নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ আগষ্ট৷৷ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ভেঙ্গে চৌচির করে কেন্দ্রীয় সরকার নিজের হাতে সমস্ত
ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চাইছে৷ রাজ্যগুলিকে শুকিয়ে মেরে ভিক্ষুকের মত কেন্দ্রের কাছে হাত পাতার মত অবস্থা সৃষ্টি করতে চাইছে৷ কিন্তু রাজ্যগুলিকে দুর্বল করে কেন্দ্র কিভাবে শক্তিশালী হবে এই প্রশ্ণ ছুঁড়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ না করলে রাজনৈতিক স্বাধীনতার কোন অর্থ থাকছেনা৷ তবে হতাশায় ভুগলে চলবেনা৷ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই আমাদের ঐক্য সুদৃঢ় করে লড়াই করতে হবে৷ এই লড়াই দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চেয়ে কোন অংশে কম নয়৷ এটা জীবনের লড়াই৷ এই লড়াইয়ের পেছনের দিকে তাকিয়ে থাকার কোন সুযোগ নেই৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইংরেজরা নিজেদের স্বার্থে বিভাজনের নীতি নিয়ে দেশের স্বাধীনতার আন্দোলনকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছিল৷ এখন আবার ধর্ম থেকে শুরু করে নানা ভিত্তিতে দেশকে ভাগ করার চক্রান্ত চলছে৷ সংখ্যালঘুরা প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছেন৷ এখন দলিতদের উপরও আক্রম নামিয়ে আনা হচ্ছে৷ এরকম ভারতের জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামীরা লড়াই করেননি৷ এই সর্বনাশা চক্রান্তের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে আজ সকালে আসাম রাইফেলস ময়দানে ৭০তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার একথা বলেন৷
তিনি বলেন, আজকের দিনটি হল আমাদের সবার কাছেই আত্মসমীক্ষার দিন৷ স্বাধীনতা সংগ্রামে যাঁরা জীবন দিয়েছিলেন তাঁদের লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশদের তাড়িয়ে রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করা৷ কিন্তু স্বাধীনতার ৭০তম বর্ষে এসে এখন যা উপলব্ধি সেটা হচ্ছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ দেশকে দুভাগ করেছিল নিজেদের স্বার্থে৷ কিন্তু ভারত এখনও দুই ভাগে ভাগ হয়ে আছে৷ তা হল ধনীর ভারত এবং গরীবের ভারত৷ শতকরা ৭ থেকে ১০ ভাগ মানুষ দেশের ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ সম্পদ ভোগ করছে৷ কিন্তু দেশের ৭৭ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হচ্ছে৷ ধনী, দরিদ্রের ফারাক ক্রমেই বাড়ছে৷ এই বিষয়টি দেশের স্থিতিশীলতায় আঘাত হানতে শুরু করেছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখনও দেশের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মানুষ নিজের নাম লিখতে পারেননা৷ কৃষি অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলেও আমরা পিছিয়ে পড়ছি প্রতিনিয়ত৷ কৃষকরা ফসলের দাম না পেয়ে অত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন৷ শ্রমজীবী অংশের মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারিগুলি যেভাবে ভোগ করছিল সেগুলি একের পর এক ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে৷ এটা ভাল লক্ষণ নয়৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জিনিষের দাম আকাশছোঁয়া৷ একে নিয়ন্ত্রণের জন্য কালোবাজারীদের বিরুদ্ধে দেশের সরকার কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা৷ তাদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারগুলি যাতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারে সেজন্য কেন্দ্রের সরকার কোন সদর্থক ভূমিকা নিচ্ছেনা৷ তিনি বলেন, ডলারের তুলনায় টাকার দাম এখন সবচেয়ে নীচে নেমে এসেছে যা অর্থনীতিতে অস্থিরতার সৃষ্টি করছে৷ অন্যদিকে কালো টাকার পাহাড় জমে ওঠছে৷ এই টাকা উদ্ধারের কোন উদ্যোগ নেই৷ উদার আর্থিকনীতি রূপায়নের প্রশ্ণে দেশের বর্তমান সরকার আগের সরকারের চেয়েও দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষি থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই