নিজস্ব প্রতিনিধি, কৈলাসহর, ৪ ডিসেম্বর৷৷ কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে বসবাসকারী ভারতীয়রা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন৷ কৈলাসহর মহকুমার মাগুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬পরিবারের প্রায় শতাধিক জনসাধারণ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে বসবাস করছেন৷ ভারতীয় নাগরিক হলেও কাঁটাতারের বেড়ার গেইট পেরিয়ে সচিত্র পরিচয়পত্র দেখিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে তবেই এপারে আসতে হয় তাঁদের৷ এনিয়ে কোন আপত্তি না থাকলেও, মূল সমস্যা হল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আসা-যাওয়া করতে হয় তাঁদের৷ সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা পাঁচটা পর্যন্ত আসা-যাওয়া করার সময় বেঁধে দিয়েছে বিএসএফ৷ ফলে, সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলে ওপারে যেতে পারেন না ঐ ভারতীয় নাগরিকরা৷
তাঁদের অভিযোগ, সন্ধ্যা পাঁচটার মধ্যে সীমান্তে গেইট পার করতে না পারলে খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন করতে হয়৷ তাঁদের মধ্যে অনেকেই দিনমজুর৷ মাগুর উলি থেকে শহরে কাজের জন্য আসতে হয় তাঁদের৷ সীমান্ত থেকে শহরে দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার৷ এই ১২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে কাজ শেষে ফিরে যেতে অনেক সময়ই সন্ধ্যা পাঁচটা পেরিয়ে যায়৷ তখন সীমান্তে অবস্থানরত বিএসএফ তাদের ওপারে যেতে দেন না৷ ফলে, খোলা আকাশের নীচেই তখন তাদের রাত্রিযাপন করতে হয়৷ সকাল নয়টা বাজলে তবেই তারা যেতে পারেন ওপারে৷
অভিযোগে জানা গেছে, অনেক সময় রাতে আকস্মিক কোন দুর্ঘটনা বা কেউ অসুস্থ হলেও গেইট খোলা হয় না৷ এমনকি কেউ মারা গেলেও আত্মীয়পরিজনরা এপার থেকে ওপারে কিংবা ওপার থেকে এপারে যেতে পারেন না৷ এদিকে, ঐ এলাকায় পানীয় জলের কোন উৎস নেই৷ বিদ্যুৎ পরিষেবাও একেবারে নেই বললে চলে৷ ফলে তাদের অন্ধকারেই জীবনযাপন করতে হচ্ছে৷ কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে বসবাসকারী চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রী সালফা বেগম জানিয়েছেন, তারা টিউশনে যেতে পারে না৷ এমনকি কোন গৃহশিক্ষকও এপার থেকে ওপারে যান না৷ সুকলে যেতে হলে নির্ধারিত পরিচয়পত্র জমা দিয়ে খাতায় নাম লিখে যেতে হয় তাদের৷ কিন্তু গৃহশিক্ষকের অভাবে পড়াশুনায় ভীষণ ব্যাঘাত ঘটছে বলে ঐ ছাত্রী ক্ষোভ ব্যক্ত করে৷
ঐ এলাকার প্রবীণ নাগরিক মজববর আলি ও মনোহর আলি তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা এই প্রতিবেদকের কাছে তুলে ধরেছেন৷ এদিকে, শুক্রবার কৈলাসহরের বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা সহ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সহ অনেকেই মাগুর উলি গ্রাম পঞ্চায়েতের দুই ও তিন নং ওয়ার্ডের বেড়ার ওপারে বসবাসকারীদের সাথে কথা বলেছেন৷ জানা গেছে, বীরজিৎবাবু তাদের আশ্বাস দিয়ে বলেন সমস্যার বিষয়গুলি জেলাশাসকের নজরে নেবেন৷ এমনকি বিধানসভাতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন৷ পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাছে এবিষয়ে চিঠি দিয়ে সমস্যার কথা জানাবেন৷ বীরজিৎবাবু আরো বলেন, প্রয়োজনে বিএসএফ’র ডিআইজির সাথেও কথা বলবেন৷ মাগুর উলি গ্রাম পঞ্চায়েতের বেড়ার ওপারের বাসিন্দাদের দাবি, অন্তত সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত গেইট খোলা রাখা হলে তাদের তেমন সমস্যা হবে না৷ এছাড়া আকস্মিক কোন দুর্ঘটনায় প্রয়োজনে যেন তাদের জন্য গেইট খুলে দেওয়া হয়৷ এলাকাবাসী স্থানীয় বিধায়কের কাছে দাবি করে বলেন তাদেরকে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার জন্য৷ কারণ, ওপারে থেকে ছেলেমেয়েদের সঠিক পড়াশুনা করানো কোন মতেই সম্ভব নয়৷ এছাড়াও এলাকায় পানীয় জল এবং বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে৷ সরকারি সহায়তাও সঠিকভাবে পাওয়া যায় না৷ এদিকে, কৃষকদের এখন মাঠে ধান পাকার সময়৷ কিন্তু সময় মত মাঠে আসতে না পারায় কৃষকদের প্রচুর ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে তাদের অভিযোগ৷ তাই এর চূড়ান্ত ব্যবস্থা করার দাবি তুলেছেন কাঁটাতারের বেড়ার ওপারের ভারতীয়রা৷
2016-12-05