নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১০ আগষ্ট৷৷ কৃমি নাশক ট্যাবলেট খেয়ে কদমতলার দু’টি সুকলে তিন শতাধিক ছাত্রছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে৷ অসুস্থ ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হয় কদমতলা হাসপাতালে৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়৷ অভিভাবকরা ভাঙচুর চালায় হাসপাতালে৷ মারধর করা হয় স্বাস্থ্যকর্মীদের৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য টিএসআর ও বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে৷ চিকিৎসকদের একটি টিম তৎপরতার সাথে কাজ করে চলেছেন বলে খবর পাওয়া গিয়েছে৷
সংবাদে প্রকাশ, বুধবার উত্তর ত্রিপুরা জেলার কদমতার বিভিন্ন সুকলেও জাতীয় কৃমি নাশ দিবসে ছাত্রছাত্রীদের কৃমির ওষুধ খাওয়ানো হয়৷ ওষুধ সেবন করার পরপরই গণহারে অসুস্থ হতে থাকে ছাত্রছাত্রীরা৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠে সংশ্লিষ্ট এলাকা৷ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে অভিভাবকদের মধ্যে৷ খবর পেয়ে দুটি সুকলেই ছুটে যান জেলা ও মহকুমা প্রশাসনের আধিকারীক সহ পুলিশ৷ দমকল বাহিনী ও অ্যাম্বুলেন্স গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে আসে কদমতলা হাসপাতালে৷ এদিকে হাসপাতাল চত্বরে জড়ো হয় হাজারো মানুষ৷ ছাত্রছাত্রীদের উত্তেজিত অভিভাবকরা পুলিশ, টিএসআরের গাড়ি ভাঙচুর করে৷ দমকল ও অ্যাম্বুলেন্সেও ভাঙচুর চালায়৷ ঝামেলা এড়াতে হাসপাতাল দখল নেয় পুলিশ ও টিএসআর৷ ঘটনাস্থলে পৌঁছেন জেলা শাসক ও পুলিশ সুপার৷
জানা গিয়েছে, আজ সকালে কদমতলা হাইসুকল, পশ্চিম কদমতলা সিনিয়র বেসিক সুকল, ভাগন সুকল ও সরলা সুকলের ছাত্রছাত্রীদের কৃমির ওষুধ খাওয়ানো হয়৷ ট্যাবলেট খাওয়ার কিছুক্ষন পরই কদমতলা হাইসুকলের ছাত্রছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে৷ তা দেখে আঁতকে উঠেন সুকলের শিক্ষকরা৷ খবর দেওয়া হয় স্থানীয় হাসপাতালে৷ এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই পশ্চিম কদমতলা এস বি সুকল, দক্ষিণ কদমতলা এসবি সুকল, ভাগন সুকল ও সরলা সুকলের ছাত্রছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে৷ অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের নিয়ে আসতে শুরু করে কদমতলা হাসপাতালে৷ এদিকে মঙ্গলবার কদমতলা হাসপাতালে চিকিৎসক ছিলেন মাত্র একজন৷ অসুস্থ ছাত্রছাত্রীদের চিকিৎসা করতে হিমসিম খান ডাঃ অরুণাভ চক্রবর্তী৷ তড়িঘড়ি ধর্মনগর হাসপাতালে থেকে আরও দশজন চিকিৎসককে পাঠানো হয়৷ বিকাল বাড়তেই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠে৷ ধর্মনগর ও কমারঘাট থেকে পাঠানো হয় অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য৷ এদিকে হাসপাতালে সূত্রে জানা গিয়েছে অসুস্থ ছাত্রছাত্রীদের চিকিৎসা চলছে৷ তবে অভিভাবকরা আতঙ্কিত হয়ে অনেক সুস্থ ছেলেমেয়েদেরও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভীড় করছেন৷
সারা দেশের সঙ্গে ত্রিপুরা রাজ্যেও আজ স্বাস্থ্য দপ্তরের উদ্যোগে জাতীয় কৃমিনাশক দিবস পালন করা হয়েছে৷ এই উপলক্ষ্যে আজ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ১-৫ বছর বয়সী শিশুদের অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে এবং ৬-১৯ বছর বয়সের ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে কৃমিনাশক ঔষুধ অ্যালবেনডাজোল টেবলেট খাওয়ানো হয়েছে৷ আজ সন্ধ্যায় মহাকরণে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য মন্ত্রী বাদল চৌধুরী৷ তিনি বলেন, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ২ লক্ষ ৮৭ হাজার, সিপাহীজলা জেলায় ১ লক্ষ ৬২ হাজার ১৪৬, গোমতী জেলায় ১ লক্ষ ৩৭ হাজার, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় ১ লক্ষ ৫৬ হাজার, খোয়াই জেলার ১ লক্ষ ৩৫২, ধলাই জেলায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার, ঊনকোটি জেলায় ১ লক্ষ ৩ হাজার এবং উত্তর ত্রিপুরা জেলায় ১লক্ষ ৩৬ হাজার ৯০টি টেবলেট খাওয়ানো হয়৷ কোথাও কোনো বিপরীত প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি বলে তিনি সাংবাদিকদের অবগত করেন৷ উত্তর ত্রিপুরা জেলার দক্ষিণ কদমতলা এস বি সুকলে তিনজন ছাত্রী উক্ত টেবলেট খাওার পর বমি ভাব এবং পেটে ব্যথা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় এবং আধ ঘন্টার মধ্যেই তিনজন ছাত্রী সুস্থ হয়ে যায়৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসবাবপত্র ভাঙ্গচুর করে এবং একজন পুরুষ স্টাফ নার্সকে আক্রমণ করে৷ এই ঘটনায় ঐ নার্স আহত হন এবং তাকে আগরতলার জি পি বি হাসপাতালে ভর্ত্তি করা হয়েছে৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী নার্সের উপর এই ধরণের হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন৷ খবর পেয়ে জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি দল ও জেলা শাসক ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন৷ বর্তমানে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরী জানান৷ এই বিষয়ে আতঙ্কিত না হতে তিনি আবেদন জানান৷ আজকের এই কর্মসূচীকে সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য তিনি বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের সমস্ত শিক্ষক, শিক্ষিকা এবং সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের সকল কর্মীদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান৷
2016-08-11

