নিজস্ব প্রতিনিধি, তেলিয়ামুড়া, ২৭ জুলাই ৷৷ শেষ পর্যন্ত ডাইনী আক্রান্ত ১১ জনকেই তেলিয়ামুড়া গ্রামীন হাসপাতাল থেকে
ত্রিপুরা স্টেট সাইকাইষ্টিট হাসপাতালে (নরসিংগড়) উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করা হয় বুধবার বিকাল ৪১৫ মিনিট নাগাদ৷ তবে তাদের স্থানান্তর করতে প্রচন্ড বেগ পোহাতে হয় মহকুমা শাসকসহ পুলিশ প্রশাসনকে৷ প্রসঙ্গত আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে বেমানান ডাইনী শদ্ধটিরই দ্বারা আক্রান্ত হল তেলিয়ামুড়া মহকুমার মুঙ্গিয়াকামী ব্লকের তুলাইয়া পাড়ার ১ পরিবারের ৯জন সদস্য সহ আরো দুই জন৷ এর মধ্যে তিনটি শিশু কন্যাও রয়েছে৷ তাদের খবর পেয়ে তেলিয়ামুড়া মহকুমা প্রশাসন ও পুলিশ ও স্বাস্থ্য দপ্তর মিলে গত মঙ্গলবার তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য তেলিয়ামুড়া গ্রামীন হাসপাতালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ভর্ত্তি রাখা হয়৷ কিন্তু তাদের শারিরিক অবস্থার কোন প্রকার উন্নতি হযনি৷ খবর পাঠানো হয় আগরতলার স্বাস্থ্য দপ্তরে৷ সেখান থেকে সকাল ১১টা নাগাদ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক স্বপন বর্মন তেলিয়ামুড়া হাসপাতালে ছুটে আসেন এবং তাদের স্টেট সাইকিয়াস্সিট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন৷ এই মোতাবেক তাদের তেলিয়ামুড়া হাসপাতাল থেকে পুলিশ বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার বেস্টনীতে আগরতলা নরসিংগড়স্থিত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷
তবে আক্রান্ত পরিবারের অভিযোগ ঔষোধ এর মাধ্যমে তাদের রোগ ভাল হবে না৷ তাদের অম্পি থানাধীন তৈদু এলাকার খ্রীষ্টানদের চার্চে নিয়ে গেলেই তাদের রোগ ভাল হয়ে যাবে৷ তবে এঘটনার পিছনে যে একটা রহস্য লুকিয়ে আছে তার একটা হদিশ পেয়েছে প্রশাসন৷ আগামী দিনে তা উদঘাটনে চেষ্টা করবে প্রশাসন৷
প্রসঙ্গত, তেলিয়ামুড়া মহকুমা শাসক জয়ন্ত দে এর নেতৃত্বে খোয়াই জেলার সিএমও পি কে মজুমদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হরিপদ দাস, মুঙ্গিয়াকামী প্রথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ইনচার্জ অনিতা দেববর্মা, চাম্পাহাওর থানার ওসি নারায়ন চক্রবর্তী, খোয়াই এসডিএম সহ বিশাল সংখ্যায় স্বাস্থ্য কর্মী ও পুলিশ বাহিনী এলাকায় একটি স্বাস্থ্য শিবির করে৷ তবে স্বাস্থ্য পরিষেবার দিকে নজর ছিলনা এলাকাবাসীর৷ তারা ওঝা ও বৈদ্যের দ্বারা তাদের ভাল করার চেষ্টা করছিল৷ তবে অনেক যুক্তি তর্কের পর মহকুমা শাসক তেলিয়ামুড়ার চেষ্টায় তাদের তেলিয়ামুড়া গ্রামীন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷
প্রায় এক মাস আগে ঐ এলাকার সাপ্রাই দেববর্মার মেয়ে মনিহার দেববর্মা (১৬) অসুস্থতার কারন হিসেবে ঐ এলাকার বাসুদেব দেববর্মার মেয়ে তথা মঙ্গলক্ষী দেববর্মা (১২) কে দায়ী করে৷ কারন সে তাদের নজরে ডাইনী৷ এই আপবাদে বাসুদেব দেববর্মার পরিবারের চারজন সদস্যকে এলাকাবাসী গ্রাম ছাড়া করে দেয় এবং তাদের উপর আক্রামণ চালায়৷ প্রানে বেঁচে যায় মঙ্গলক্ষী দেববর্মা৷ পরবর্তী সময়ে এই তুলাইয়া পাড়া থেকে রাতের অন্ধকারে উত্তর মহারানী পুর এর আত্মীয় তথা রেবতী দেববর্মার বাড়ীতে আশ্রয় নেয়৷ বর্তমানে আজ ও তাদের অস্থায়ী ঠিকানা রেবতী দেববর্মার বাড়ী৷ কারন ভয়ে তারা গ্রামে ফিরতে চায়না৷ সেখানে গেলে মঙ্গলক্ষীর প্রান নাশের হুমকি ও আছে৷ এর পরই সংবাদের জেরে প্রশাসনের চোখ খোলে৷ চিকিৎসাধীন তারা হলেন ১) মনিহার দেববর্মা (১৬), বিশ্বপতি দেববর্মা (৩০), স্বর্নলতা দেববর্মা (২২), ওয়াকতি দেববর্মা (৯), জারিনী দেববর্মা (১৫) শ্যামল দেববর্মা (২৭), ধনপতি দেববর্মা (৩০), গিরিবালা দেববর্মা (৩০), জগতছরি দেববর্মা (১৮), অজিত দেববর্মা (২৪), কার্তিক দেববর্মা (৬০), এর মধ্যে মনিহার দেববর্মা, জারিনি দেববর্মা, জগতছরি দেববর্মা ও স্বর্নলতা দেববর্মার অবস্থা খারাপ৷