নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৪ ডিসেম্বর৷৷ জাগিয়া ঘুমাইলে কাউকেই জাগানো যায় না৷ এই প্রবাদ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বটে৷

কারণ, এখনো দেশের পাশাপাশি রাজ্যের গ্রাহকদের সচেতনতার স্বার্থকতা প্রশ্ণের মুখে৷ সেই বিষয়টি আরো পরিস্কারভাবে ব্যাখ্যা দিলেন খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক দপ্তরের মন্ত্রী ভানুলাল সাহা৷ শনিবার জাতীয় ভোক্তা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি রসিকতা করে বলেন, জাগো গ্রাহক জাগো শ্লোগান দিয়ে ক্রেতাদের সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও মানুষ এখনো ঘুমিয়ে আছেন৷ তাঁদের জাগাতে হবে৷ কারণ, রাজ্যের মানুষ শিক্ষিত হলেও ক্রেতা হিসেবে যতটা সচেতন হওয়া দরকার ততটা নন৷ পণ্যের গুনমান সম্পর্কে আমরা যেমন যাচাই করিনা তেমনি জিনিষ কেনার পর রসিদও নিইনা৷ এসম্পর্কে ক্রেতাদের আরো সচেতন হতে এদিন তিনি আহ্বান জানান৷
জাতী ভোক্তা দিবস ২০১৬ উদযাপন উপলক্ষে শনিবার আগরতলা টাউন হলে এক আলোচনাচক্র অনুষ্ঠিত হয়৷ খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক দপ্তর, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা প্রশাসন ও সদর মহকুমা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন খাদ্য ও অর্থ মন্ত্রী ভানুলাল সাহা৷ জাতীয় ভোক্তা দিবস উদযাপনের এবারের ভাবনা হল ভোক্তা বিরোধের দ্রুত নিস্পত্তির জন্য বিকল্প বিবাদ মীমাংসা ব্যবস্থা৷ ১৯৮৬ সালে আজকের দিনে দেশে ক্রেতা সুরক্ষা আইন প্রণয়ন হয়৷ এর আগে ভোক্তা স্বার্থরক্ষাকারী অনেক আইন দেশে প্রচলিত ছিল৷ কিন্তু কোন আইনই ভোক্তাদের ক্ষতিপুরণ বা দ্রুত সহজ পদ্ধতিতে বিরোধ মীমাংসার ব্যবস্থা ছিলনা৷ এই আইনে শুধুমাত্র ভোক্তা বিরোদ মীমাংসার জন্য জেলাস্তর থেকে রাজ্যস্তর এবং কেন্দ্রীয়স্তর পর্যন্ত ভোক্তা বিরোধ মীমাংসা ফোরাম/কমিশন গঠন করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷
অনুষ্ঠানে খাদ্য ও অর্থমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র ড প্রফুল্লজিৎ সিনহা, ডেপুটি মেয়র সমর চক্রবর্তী, ডুকলী পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান প্রমিলা রায়, খাদ্য দপ্তরের প্রধান সচিব শ্রীরাম তরনীকান্তি, দপ্তরের অধিকর্তা ড দেবাশীষ বসু, পশ্চিম জেলার অতিরিক্ত জেলা শাসক উষাজেন মগ, ভোক্তা সুরক্ষা এসোসিয়েশনের সভাপতি আইনজীবী অমৃতলাল সাহা৷
আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করে প্রধান অতিথি খাদ্য ও অর্থমন্ত্রী ভানুলাল সাহা বলেন, এই দিনটিকে কেন্দ্র করে রাজ্যের সর্বত্রই ক্রেতাদের সচেতন করতে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়৷ এজন্য ক্রেতাদের সংগঠন তৈরি করা হচ্ছে যাতে তারা অধিকার ও সচেতনতা সম্পর্কে অবহিত হন৷ ক্রেতারা বঞ্চিত হলে বা ঠকে গেলে রাজ্য ভোক্তা আদালত, জেলা ভোক্তা আদালত রয়েছে, সেখানে তারা প্রতিকারের জন্য আবেদন করতে পারেন৷ অথচ আমরা যারা গ্রাহক বা ক্রেতা তারা পণ্য ক্রয় প্রতারণার শিকার হলেও এবিষয়ে তেমন