পুলিশী নির্যাতনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও তদন্তের নামগন্ধও নেই, ক্ষোভে ফুঁসছেন আত্মীয় পরিজনরা, মৃত চিত্ত দেববর্মার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও চাকুরীর দাবী

cittaনিজস্ব প্রতিনিধি, তেলিয়ামুড়া, ২৬ ডিসেম্বর৷৷ থানায় ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে থানার লকআপে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারের বেধড়ক মারে আহত উপজাতি যুবক চিত্ত দেববর্মা পুলিশের ভয়ে আত্মহত্যার ঘটনায় মুঙ্গিয়াকামী থানার পুলিশের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন মৃত চিত্ত দেববর্মার স্ত্রী সুনিতা দেববর্মা৷ সোমবার বিকেলে আইপিএফটি রাজ্য সাধারণসম্পাদক মেবার কুমার জমাতিয়া চিত্ত দেববর্মার বাড়িতে গিয়ে শোকাহত পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শীতবস্ত্র তুলে দেন৷ পাশাপাশি আঠারমুড়া পাহাড়ের ৪৩ মাইল এলাকার উপজাতিদের মদ্যে একই সময়ে বস্ত্র বিতরণ করা হয় আইপিএফটির পক্ষে৷
উল্লেখ্য, বিগত মাসের ২৯ তারিখ সকালে চাকমাঘাট থেকে মাছমারা বাজারের উদ্দেশ্যে কয়েকজন গরু ব্যবসায়ীরা যাচ্ছিলেন৷ আঠারমুড়া পাহাড়ের জাতীয় সড়কের ৪৫ মাইল আসামাত্রই কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়লে দুজন গরু ব্যবসায়ী আহত হয়৷ পুলিশ আহত দুজনের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করে৷ পুলিশের তদন্ত ক্রমে মৃত চিত্ত দেববর্মার নামও উঠে আসে৷ মুঙ্গিয়াকামী থানার পুলিস ২ ডিসেম্বর চিত্ত দেববর্মাকে থানায় তুলে আনে পরিবারের পক্ষ থেকে সে সময় অভিযোগ ছিল চিত্ত দেববর্মাকে থানার লক আপে বেধড়ক মারধর করে৷ ৪ ডিসেম্বর চিত্ত দেববর্মা বিজেপি খোয়াই জেলা সম্পাদক বিকাশ দেববর্মা চিত্ত দেববর্মাকে তেলিয়ামুড়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে আসে৷ সেখান থেকে চিত্ত দেববর্মাকে দুদিন চিকিৎসার পর বাড়ি পাঠিয়ে দেয়৷ বাড়িতে আসার পর মানসিকভাবে চাপ পড়ে বলে বাড়ির লোকের অভিযোগ ছিল৷ প্রতিনিয়তই পুলিশের ভয় তার মধ্যে লক্ষ্য করতে পেরেছিল পরিবারের সদস্যরা৷ ১৭ ডিসেম্বর চিত্ত দেববর্মা রাতের কোন এক সময় নিখোঁজ হয়ে যায়৷ নিখোঁজ হওয়ার ছয়দিনের মাথায় বাড়ির পাশের এক জঙ্গল থেকে চিত্ত দেববর্মার দেহ উদ্ধার হয়৷ পরিবারের লোকেরা মুঙ্গিয়াকামী থানায় একটি নিখোঁজ হওয়া জিডি এন্ট্রিও করেছিল৷ কিন্তু পুলিশ চিত্ত দেববর্মার কোন খোঁজখবর নেওয়ার প্রয়োজনটুকু মনে করেনি বলে পরিবারের লোকদের অভিযোগ৷ নিখোঁজ হওয়ার পর পরিবারের লোকদের অভিযোগ, চিত্ত দেববর্মার মৃত্যু ঘটলে তার দায়ভার পুলিশকেই নিতে৷ তার জন্য দায়ী থাকবে মুঙ্গিয়াকামী থানার পুলিশ৷ চিত্ত দেববর্মার নিথর মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পর জনরোষের মুখে পড়তে হয়েছিল পুলিশকে৷ এমনকি জাতীয় সড়ক অবরোধের ঘটনাও ঘটল ৪৩ মাইল এলাকায়৷ অবরোধকারীদের দাবি ছিল পুলিশের মারে গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল চিত্ত দেববর্মা৷ মানসিকভাবেও চাপ পড়ার কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল চিত্ত দেববর্মা৷ অভিযুক্ত পুলিশকে বরখাস্ত সহ শাস্তির দাবি উঠেছিল ওইদিন৷ স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রী সুনিতা দেববর্মা মুঙ্গিয়াকামী থানায় মামলা দায়ের করেন৷ যদিও পুলিশ এখন পর্যন্ত কোন প্রকার তদন্ত করতে সক্ষম হয়নি৷ সোমবার বিকেলে আইপিএফটি রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক মেবার কুমার জমাতিয়া মৃত চিত্ত দেববর্মার বাড়িতে যান৷ তিনি পরিবারের লোকের সাথে কথা বলে জানতে পারেন, পুলিশ থানার লকআপের মধ্যে কিভাবে থ্রার্ড ডিগ্রি প্রয়োগ করে৷ পরে পুলিশের ভয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার পুরো ঘটনাটি তিনি জানেন৷ একই সময় আইপিএফটির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান এবং মৃত চিত্ত দেববর্মার পরিবারের হাতে শীতবস্ত্র তুলে দেন৷ পাশাপাশি এলাকার অন্যান্য গরিব মানুষদের হাতেও বস্ত্র বিতরণ করা হয়৷ তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানান, অভিযুক্ত পুলিশের বিরুদ্ধে উচ্চপদস্থ অফিসার দিয়ে তদন্ত করানোর পাশাপাশি পরিবারের হাতে এককালীন ১০ লক্ষ টাকা ও চাকুরি প্রদানের জন্য অভিমত ব্যক্ত করেন৷
এদিকে, তেলিয়ামুড়া মহকুমা প্রশাসনের তরফে ৬ হাজার টাকা মৃত চিত্ত দেববর্মার স্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়৷ একাংশ বুদ্ধিজীবীমহলের অভিমত, মৃত চিত্ত দেববর্মা যদি পুলিশের তদন্তে অভিযুক্ত হত তবে প্রশাসন থেকে কেনই বা সাহায্য করা হল৷ মুঙ্গিয়াকামী থানার পুলিশ কি তাহলে মিথ্যা চক্রজালে ফাঁসিয়ে একজন স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করে আসা চিত্ত দেববর্মাকে আইনের বেড়াজালে জড়াতে চেয়েছিল৷ তবে এখন দেখার বিষয় মুঙ্গিয়াকামী থানার পুলিশের বিরুদ্ধে কতটুকু সুষ্ঠু তদন্ত হয়৷