পাঁচ মাসে রাজ্যে ৮২টি ধর্ষণের ঘটনা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৫ নভেম্বর৷৷ আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধীদের অন্যতম হাতিয়ার রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি৷ খুন, ধর্ষণ, পণের জন্য নির্যাতন, শ্লীলতাহানি ইত্যাদি ঘটনা প্রায় প্রতিদিন ঘটছে এরাজ্যে৷ অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাও উদ্বেগজনক বলেই মনে হচ্ছে৷ তাতে রাজ্যের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্ণ উঠা স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন তথ্যভিজ্ঞ মহল৷

বিধানসভায় বিধানসভায় বিধায়ক বিশ্ববন্ধু সেনের তারকা চিহ্ণবিহীন প্রশ্ণের উত্তরে স্বরাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ২০১৫ এবং ২০১৬ জানুয়ারী থেকে ২০১৭ জুলাই পর্যন্ত রাজ্যে ২৪টি গণধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ তাতে ৬০ জন আসামীকে গ্রেপ্তার করা হলেও, ১৪ জনকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ৷ এদিকে, চলতি বছরে এপ্রিল থেকে আগষ্ট পর্যন্ত পাঁচ মাসে রাজ্যে মোট ৮২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷ ঐ ঘটনাগুলিতে জড়িত ১১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল৷ তার মধ্যে ৮৪ জনকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ৷ কিন্তু, ধর্ষণের অভিযুক্ত ২৮ জনকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ৷

২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত রাজ্যে নারী সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ থানাগুলিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে, তার একটি বিবরণ পাওয়া গিয়েছে৷ বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণের তারকা চিহ্ণবিহীন প্রশ্ণের উত্তরে স্বরাষ্ট্র দপ্তর যে বিবরণ দিয়েছে তাতে জানা গিয়েছে, তিন বছরে নারী সংক্রান্ত অপরাধের সংখ্যা কমলেও, এই তিন বছরের মধ্যে ২০১৬ সালে সর্বনিম্ন সহশ্রাধিক নারী সংক্রান্ত অপরাধ ২০১৬ সালে সংগঠিত হয়েছে৷ বিবরণ অনুসারে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, পণ সংক্রান্ত অত্যাচার, পণ সংক্রান্ত মৃত্যু, অপহরণ, ইভ-টিজিং এবং অন্যান্য মহিলা গঠিত অপরাধ ১৬৫৩টি সংগঠিত হয়েছিল৷ ২০১৫ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ১৩৯৬ এবং ২০১৬ সালে ১০৭২৷ এদিকে, ধর্ষণের শিকার শিশুরাও মারাত্মকভাবে হচ্ছে, সেই তথ্যও মিলেছে৷ ২০১৪ সালে শিশু ধর্ষণ ৩৬টি এবং নাবালিকা ধর্ষণ ৯৬টি, ২০১৫ সালে শিশু ধর্ষণ ৩৩টি এবং নাবালিকা ধর্ষণ ৭৮টি এবং ২০১৬ সালে শিশু ধর্ষণ ৩৬টি এবং নাবালিকা ধর্ষণের ৭৬টি ঘটনা সংগঠিত হয়েছে, যার অভিযোগ থানাগুলিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে৷ তাতে দেখা গেল, তিন বছরে ১০৫ জন শিশু এবং ২৫০ জন নাবালিকা ধর্ষণের শিকার হয়েছে৷ এদিকে, যুবতী কিংবা অবিবাহিত মহিলা ১৬৩ জন এবং বিবাহিত মহিলা ১৪২ জন ধর্ষিতা হয়েছেন গত তিন বছরে৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, অপ্রাপ্তবয়স্করাই রাজ্যে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের শিকার হয়েছে৷ শিশু ও নাবালিকা মোট ৩৫৫ জন এবং যুবতী কিংবা অবিবাহিত মহিলা ও বিবাহিত মহিলা মোট ৩০৫ জন ধর্ষিতা হয়েছেন বলে থানাগুলিতে অভিযোগ লিপিবদ্ধ হয়েছে৷ এই ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলেই মনে করা হচ্ছে৷

আরো একটি বিষয় সামনে এসেছে, তা হল রাজ্যে গত তিন বছরে নারীদের অপহরণের মাত্রা বেড়ে চলেছে৷ ২০১৪ সালে ১০০টি, ২০১৫ সালে ১২০টি এবং ২০১৬ সালে ১১৯টি অপহরণের অভিযোগ থানাগুলিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে৷ এদিকে, ২০১৭ সালের জানুয়ারী থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রাজ্যে নারীদের অপহরণের ৭৩টি ঘটনা ঘটেছে৷

এদিকে, রাজ্যে আত্মহত্যার ঘটনাও যথেষ্ট উদ্বেগজনক৷ বিধানসভায় বিধায়ক রতন লাল নাথের তারকা চিহ্ণবিহীন প্রশ্ণের উত্তরে স্বরাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ২০১৭ সালে জানুয়ারী থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রাজ্যে মোট ৫৮৮টি আত্মহত্যার ঘটনা থানাগুলিতে নথীভুক্ত হয়েছে৷ গড়ে মাসে ৫৯ জন আত্মহত্যা করছেন৷ গত দুই বছরেও আত্মহত্যার হার অবাক করার মতো৷ ২০১৫ সালে গড়ে প্রতি মাসে ৬২ জন এবং ২০১৬ সালে গড়ে প্রতি মাসে ৫৬ জন আত্মহত্যা করেছেন৷ ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে আত্মহত্যার হার অতি সামান্য কমলেও, ২০১৭ সালে তা আবার বেড়ে গেছে৷ তাতে স্পষ্ট যে, রাজ্যে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা বিগড়ে রয়েছে৷ কারণ, আত্মহত্যার পেছনে পারিবারিক অশান্তি, আর্থিক অনটন, বেকারত্ব ইত্যাদি জড়িত থাকে৷ এদিকে, ২০১৫ সালে ১৭টি এবং ২০১৬ সালে ৩০ টি আত্মহত্যার ঘটনা পরবর্তী সময়ে খুনের মামলা হিসেবে নথীভুক্ত হয়েছে৷
স্বরাষ্ট্র দপ্তরের দেওয়া বিবরণী থেকে অনেকটাই স্পষ্ট যে, রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা এবং সামাজিক অর্থনৈতিক অবস্থা সত্যিই উদ্বেগজনক৷ ফলে, বিরোধীরা আগামী নির্বাচনে একে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করাটা স্বাভাবিক বলেই মনে হচ্ছে৷