কলকাতা, ২৪ অক্টোবর ( হি.স.): নোবেল তদন্তে সি বি আই-কে তুলোধোনা করল কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচাপতি রাকেশ তিওয়ারির ডিভিশন ডিভিশন বেঞ্চ । মঙ্গলবার সি বি আইয়ের জাতীয়তাবোধ নিয়েও প্রশ্ন তোলে হাইকোর্ট । সোমবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল চুরি নিয়ে নতুন করে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় হাইকোর্টে । চঞ্চলকুমার জানা নামে এক অধ্যাপক এই মামলাটি দায়ের করেন । মঙ্গলবার এই মামলাটির শুনানি হয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাকেশ তিওয়ারি ও বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চে । সেখানেই আজ ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি তীব্র ভাষায় ভর্ৎসনা করেন সি বি আই-কে ।
মামলার শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি রাকেশ তিওয়ারি সি বি আইয়ের উদ্দ্যেশ্যে মন্তব্য করেন, ‘এটা আপনাদের অকর্মণ্যতা । অন্য কেউ তদন্ত চাইলে আপত্তি কোথায় ‘? বিচারপতি তিওয়ারি ৭ দিনের মধ্যে হলফনামা তলব করেন । ২ সপ্তাহ পরে ফের মামলার শুনানি হবে বলে জানান ।
যদিও প্রধান বিচারপতি রাকেশ তিওয়ারি ওই সময় থাকবেন না । তিনি আজই অবসর নিচ্ছেন । আগামীকাল থেকে প্রধান বিচারপতির দায়িত্বভার বুঝে নেবেন বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য । তিনিই ২ সপ্তাহ পর মামলাটি শুনবেন।
দু-দু’বার তদন্ত করেও সি বি আই এখনও পর্যন্ত নোবেল উদ্ধারে কোনও সূত্র খুঁজে বের করতে পারেনি। তাই মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি রাকেশ তিওয়ারি সি বি আই-কে তীব্র ভাষায় তিরস্কার করেন । ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাকেশ তিওয়ারি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের নোবেল সম্মানের সঙ্গে জাতীয় আবেগ জড়িয়ে আছে’। অথচ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জাতীয় সম্পদ উদ্ধারে ব্যর্থ হয়েছে । সি বি আই না পারলে, বলে দিক তারা অকর্মণ্য । নোবেল চুরি নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে, তা জাতীয়তা বিরোধী ঘটনা ‘।
২০০৪ সালের ২৫শে মার্চ, বৃহস্পতিবার, বিশ্বকবির শান্তিনিকেতন থেকে চুরি গিয়েছিল নোবেল পদকটি ৷ প্রথমে নোবেল উদ্ধারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বীরভূম জেলা পুলিশকে ৷ প্রধান তদন্তকারী অফিসার ছিলেন তখনকার বোলপুর থানার ও সি মৃতন্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ নোবেল চুরির ২ দিন পর শান্তিনিকেতনে গিয়ে তত্কালীন বিরোধী দলনেত্রী সি বি আই তদন্ত দাবি করেন, এবং আন্দোলন শুরু করেন ৷ সেই দাবি মত তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তদন্তের গতি প্রকৃতি বিচার করে নোবেল খোঁজের দায়িত্ব দেন সি বি আই-কে ৷
কিন্তু সেখানেও নিট ফল শূন্য ৷ নোবেল চুরির রহস্য উন্মোচনে ব্যর্থ হয় তারা ৷ সূত্রের অভাবে থমকে যায় তদন্ত ৷ তারপর থেকে ১৩ বছর অতিক্রান্ত কিন্তু সেভাবে কোন কিছু করতে পারেনি সি বি আই । এমনকী ২০১০ সালে তদন্ত বন্ধও করে দেয় সি বি আই ৷
২০১৬-র অগাস্টে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘রাজ্য পুলিশ তদন্ত শুরু করতে পারে’। রাজ্য সরকার এই তদন্তভার নেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে চিঠিও লেখে। কিন্তু সি বি আই এখনও সেই তদন্তভার ছাড়েনি । তবে , আইনি জটিলতার জন্য দায়িত্ব হস্তান্তর হয়নি ৷ কিন্তু রাজ্য সরকার নোবেল চুরির তদন্তের জন্য তৈরি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) তৈরি করে ৷ কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার এবং সি আই ডি প্রধান রাজেশ কুমারকে বসানো হয় মাথায় ৷ তবে হাজারো প্রচেষ্টাতেও কোনও এক সূত্র ধরে নির্দিষ্ট দিকে এগোতে পারেননি সিট-এর আধিকারিকরাও ৷ কিন্তু খোঁজ মেলেনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের খোওয়া যাওয়া নোবেল পদকের ৷ নোবেল চুরির ঘটনায় তাই সিআইডি তদন্তের আর্জি জানিয়ে সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের করা হল জনস্বার্থ মামলা ৷ আজ মঙ্গলবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মামলারই শুনানি হল ৷ এখনও মুখ্যমন্ত্রীর বিশ্বাস, সি আই ডি দায়িত্ব নিলে ঠিক উদ্ধার করা যাবে রবি ঠাকুরের খোয়া যাওয়া নোবেল ৷
2017-10-24
