নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৪ অক্টোবর৷৷ নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে আবারও কলঙ্কিত হতে চলেছে রাজ্য সরকার৷ অন্তত অশিক্ষক পদে নিয়োগকে ঘিরে আদালত অবমাননার মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট হয়েছে, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আপাত গ্রাহ্য বলে মনে করছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত৷ তাই এই মামলার পরবর্তী শুনানী ২৪ অক্টোবর ধার্য্য করেছে বিচারপতি আদর্শ কুমার গোয়েল ও উদয় উমেশ ললিতের ডিভিশন বেঞ্চ৷ ততদিন বারো হাজার অশিক্ষক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷ ফলে, ১০৩২৩ শিক্ষকের চাকুরী বাতিল হওয়ার পর নতুন করে অশিক্ষক পদে নিয়োগকে ঘিরেও রাজ্য সরকারের মুখ পুড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে৷
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৯ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট ১০৩২৩ জন শিক্ষকের নিয়োগ বেআইনী ও অবৈধ বলে রায় দিয়েছিল৷ পাশাপাশি এবছরের ৩১ ডিসেম্বরের পর ঐ ১০৩২৩ জন শিক্ষক চাকুরীতে আর বহাল থাকতে পারবেন না৷ সে নির্দেশও দেয় সর্বোচ্চ আদালত রায়ে৷ এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার ১০৩২৩ জন শিক্ষকের তোপের মুখ থেকে বাঁচতে নয়া কৌশল অবলম্বন করে৷ শিক্ষা দপ্তরে বারো হাজার এবং সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরে এক হাজার অশিক্ষক পদ সৃষ্টির মাধ্যমে তাঁদেরকে পুণর্বাসনের পথে হাটে রাজ্য সরকার৷ সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হল, রাজ্য সরকার অশিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক বলে নিয়োগ নীতি প্রণয়ন করে৷ সাথে ঐ অশিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়ঃসীমাও বাড়ানো হয়৷ গত ২৭ জুন রাজ্য সরকার পাঁচটি বিভাগে বারো হাজার অশিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করে৷ একাডেমিক কাউন্সিলার পদে ১২০০ জন, স্টুডেন্ট কাউন্সিলার পদে ৩৪০০ জন, সুকল লাইব্রেরি এসিস্টেন্ট পদে ১৫০০ জন, হোস্টেল ওয়ার্ডেন পদে ৩০০ জন এবং প্রোগ্রাম এসিস্টেন্ট পদে ৫৬০০ জন নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল৷ বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের কাছ থেকে যে অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে তা কেবলমাত্র ১০৩২৩ জন চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের পক্ষেই পূরণ করা সম্ভব৷ অভিযোগ উঠে অশিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক কেন করা হল৷ এই নিয়োগ নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা হয়৷ কিন্তু, মামলাকারীদের মধ্যে অনেকেই আশ্চর্যজনক ভাবে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়৷ তবে, তাঁদের মধ্যে একজন সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেন৷ আবেদনকারীর বক্তব্য, বাঁকাপথে চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের পুণর্বাসনের লক্ষ্যেই রাজ্য সরকার নতুন অশিক্ষক পদের সৃষ্টি করেছে৷ তাঁর দাবি, রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ আদালত অবমাননার শামিল৷
সেই মামলায় গত ১১ সেপ্ঢেম্বর প্রাথমিক শুনানী শেষে সুপ্রিম কোর্ট মামলায় অভিযুক্ত মুখ্যসচিব, শিক্ষ দপ্তরের প্রধান সচিব এবং অতিরিক্ত সচিবের বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করে৷ আদালত অবমাননা মামলায় দুই সপ্তাহের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট৷ সেই মোতাবেক নোটিশের জবাব দেওয়া হয়৷ বুধবার এই মামলার শুনানীতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আদর্শ কুমার গোয়েল এবং বিচারপতি উদয় উমেশ ললিতের ডিভিশন বেঞ্চ আদালত অবমাননার অভিযোগ আপাত গ্রাহ্য বলে নিশ্চিত, তা নির্দেশনামায় উল্লেখ করেছে৷ বিবাদী পক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত হলফনামা জমা দেবে বলে এদিন আদালতের কাছে সময় চেয়েছেন৷ আদালত আগামী ২৪ অক্টোবর এই মামলায় পরবর্তী শুনানীর দিন ধার্য্য করেছে৷ ঐ তারিখের মধ্যে বিবাদী পক্ষকে অতিরিক্ত হলফনামা জমা দিতে হবে৷ ততদিন বারো হাজার অশিক্ষক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে বলে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ জারি করেছে৷