতাদের নিয়ে সোমবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের ঘরে বৈঠক করেন৷ বৈঠকে তিনি মিলেমিশে কাজ করার নির্দেশ দেন৷
নদিয়ায় দলীয় কোন্দল নতুন নয়৷ মুখ্যমন্ত্রী এর আগে কখনও নিজে, কখনও বা দলীয় শীর্ষ নেতাদের নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়েও ফল পাননি৷ ২০১৫-র ২০ ডিসেম্বর তিনি জেলা-নেতাদের বলেন, “আমি খেটে মরবো, আপনারা তোলাবাজি, ধান্দাবাজি করবেন? তা চলবে না৷” কিছু নেতা-মন্ত্রীসহ সাত-আটজনকে এভাবেই সে দিন ধুয়ে দিলেন মমতা। আর দলকে বললেন ভাল মানুষের খোঁজ করতে৷ দরকার হলে অন্য দল থেকে ভাল মানুষ এলেও আপত্তি নেই মমতার৷ কালীঘাটের বাড়িতে মমতা ছিলেন রুদ্রমূর্তিতে৷ তাঁর সামনে ছিলেন নদিয়ার প্রায় শ’দুয়েক তৃণমূল নেতা৷ তোলাবাজি, দলাদলি, অসত্সঙ্গের জন্য সে দিন তাঁর কোপে পড়ে নদিয়া তৃণমূল৷ তোপের মুখে যাঁরা পড়েন, তাঁরা এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ান৷ অনেকের আবার লালবাতি আর ভেঁপু বাজানোর নেশাগ্রস্ত৷ কিন্তু হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট থেকে বেরোনোর সময় মুখ কাঁচুমাচু ছিল সেই নেতা-মন্ত্রীদের৷
দীর্ঘদিন ধরেই নদিয়ায় তৃণমূলের অন্দরে কোন্দল প্রকট। খোদ জেলা সভাপতির সঙ্গে মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস, কখনও বা উজ্জ্বল-অনুগামী বিধায়ক অবনীমোহন জোয়ারদারের কাজিয়া দলেই চর্চার বিষয়। তরী পার হতে গেলে যে ঘর গোছানো ছাড়া উপায় নেই, তা আগেই নিজের বাড়িতে বৈঠকে ডেকে জেলা নেতাদের সাফ বলে দিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৬-র ১৭ জানুয়ারী তেহট্টে অভিষেক এসে ফের সেই বার্তা দিয়ে যান।
দলের অন্দরের কোন্দলে ভোটের ফল খারাপ হয়। জেলায় খারাপ ফলের জন্য মূলত দায়ী করা হয় নদিয়ার জেলা সভাধিপতি বাণীকুমার রায়কে।কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় প্রশ্ন ওঠে তৃণমূলের বৈঠকে, হারের দায় এক জনের কেন? এমনকী, জেলা সভাপতি তথা তেহট্টের বিধায়ক গৌরীশঙ্কর দত্তও বৈঠকে দাবি করেন, চারটি আসনে পরাজয়ের একমাত্র কারণ অন্তর্ঘাত নয়। অন্যান্য কারণও আছে। গত জুন মাসে নদিয়া জেলা তৃণমূলেরকার্যকরী সভাপতি হন কংগ্রেস ছেড়ে আসা শঙ্কর সিং। কংগ্রেস ছেড়ে অরিন্দম ভট্টাচার্য হন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সম্পাদক। তাতে দলের অবস্থা খারাপ বই ভাল হয়নি৷
২০১৫-র ২০ ডিসেম্বর নদিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তকে বৈঠকে চরম অপ্রস্তুত হতে হয়৷ সূত্রের খবর, ছেলের অয়ন দত্তের জন্য মুখ পোড়ে বাবার৷ নদিয়া জেলার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি অয়ন৷ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ এসেছিল, অয়নের টিম কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ট্রিপল আইটি-তে তোলাবাজি করছে৷ স্বাভাবিক ভাবেই তার দায় বর্তায় বাপ-বেটার ঘাড়ে৷ ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, ‘এখনই এসব বন্ধ করো৷’ অনেকে বলেন অয়ন উপলক্ষ মাত্র৷ আসলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বার্তাটি দেন গৌরীবাবুকেই৷ অগোছালো সংগঠন এবং দলবাজি থামাতে ব্যর্থতা নিয়েও জেলা সভাপতিকে কথা শুনতে হয় নেত্রীর কাছে৷
তেহট্টের তৃণমূল নেতা তাপস সাহার সঙ্গে গৌরীবাবুর বিবাদ অনেক দিনের৷ ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তেহট্ট মহকুমার ফলাফলে তার ছাপও পড়ে৷ তেহট্ট বিধানসভা কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে গৌরীবাবুর পরাজয় সুনিশ্চিত করেন তাপসবাবু৷ আসনটি জিতেছিল সিপিএম৷ তাপস দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে গৌরীবাবুকে তৃতীয় স্থানে নামিয়ে দিয়েছিলেন৷ মহকুমার অন্য দুই বিধানসভা পলাশিপাড়া এবং করিমপুরেও জিতেছিল সিপিএম৷ বিবদমান এই দুই নেতাকে সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এ বার ওই সিটগুলো পাব তো? আমার কিন্তু নদিয়ায় সতেরোতে সতেরোটাই চাই৷’
সূত্রের খবর, প্রবল চাপের মুখে গৌরীবাবু মুখ্যমন্ত্রীকে কথা দিয়েছেন, তাঁকে ১৭ দিন সময় দেওয়া হোক৷ এর মধ্যেই তিনি জেলার অগোছালো সংগঠন গুছিয়ে নিতে পারবেন৷
এর পরেও গৌরীবাবু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেকনজরে পড়েন নি৷ কিন্তু সোমবার মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে নির্দেশ দেন, “এনাফ ইজ এনাফ৷ শক্ত হাতে দলের রাশ ধরতে হবে৷”
2017-11-27
