নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ আগস্ট৷৷ শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও যোগ্যতা বৃদ্ধির কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা নিয়ে রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তাতে চটে লাল হয়ে যান শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী৷ সাফাই দিতে গিয়ে তিনি সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করে বলেন, দেশে একটা অপদার্থ সরকার কেন্দ্রের ক্ষমতায় রয়েছে৷ শিক্ষক প্রশিক্ষণে রাজ্যগুলিকে যে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল তার সময়সীমা ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট সমাপ্ত হয়েছে৷ অথচ গত দুই বছর এনিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বার বার দাবি জানানো সত্ত্বেও কোন ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে গত ১ আগস্ট সংসদে সংশোধনী বিল পাশ করে শিক্ষক প্রশিক্ষণে এবং যোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য রাজ্যগুলিকে যে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে তা ভিষণ অস্পষ্ট৷ তাই কেন্দ্রের কাছ থেকে অস্পষ্ট বিষয়গুলির সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা না পাওয়া পর্যন্ত রাজ্য সরকার এনিয়ে বুনিয়াদী স্তরের অধীন শিক্ষকদের নির্দিষ্ট করে কিছুই অবহিত করেনি৷ শিক্ষামন্ত্রীর এই সাফাই সহজ ভাবে গ্রহণ করেনি বিজেপি রাজ্য কমিটি৷ সাংবাদিক সম্মেলনে কটাক্ষের সুরে বিজেপির রাজ্য কমিটির মুখপাত্র ডাঃ অশোক সিনহা বলেন, অস্পষ্টতা যাই থাকুক শিক্ষকদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এই বিষয়ে সকলকে অবহিত করা এবং রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু করা রাজ্য সরকারের কর্তব্য ছিল৷ তা না করে রাজ্য সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে শিক্ষকদের এক অন্ধকারময় ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্যই এই চক্রান্ত করেছে৷
দেশের সর্বত্র শিক্ষকতায় যোগ্যতাহীন এবং প্রশিক্ষণহীন শিক্ষকদের সার্বিক যোগ্যতা বৃদ্ধি করে চাকরি বহাল রাখার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা গোপন করে রাখার বিষয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাজ্য সরকার সাফাই দিয়েছে৷ রাজ্য সরকারের মতে, বিষয়টি গোপন করা হয়নি৷ কিন্তু বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তর জটিলতা থাকায এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোন স্পষ্টিকরণ না পাওয়ায় রাজ্য সরকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেনি৷ মঙ্গলবার মহাকরণে শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উল্টো কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করে বলেন, কেন্দ্রে একটি অপদার্থ সরকার রয়েছে৷ ২০১৫ সালের পর থেকে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর এখন তড়িঘড়ি নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে৷ একই সঙ্গে বলা হচ্ছে দ্রুত কাজটি করে নিতে৷ কিন্তু ৩ আগস্ট নির্দেশিকা পাঠানো হলেও এনিয়ে বিস্তর জটিলতা ছিল৷ যে সমস্ত শিক্ষকের অবসরে যাওয়ার আর মাত্র দুবছর বাকি তাদের বিষয়েও এই নির্দেশ কার্যকর হবে কিনা এনিয়ে কোন সদুত্তর নেই৷ তিনি বলেন, রাজ্য সরকার বিষয়টি প্রচারে আনেনি কারণ, বিষয়টিতে নতুন করে অনেক প্রশ্ণ উঠে আসছিল৷ আর এই প্রশ্ণের জবাব দেওয়ার ক্ষমতা রাজ্য সরকারের নেই৷ তাঁর অভিযোগ, রাজ্য সরকারের আধিকারিকরা বিভিন্ন সময় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও, এখন পর্যন্ত কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি৷ তিনি আরও বলেন, এসব সত্ত্বেও রাজ্য সরকার সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের ডাটাবেস তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে৷ ইতিমধ্যেই বহু শিক্ষক তাঁদের নাম প্রশিক্ষণ এবং যোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য তালিকাভুক্ত করেছেন৷ কিছু রাজনৈতিক দল ও ব্যাক্তি এই ইস্যুতে কেন্দ্রের পক্ষ টেনে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করছে, এটা ঠিক নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন৷ তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় নির্দেশিকায় শিক্ষকদের অপমান করা হয়েছে৷ অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে৷
এদিকে, সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপি রাজ্য কমিটি মুখপাত্র ডাঃ সিনহা রাজ্য সরকারের সাফাইয়ে চরম অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বলেন, ২০১৯ সালে ১ এপ্রিলের পর থেকে দেশের কোন বিদ্যালয়ই অপ্রশিক্ষিত এবং প্রয়োজনীয় যোগ্যতাহীন শিক্ষক থাকছেন না৷ আর এজন্য প্রশিক্ষণ ও যোগ্যতা বৃদ্ধির সর্বশেষ সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ কিন্তু রাজ্য সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করে, ফলে রাজ্যের বহু সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি সংকটের মুখে এসে ঠেকেছে৷ কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা মেনে সেই দিনই বিজ্ঞাপন দেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিষয় গুলো জানানো উচিত ছিল কিন্তু রাজ্য সরকারের৷ শুধু তাই নয়, সরকারী এবং বেসরকারী বুনিয়াদী স্তরের অধীন শিক্ষকদের তালিকাও তৈরি করার কথা ছিল রাজ্য সরকাররে৷ কিন্তু রাজ্য সরকার তার কোনটাই করেনি৷ ডাঃ সিনহা বলেন, রাজ্য সরকার কিংবা তার আধিকারিকেরা কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা সম্পর্কে অনেক কিছু নাও বুঝতে পারেন৷ কিন্তু এটা দেশের অন্যান্য রাজ্যেও প্রচারের জন্য পাঠানো হয়েছিল৷ কার্যত এমন দেউলিয়া সরকার আর কোন রাজ্যে নেই৷ এই সরকারকে আর এক দিনও ক্ষমতায় টিকে থাকা উচিত নয়৷ তিনি আরও বলেন, রাজ্য সরকার সব বুঝে শুনেই এ সব বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা করছিল৷ কারণ নির্দিষ্ট সময় চলে গেলে রাজ্যের বহু সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি ২০১৯ সালে ১ এপ্রিল চলে যেত৷ আর তখন তাদের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপীয়ে তোলার চেষ্টা হত৷ রাজ্যেবামফ্রন্ট সরকার সম্পূর্ণ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করছে৷ প্রয়োজনীয় যোগ্যতাহীন এবং প্রশিক্ষন হয়নি এমন শিক্ষকের তালিকা তৈরি করে দ্রুত তা উপস্থাপন করা প্রয়োজন৷ আর বিষয়টি সকলকে জানানো প্রয়োজন ছিল৷ কারণ, পরবর্তী সময়ে রাজ্য সরকার সমস্ত অস্পষ্টতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা কেন্দ্রের সাথে করতেই পারত৷ এনিয়ে কাজ বন্ধ রাখার কিংবা কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা না মানার কোন যুক্তি থাকতে পারে না বলে দাবি করেন ডাঃ সিনহা৷ তাঁর কটাক্ষ, এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে বামফ্রন্ট সরকার৷ এদিন তিনি রাজ্যের সমস্ত বুনিয়াদী স্তরের অধীন শিক্ষকদের সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করার আবেদন জানান৷