হোজাই (অসম), ১২ সেপ্টেম্বর, (হি.স.) : দেশের অন্যান্য রাজ্যের মতো অসমের রেল পরিষেবাকে উন্নত করার প্রচেষ্টা হাতে নিয়ে বোতাম টিপে হোজাই-লামডিং রুটে ডাবল রেললাইন সংস্থাপন সংক্রান্ত কাজের সূচনা করেছেন রেল প্রতিমন্ত্রী রাজোন গোহাঁই ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল। উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে কর্তৃক এ-উপলক্ষে হোজাইয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর পাশাপাশি রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেন গোহাঁইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যাবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল। বিজেপি জোট সরকার রেলবিভাগে এক নতুন যুগের সূচনা করছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অসমে ডাবল রেল লাইন স্থাপনের দাবি স্বাধীনতা পরবর্তীকালে উত্থাপিত হয়েছিল। কিন্তু বিগত ৭০ বছরে যা হয়নি, মাত্র দু-বছরের শাসনকালে তা করে দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ‘দক্ষ, তরিৎকর্মা, নিষ্ঠাবান’ মন্ত্রী নগাঁওয়ের সাংসদ রাজেন গোহাঁইয়ের স্বল্পকালের প্রচেষ্টায় এবং রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় আজ প্রাথমিক পর্যায়ে চারশো কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষে নির্মীয়মাণ লামডিং-হোজাই ডাবল রেললাইন সংস্থাপনের কাজের সূচনা হতে পেরেছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
দ্বিতীয় পর্যায়ে হোজাই-ডিগারু এবং তৃতীয় পর্যায়ে বঙাইগাঁও-যোগিগোপা এবং লামডিং-শিলচর-বঙাইগাঁও-যোগিগোপা-গুয়াহাটি রুটে ডাবল লাইনের কাজ শুরু হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও জানান, এতে বরাক-ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সর্বসাধারণের ব্যাপক সুবিধা হবে বলে মন্তব্য করে তিনি বরাক-ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার স্থল ও জলপথগুলি উন্নত করার ওপরও গুরুত্ব দিয়ে বক্তব্য পেশ করেন।
বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের বদলে নর্থ-ইস্টার্ন রেলওয়ে নামে পৃথক একটি ডিভিশন গঠন করতে রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেন গোহাঁইয়ের কাছে আবেদন জানান তিনি।
বিদেশি সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতি এবং প্রদূষণমুক্ত অসম গড়ার সংকল্প নেওয়ার কথাও তাঁর ভাষণে তোলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রদূষণ রোধ করতে সার্বিকভাবে সকলকে গাছ রোপণের আহ্বান জানান তিনি। তাছাড়া গ্রামাঞ্চলের জনসাধারণকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে খুব শীঘ্র রাজ্যের ২৫ হাজার গ্রামকে সন্নিবিষ্ট করে এক প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে, এই তথ্যও এদিনের সভায় জানান মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে, নগাঁওয়ের সাংসদ, রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেন গোহাঁই তাঁর বক্তব্যে প্রথম পর্যায়ে হোজাই-লামডিঙের ৪৫ কিলোমিটার রেলসড়কের পাশাপাশি দ্বিতীয় স্তরে ডিগারু-হোজাই এবং তৃতীয় পর্যায়ে বঙাইগাঁও-যোগিগোপা পর্যন্ত সকল রুটের কাজ আগামী অক্টোবর থেকে একযোগে শুরু হবে বলে জানান। রাজ্যবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি আজ পূর্ণ হল বলে মন্তব্য করে জানান, নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গুয়াহাটি পর্যন্ত বিদ্যুৎচালিত রেল পরিষেবার জন্য ২০০৮ সালে মঞ্জুরিকৃত ৩০০ কোটি থেকে বাড়িয়ে মোদি সরকার ৬০০ কোটি টাকা বাড়িয়েছে। তাছাড়া, অসমে বিদ্যুৎ পরিচালিত রেল পরিষেবাও খুব শীঘ্র শুরু হবে বলে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর উদ্ধৃতি দিয়ে জানান মন্ত্রী।
হোজাই জেলার নাগরিকদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে এখানে (হোজাই) রাজধানী এক্সপ্রেসের স্টপেজ হবে বলে জানান তিনি। আরও জানান, এখানকার পুরনোবাজার থেকে নতুনবাজার সংযোগী ওভারব্রিজ সংস্থাপন সংক্রান্ত প্রকল্পও হাতে নেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া, রেলস্টেশন থেকে শুরু করে রেলের যাবতীয় প্রকল্প দৃষ্টিনন্দন এবং সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত করতে তিনি রেলের নির্মাণ শাখার জেনারেল ম্যানেজারকে পরামর্শ দিয়েছেন। রেল পরিষেবার উন্নততি করতে অসমের বিভিন্ন অঞ্চলে রেলের জমিকে জবরদখলমুক্ত করার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী। পর্যটকদের আরও আকর্ষিত করতে গুয়াহাটির রেললাইন সংলগ্ন এলাকাগুলিকে বেদখলমুক্ত করে ওইসব অঞ্চলকে পরিচ্ছন্ন করার ওপর গুরুত্ব দিয়েও বক্তব্য পেশ করেন তিনি।
আজকের অনুষ্ঠানে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ডাবল লাইনের কাজ সংক্রান্ত ফলকের পরদা সরানোর সঙ্গে সঙ্গে উচ্ছ্বসিত জনতা আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষণ দেন উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের জেনারেল ম্যানেজার (নির্মাণ) এসকে জাগ্গি। বক্তব্য পেশ করেন হোজাইয়ের বিধায়ক শিলাদিত্য দেব প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন নগাঁওয়ের বিধায়ক রুপক শর্মা, রহার বিধায়ক ডিম্বেশ্বর দাস, জাগিরোডের বিধায়ক পীযূষ হাজরিকা, নলবাড়ির বিধায়ক অশোক শর্মা, লামডিঙের বিধায়ক শিবু মিশ্র-সহ রেলের শীর্ষ আধিকারিক সঞ্জীব গোস্বামী ও অজিত পাণ্ডে প্রমুখ।