গুরুত্ব দিইনা৷ এজন্য গ্রাহকদের সচেতন করতে সরকার থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷ তিনি বলেনৃ, এ রাজ্যের মানুষ শিক্ষিত হলে ক্রেতা হিসেবে যতটা সচেতন হওয়া দরকার ততটা নন৷ পণ্যের গুণমান সম্পর্কে আমরা যেমন যাচাই করিনা তেমনি জিনিষ কেনার পর রসিদও নিইনা৷ এ সম্পর্কে ক্রেতাদের আরও সচেতন হতে তিনি আহ্বান জানান৷ খাদ্য মন্ত্রী ভানুলাল সাহা বলেন, ক্রেতারা পণ্যক্রয়ে প্রতারিত হলে, ভোক্তা আদালতে যেতে হলে প্রমাণের জন্য রসিদের প্রয়োজন রয়েছে৷ পণ্য ক্রয়ের পর রসিদ সংগ্রহের উপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন৷ ক্রেতারা পণ্য ক্রয়ে ঠকে গেলে তাদের হয়ে ভোক্তা আদালত পর্যন্ত যেতে এখন খাদ্য দপ্তরের পরিদর্শকদের ক্ষমতায়িত করা হয়েছে বলে মন্ত্রী শ্রীসাহা জানান৷ তিনি আরও বলেন, অনেক সময় দেখা যায় নামী দামী অনেক কোম্পানী যাদের বিশ্বাস করার কথা তাদের পণ্যেও গুণমান বজায় থাকে না৷ এই জিনিষ বাজারজাত করার জন্য যে নিয়ম আছে সেই নিয়ম যদি তারা না মানে তবে ক্রেতাদের প্রস্তুতকারকই হোক বা ডিলার বিক্রেতারা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য৷ শুধু পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রেই নয়, পরিসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে দুর্বলতা থাকলেও গ্রাহকদের আদালতে যাওয়ার অধিকার রয়েছে৷ এ বিষয়ে অনেক মামলা হয়েছে বলেও তিনি জানান৷ প্রসঙ্গঁক্রমে খাদ্যমন্ত্রী ভানুলাল সাহা বলেন, বর্তমানে ৫০০ টাকা ও ১০০০ টাকা নোট বাতিলের ফলে ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্কের মধ্যেও সমস্যা হচ্ছে৷ খুচরোর অভাবে ক্রেতারা যেমন পণ্যক্রয় করতে পারছেন না, তেমনি বিক্রেতারাও পণ্য বিক্রি করতে পারছেননা৷ কেন্দ্রীয় সরকার ক্যাশলেস ট্র্যানজ্যাকশনের কথা বলছেন৷ ১২৫ কোটি মানুষের দেশে কত সংখ্যক মানুষ প্লাস্টিক কার্ড বা অনলাইনের মাধ্যমে লেনদেন বুঝবেন সে সম্পর্কেও প্রশ্ণ তোলেন খাদ্যমন্ত্রী৷ আলোচনায় অংশ নিয়ে আগরতলা পুর নিগমের মেয়র ড প্রফুল্লজিৎ সিনহা বলেন, ক্রেতা সুরক্ষা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতেই এ ধরণের অনুষ্ঠান করা হয়৷ তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে বিক্রেতারাও একাধারে ক্রেতা৷ তাই সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হতে তিনি আহ্বান জানান৷ অনুষ্ঠানে এছাড়া, বক্তব্য রাখেন আগরতলা পুর নিগমের ডেপুটি মেয়র সমর চক্রবর্তী, ডুকলী পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান প্রমিলা রায় প্রমুখ৷ ভোক্তা সুরক্ষা এসোসিয়েশনের শভাপতি দেশে ক্রেতা সুরক্ষা আইনের ইতিহাস ও আইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন৷ স্বাগত ভাষন দেন সদর মহকুমা শাসক ড সমিত চৌধুরী৷ অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ক্রেতা সুরক্ষা ও সচেতনতার উপর একটি তথ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়৷ আয়োজিত হয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উন্মুক্ত ক্যুইজ৷