BRAKING NEWS

পঁুজিপতিদের কব্জায় আয়ুর্বেদ, চলছে ধর্মের নামে টানাটানি, সতর্ক করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৮ অক্টোবর৷৷ আয়ুর্বেদ পুরোপুরি পঁুজিপতিদের কব্জায় চলে গেলে এবং প্রাচীন এই চিকিৎসা

শুক্রবার আগরতলায় জাতীয় আয়ুর্বেদ দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরী৷ নিজস্ব ছবি৷
শুক্রবার আগরতলায় জাতীয় আয়ুর্বেদ দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরী৷ নিজস্ব ছবি৷

পদ্ধতিকে ধর্মের নামে ব্যবহার করা হলে এর উপকারিতা থেকে মানুষ বঞ্চিত হবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরী৷ জাতীয় আয়ুর্বেদ দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্ষোভের সুরে বলেন, আয়ুর্বেদকে ধর্মের মধ্যে টেনে আনা হচ্ছে৷ শুধু তাই নয়, ভারতের প্রাচীন এই ঐতিহ্যশালী চিকিৎসা ব্যবস্থা আয়ুষের হাত থেকে হাতছাড়া হয়ে পঁুজিপতিদের দখলে চলে যাচ্ছে৷ তাতে, আয়ুর্বেদ ওষুধের গুণমান নিয়ে প্রশ্ণ উঠবেই বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জোর গলায় দাবি করেন৷
এদিন তিনি বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থায় আধুনিকীকরণের সাথে সাথে আয়ুর্বেদেও অনেক পরিবর্তন এসেছে৷ কিন্তু এই আয়ুর্বেদকে ধর্মের মধ্যে টেনে আনা হচ্ছে৷ ধর্ম মানেই মানুষের বিশ্বাস৷ তাই তিনি মনে করেন, ধর্মকে রাজনীতির সাথে যুক্ত করা উচিত নয়৷ কিন্তু আয়ুর্বেদে ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী চিন্তা ব্যক্ত করেন৷
মূলত, এদিন অনুষ্ঠান মঞ্চে বিষ্ণু দেবতার ছবিতে মাল্যদান করা হয়৷ বিষ্ণুর অবতার হচ্ছে ধন্যন্তরী যিনি আয়ুর্বেদে আবিষ্কারক৷ ২৮ অক্টোবর ধন্যন্তরীর জন্মদিবসকে আয়ুর্বেদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়৷ এদিন, অনুষ্ঠানে সংসৃকতের শ্লোকও পাঠ করা হয়৷ এই সমস্ত কারণে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এদিন ধর্মের সাথে আয়ুর্বেদের কোথায় মিল রয়েছে সেই প্রশ্ণ তুলেছেন৷ তাঁর সাফ কথা ধর্মের বিষয়ে যে সমস্ত কিছু দাবি করা হয় তা নিয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে৷ যারা গবেষক তারাই এর বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিতে পারেন৷ কিন্তু আয়ুর্বেদকে ধর্মের সাথে মিশিয়ে দেওয়া হলে কেবলমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীর মানুষ এর উপকারিতা ভোগ করতে পারবেন৷ তিনি প্রশ্ণ তুলে বলেন, ভারতের প্রাচীন এই চিকিৎসাশৈলী কেবলমাত্র হিন্দুদের জন্য এমনটা কেন হবে৷ যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে অন্য ধর্মের মানুষ এই চিকিৎসার উপকারিতা কি করে পাবেন৷ তাই ধর্মের সাথে আয়ুর্বেদকে জড়িয়ে ফেলা হলে প্রশ্ণ উঠবেই বলে তিনি মন্তব্য করেন৷
এদিকে, দেশে আয়ুর্বেদ ক্রমশ আয়ুষের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী এদিন সরাসরি রামদেবের পতঞ্জলী সংস্থাকে কটাক্ষ করে বলেন, এখন আয়ুর্বেদ তাঁদের কব্জায় রয়েছে৷ গোটা দেশে তাদের তৈরি আয়ুর্বেদিক ওষুধ বিক্রি হচ্ছে৷ তাতে তারা মুনাফা কামাচ্ছে৷ কিন্তু প্রশ্ণ হল এই আয়ুর্বেদিক ওষুধে গুণমান কে রক্ষা করছে৷ তাঁর দাবি, ভারত সরকারের এমন কোন ল্যাব নেই যেখানে ঐ ওষুধগুলি পরীক্ষা নিরীক্ষা করা সম্ভব৷ তাহলে, এই ওষুধগুলোর বাজারজাত করার ছাড়পত্র কিভাবে দেওয়া হচ্ছে সেই প্রশ্ণ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷
এই সমস্ত বিষয় উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরামর্শ দিয়ে বলেন, আয়ুর্বেদের উপকারিতা সকলে যাতে পান তার জন্য লক্ষ্য রাখতে হবে গোড়ামি যাতে না থাকে৷ এই আয়ুর্বেদের গ্রহণযোগ্যতা সকলের কাছে হতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে৷ এর পাশাপাশি তিনি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের সতর্ক করে বলেন, আয়ুর্বেদিক ওষুধপত্র গুণমানসম্পন্ন কিনা সেটা সম্পর্কে চিন্তা রাখতে হবে৷ পাশাপাশি ধর্মের দোহাই দিয়ে আয়ুর্বেদকে নির্দিষ্ট একটি জাতির দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে কিনা সেদিকেও চিকিৎসকদের খেয়াল রাখতে হবে৷ আজকাল বাজারে ব্র্যান্ড ছাড়া কিছুই চলছে না৷ সেই ব্র্যান্ডেড ওষুধগুলোর বিষয়ে চিকিৎসকরা নজর না রাখলে ফল বিপরীত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *