নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৫ আগস্ট৷৷ রাজ্যের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ করে সিপিএম’র মূল শক্তি উপজাতিদের মধ্যে বড়
ধরনের পরিবর্তন সূচিত হতে চলেছে৷ ত্রিপুরার উপজাতি রাজনীতি নিয়ে সাম্প্রতিককালে সিপিএম নেতৃত্বের মধ্যে টানাপোড়েন বাড়ছিল৷ রাজ্যের রাজনীতিতে উজ্জ্বলতর অবস্থায় উঠে আসা জীতেন্দ্র চৌধুরীকে সাংসদ পদে প্রার্থী করে রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল৷ আজ আবার রাজ্যের উপজাতি সংগঠনের জীতেন্দ্র চৌধুরী সভাপতি পদে অভিষিক্ত হলেন৷ এই ঘটনায় সিপিএম’র উপজাতি সংগঠনের আরো শক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শীর্ষ পদে একজন ডায়নামিক উপজাতি নেতার তাগিদ অনুভূত হচ্ছিল৷ আগামীদিনে রাজ্য রাজনীতিতে যে ঘূর্ণাবর্ত আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, উপজাতি ভোটে ভাগ বসানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে৷ এরকম পরিস্থিতিতে সিপিএম’র উপজাতি সংগঠন ত্রিপুরা উপজাতি গণমুক্তি পরিষদের সভাপতি পদে জীতেন্দ্র চৌধুরীর নির্বাচনকে কোন অবস্থাতেই খাটো করে দেখা যায় না৷
শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে শ্রীচৌধুরী গণমুক্তি পরিষদের নবগঠিত কমিটি ঘোষণা করার পাশাপাশি ২১তম রাজ্য সম্মেলনে ৭টি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন৷ নবগঠিত কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদে অভিষিক্ত হয়েছেন ত্রিপুরা স্বশাসিত জেলা পরিষদের মুখ্যকার্যনির্বাহী সদস্য রাধাচরণ দেববর্মা৷ ১৪৩ জনকে নিয়ে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে শ্রী চৌধুরী জানিয়েছেন৷ পুরনো কমিটি থেকে ১৯ জন অব্যাহতি নিয়েছেন, তার বদলে ১৯ জন নতুন মুখ আনা হয়েছে৷
এই সম্মেলনের মঞ্চ থেকে বিশেষভাবে আওয়াজ উঠেছে সাম্প্রদায়িক ও বিভেদকামী শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে৷ মূলত, পৃথক রাজ্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ আরো চওড়া করার জন্য এই সম্মেলনে আহ্বান জানানো হয়েছে৷ সাংসদ জীতেন্দ্র চৌধুরী জানিয়েছেন, যে ৭টি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল রাজ্যভাগের স্লোগান দিয়ে কেউ যেন দাঁত বসাতে না পারেন৷ তাদের শক্ত হাতে মোকাবেলা করতে হবে৷ সম্প্রতি উপজাতি মহল্লায় আইপিএফটি যেভাবে পৃথক রাজ্যের সুরসুরি দিয়ে প্রসার বৃদ্ধি করে চলেছে, সেক্ষেত্রে শাসক দলের উপজাতি সংগঠনকে আরো মজবুত হওয়ার তাগিদ দেখা দিয়েছে৷ গণমুক্তি পরিষদের সম্মেলনেও বারে বারে এবিষয়টি উঠে এসেছে৷
এদিকে, সংবিধানের ষষ্ঠ তপশিল মোতাবেক এডিসি’র হাতে ক্ষমতা এবং অর্থ প্রবাহ সেভাবে নেই বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে শ্রী চৌধুরী সংবিধান সংশোধন করে উপজাতি সাবপ্ল্যান থেকে যাতে এডিসি’র জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয় সেই প্রস্তাব আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন৷ মূলত, উপজাতিদের সাংবিধানিক ক্ষমতা এবং অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে সরলীকরণ এই প্রস্তাবের মূল লক্ষ্য বলে তিনি জানিয়েছেন৷ এছাড়াও পূর্বোত্তরের রাজ্যগুলিকে বিশেষ ক্যাটাগরির মর্যাদা বহাল রাখা নিয়েও সম্মেলনে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে৷ শ্রী চৌধুরী জানিয়েছেন, পণপ্রথা, নারী নির্যাতন, গার্হস্থ্য হিংসা এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধেও প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে৷ এছাড়া ককবরক ভাষাকে সংবিধানের অষ্ঠম তপশিলে যুক্ত করে উপজাতিদের ভাষা ও সংসৃকতির উদ্ধারে গণমুক্তি পরিষদের সম্মেলনে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে৷
শ্রী চৌধুরী এদিন বলেন, পরিকল্পনা কমিশন থাকাকালীন এডিসিকে অর্থ বরাদ্দ করা হত৷ কিন্তু নীতি আয়োগ গঠিত হওয়ার পর চতুদর্শ অর্থ কমিশন এডিসিকে কোন অর্থ দেয়নি৷ ফলে, উপজাতি বিকাশে সংবিধান সংশোধন করে এডিসিকে অধিক ক্ষমতা এবং অর্থ প্রদান করার দাবি উঠেছে৷