লুন্ঠনের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে৷ দেশের নিরাপত্তার বিষয়ে পর্যন্ত বিদেশী বিনিয়োগকে অবাধভাবে ঢুকিয়ে দেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ তবে এসবের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ মুখ খোলা শুরু করেছেন৷ জায়গায় জায়াগায় এসব কাজের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের সরকার যখন এই নীতি নিয়ে চলেছে সে সময় সম্পূর্ণ এক অন্য দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে ত্রিপুরায় বামফ্রন্ট সরকার চলার চেষ্টা করছে৷ সারা দেশেই চাকুরীর সুযোগ এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেলেও, এখানে প্রায় নিয়মিতভাবইে শূন্যপদ পূরণ করার উদ্যোগ নেবার পাশাপাশি নতুন পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ তবে সবােিক যে চাকুরী দেয়া সম্ভব নয় তা উপলব্ধি করে যুবক-যুবতীদের স্বনির্ভর করে তোলার জন্য নানা কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে৷ বিদ্যুৎ এর আজ ত্রিপুরা দেশের মধ্যে অন্যতম উদ্বৃত্ত রাজ্য৷ উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার উল্লেক করে তিনি রাজ্যের সব জেলা সদরকে রেল লাইনের সঙ্গে যুক্ত করার দাবী জানিয়েছেন৷ একইসঙ্গে তিনি আগামী মাস তিনেকের মধ্যে আগরতলা বিমানবন্দরের আধুনিকীকরণের কাজ যাতে শুরু করা হয় তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানান৷
মুখ্যমন্ত্রী রিও অলিম্পিকে ত্রিপুরার জিমনাষ্ট দীপা কর্মকারের অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন গতরাতের প্রতিযোগিতা ছিল অসম্ভব উচ্চমানের৷ এর আগে বিভিন্ন সময়ে পদক পাওয়া প্রতিযোগিনীদের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে দীপা অষ্টম থেকে নিজেকে চতুর্থ স্থানে তুলে এনেছেন৷ আরেকটু হলেই তিনি মেডেল জয়ের সার্থক গৌরব অর্জন করতে পারতেন৷ কিন্তু মেডেল পেলেননা বলে দীপার সাফল্যাকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই৷ দীপা ভারতের মর্যাদাকে অনেক উঁচুতে নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে একটা দারুণ ভূমিকা নিয়েছেন৷ এজন্য আমরা গর্ব অনুভব করি৷ মুখ্যমন্ত্রী দীপার প্রশিক্ষক এবং তার বাবা, মাকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন৷ দীপা এখানেই থেমে থাকবেননা বলে আশা প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই অলিম্পিকের আসরে দীপা ২৩ বছরে পদার্পণ করলেন৷ তার সামনে অনেক সময় পড়ে আছে৷ তিনি বিস্ব ক্রীড়াঙ্গণে একটা লম্বা রেসের ঘোড়া৷ দীপা সামনের দিনগুলিতে ভারতের জন্য অনেক পদক আনবেন এটা প্রায় নিশ্চিত৷ ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের সামনে দীপা এখন দৃষ্টান্ত৷
মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানে সম্মিলিত বাহিনীর কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন৷ সব মিলিয়ে ১৮ টি প্ল্যাটুন কুচকাওয়াজে অভিবাদনে অংশ গ্রহন করে৷ মার্চপাষ্টে বিচারে সিকিউরিটি বিভাগে বি এস এফ প্রথম, টি এস আর প্রথম ব্যাটেলিয়ন দ্বিতীয় এবং সি আর পি এফ ও পুলিশের পশ্চিম জেলা মহিলা শাখা যুগ্ণভাবে তৃতীয় স্থার্ন অর্জন করেছে৷ নন সিকিউরিটি ক্যাটাগরীতে প্রথম হয়েছে গার্লস স্কাউট, দ্বিতীয় হয়েছে এন সি সি সিনিয়র (বয়েজ), যুগ্ণভাবে তৃতীয় স্থান পেয়েছে এন এস এল প্ল্যাটুন ােবং আসাম রাইফেলস পাব্লিক সুকল৷ সবার হাতে পুরস্কার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এছাড়াও এই অনুষ্ঠানে ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারী রাষ্ট্রপতি ঘোষিত এসিস্টেন্ট কমান্ডেন্ট রামপ্রসাদ সেনওয়ালকে প্রেসিডেন্টস পুলিশ মেডেল দেয়া হয়৷ তাঁকে পদক পরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে কে ডি টি সিং পুলিস ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণার্থীরা যোগাসন প্রদর্শন করেন৷ এছাড়াও বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা প্রদর্শিত হয় মনোজ্ঞ সাংসৃকতিক অনুষ্ঠান৷
2016-08-17
