নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ সেপ্ঢেম্বর৷৷ ফের টানা বর্ষণে শহর আগরতলার লন্ডভন্ড অবস্থা৷ আবারও বন্যার কবলে তিলোত্তমা রাজধানী৷ বিপদ সীমার উপর দিয়ে বয়ে চলেছে হাওড়ার জল৷ ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার বহু পরিবার৷ প্রশাসনের তরফ থেকে পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে৷ সেই সাথে বন্যা দুর্গতদের কবলিত এলাকা থেকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে জোর কদমে৷ চন্দ্রপুর বাঁধের দিকে নজর রাখছে প্রশাসন৷ গত ১১ আগষ্ট ভয়াবহ বন্যার প্রেক্ষিতে বাঁধে ফাঁটল ধরেছিল৷ আবহাওয়া বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে গতকাল রাত থকে রবিবার বিকাল পর্যন্ত আগরতলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৬৫ মিলিমিটার৷ শহরের এডি নগরে ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে৷ তাছাড়া সোনামুড়ায় ১৪২ মিলিমিটার, বিলোনীয়ায় ৬৪ মিলিমিটার, সাব্রুমে ১৪৮ মিলিমিটার এবং কৈলাসহরে ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে৷ এদিকে, বিভিন্ন এলাকায় আটটি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে প্রশাসনের তরফ থেকে৷ তাতে আশ্রয় নিয়েছেন খবর লেখা পর্যন্ত ৫১১টি পরিবারের লোকজন৷ আরও কিছু ত্রাণ শিবির খোলা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে৷ অন্যদিকে, আগামী তিন চারদিন রাজ্যে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ৷ হাওড়া নদী সহ রাজ্যের অন্যান্য নদীগুলির জলস্তর ক্রমেই বাড়ছে৷ রবিবার সন্ধ্যার পরও বৃষ্টিপাত হয়েছে৷
এদিকে, রাজধানী আগরতলা শহরের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে৷ বহু এলাকা রাত পর্যন্ত জলমগ্ণ হয়ে থাকে৷ রবিবার ছুটির দিন থাকায় যানচলাচল তেমন ছিলনা রাজধানীতে৷ তাই জনগণ অনেকটাই দুর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন৷ কিন্তু, শহরের বলদাখাল, চন্দ্রপুর, চানপুর মাঠ, প্রতাপগড় সহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যায় জনগণ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন৷ বলদাখাল ও শ্রীলঙ্কা বস্তি এলাকা বেশী প্রভাবিত হয়েছে৷ সেখানে সকালেই ঘুম থেকে উঠে বাড়ির উঠানে জল দেখতে পেয়ে আঁতকে উঠেন পরিবারের লোকজন৷ রাতের টানা বৃষ্টিতে হাওড়া নদীর জল বিপদ সীমা অতিক্রম করেছে৷ বাড়ি ঘরে জল ঢুকে পড়েছে৷ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে জামা কাপড় সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে পরিবারের লোকজন ঘর থেকে বেড়িয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটতে থাকেন৷ যদিও সাত সকালেই প্রশাসনের তরফ থেকে বন্যা কবলিত এলাকার লোকজনকে উদ্ধারের জন্য নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷ তবে এদিন সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদেরই শুধু দেখা গিয়েছে৷ অভিযোগ উঠেছে পর্যাপ্ত সংখ্যায় নৌকার ব্যবস্থা না থাকায় দুর্গতদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে৷
স্মার্ট সিটির স্বপ্ণে বিভোর আগরতলাবাসী৷ অথচ ভগ্ণপ্রায় জল নিষ্কাশনী ব্যবস্থার কারণে পুরবাসী অন্তহীন দুর্ভোগের শিকার৷ বৃহস্পতিবার রাত থেকে টানা বর্ষণে আগরতলার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ণ হয়ে পড়েছে৷ এই পরিস্থিতির অন্যতম মুখ্য কারণ অবৈজ্ঞানিক জল নিষ্কাশনী ব্যবস্থা বলেই শহরবাসী মনে করছেন৷ শহরের বিভিন্ন এলাকায় কাভার্ড ড্রেইন নির্মাণ করা হয়েছে৷ যেই লক্ষ্যে কাভার্ড ড্রেইন নির্মাণ করা হয়েছিল তা এখন পুরবাসীর কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ সময়মতো কাভার্ড ড্রেইন পরিস্কার না হওয়ায় জল নিষ্কাশনী ব্যবস্থা হোঁচট খেয়েছে৷ আগরতলায় তেরটি পাম্প রয়েছে৷ অথচ অধিকাংশ পাম্প জলের তলায়৷ ফলে জল নিষ্কাশন করা সম্ভব হচ্ছে না৷ কিছু এলাকায় নতুন করে কাভার্ড ড্রেইন নির্মাণ করা হচ্ছে৷ ফলে, ঐসব এলাকা দিয়ে জল নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে রয়েছে৷ স্বাভাবিক ভাবেই ভারী বর্ষণে জল নিষ্কাশনী ব্যবস্থার নিষ্ক্রীয়তার কারণে বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে৷
শনিবার রাত থেকে টানা বর্ষণে শহরের প্রাণকেন্দ্র কামান চৌমুহনী থেকে শুরু করে বটতলা, অন্যদিকে উত্তর গেইট থেকে শুরু করে প্রতাপগড়, এমনও কোন রাস্তা নেই যেখানে হাটু থেকে বুক পর্যন্ত জল জমেনি৷ নিচু জায়গাগুলিতে সাড়ে ছয় থেকে সাত ফুট পর্যন্ত জল জমে রয়েছে বলে পশ্চিম জেলা প্রশাসনের জনৈক আধিকারীক জানিয়েছেন৷ এমন বহু এলাকা রয়েছে যেখানে অতীতে কোনদিন জল জমেনি৷ অথচ, ঐসব এলাকাগুলি বর্তমানে প্লাবিত৷
2017-09-04