আতংকিত হবার কিছু নেই বলল খাদ্য দপ্তর, জাতীয় সড়ক স্বাভাবিক হতে কমপক্ষে আরও দশদিন ঃ পূর্তমন্ত্রী

BADAL CHOUDHURY TRIPURAনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১ জুলাই৷৷ এতদিন আসাম সরকার লোয়ারপোয়া সংস্কারের প্রয়োজন মনে করেনি৷ সেই কারণেই ত্রিপুরা বিপর্য্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ জাতীয় সড়ক সংস্কার না হওয়ায় নানা দিক দিয়ে সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে রাজ্যকে৷ শুক্রবার মহাকরণে পূর্তমন্ত্রী বাদল চৌধুরী লোয়ারপোয়া নিয়ে আসাম সরকারের অসৌজন্যতায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন৷ তিনি স্পষ্ট বলেন, জাতীয় সড়কের এই অংশটির কোন প্রয়োজন আসামের না থাকলেও আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক৷ এই জন্যই বারবার কেন্দ্রীয় সরকার এবং আসম সরকারের দৃষ্টিতে বিষয়টি নেওয়া হয়েছে৷ অবশেষে জরুরী ভিত্তিতে ২০৮ এ জাতীয় সড়কের সংস্কারের জন্য কেন্দ্রীয় ভূতল পরিবহণ মহাসড়ক মন্ত্রক এনএইচআইডিসিএল-কে নির্দেশ দিয়েছে৷ শনিবার এনএইচআইডিসিএল’র মুখ্য বাস্তুকার শ্রীবাস্তব এবং রাজ্যের জাতীয় সড়কের মুখ্য বাস্তুকার দীপক দাস ২০৮ এ জাতীয় সড়কের পর্যবেক্ষণ করবেন৷ এরপরই নির্মাণ সংস্থা নিয়োগ করা হবে৷ সাত-দশ দিনের মধ্যে সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হতে পারে বলে এদিন পূর্তমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন৷
৪৪ নং এবং ২০৮ এ নং জাতীয় সড়কের দুরব্যস্থার কারণে রাজ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সমূহ সরবরাহের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হলেও এখনই আতংকিত হবার কিছু নেই৷ খাদ্য দপ্তর এবং এফ সি আই কর্তৃক চালের বাফার স্টক রাখার ফলে গণবন্টন ব্যবস্থায় চালের যোগান অক্ষুন্ন রাখার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কোন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়নি৷ বর্তমানে রাজ্যে ৫৫ দিনের জন্য প্রয়োজনীয় চাল (৫৪,৭৫৬ মে,টন) খাদ্য গুদামগুলিতে মজুত আছে৷ প্রশাসন কর্তৃক বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে প্রতিদিনই কিছু কিছু পেট্রোপণ্যবাহী ট্রাক রাজ্যে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রবেশ করছে৷ যার ফলে, দৈনিক যোগান সম্পূর্ণ স্বাভাবিক করা না গেলেও এখনো অস্বাভাবিক কোন সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হয়নি৷ রাজ্যে পেট্রোজাত পণ্যের দৈনিক চাহিদা হচ্ছে পেট্রোল ১৫-১৬ ট্রাক (১৯০-২০০ কিলি,) এবং ডিজেল -৩২ ট্রাক (৩৯০-৪০০ কিলি,)৷ জুন মাসে দৈনিক গড়ে ১২ ট্রাক লোড পেট্রোল এবং ১৯ ট্রাক লোড ডিজেল সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে৷ আজ সব মিলিয়ে ২২ ট্রাক পেট্রোল এবং ২৮ ট্রাক ডিজেল রাজ্যে এসে পৌঁছেছে৷ আগামী দিনগুলিতেও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পেট্রোল এবং ডিজেলের যোগান অক্ষুন্ন রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে৷ আজ সন্ধ্যায় মহাকরণে এক সাংবাদিক সম্মেলনে পূর্তমন্ত্রী বাদল চৌধুরী জাতীয় সড়কের দুরবস্থার কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করতে গিয়ে এতথ্য জানান৷ সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত খাদ্য ও জনসংভরণ দপ্তরের অধিকর্তা দেবাশিস বসু জানান, আজ বিশালগড়ে এল পি জি সিলিন্ডারের পুরো মাত্রায় বটলিং হয়েছে৷ আগামীকালও উৎপাদন হবে৷ বর্তমানে প্রায় ৭০টি বুলেট রাজ্যে আসার অপেক্ষায় রয়েছে এবং এগুলিকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বটলিং প্ল্যান্টে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে৷ তিনি জানান, বর্তমানে রাজ্যে এল পি জি সিলিন্ডারের মাসিক চাহিদা হচ্ছে ২৪৪ লক্ষ৷ গত কয়েক মাস গড়ে ২১০ লক্ষ সিলিন্ডার সরবরাহ করা হলেও জুম মাসে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিকূলতার জন্য ১৬১ লক্ষ সিলিন্ডার সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে৷ আই ও সি-র কার্যনির্র্বহী অধিকর্তা দীপঙ্কর রায় আজ দুই দিনের রাজ্য সফরে এসেছেন৷ খাদ্য ও জনসংভরণ মন্ত্রী ভানুলাল সাহার সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে৷ বিকল্প পথ দিয়ে পেট্রোপণ্য ও জ্বালানী গ্যাস আনার ব্যাপারে তার সঙ্গে কথা হয়েছে৷ এদিকে, উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সভাপতিত্বে আজ এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ বৈঠক পূর্তমন্ত্রী বাদল চৌধুরী, মুখ্যসচিব, পূর্ত দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান সচিব, পরিবহণ দপ্তরের সচিব এবং খাদ্য ও জনসংভরণ দপ্তরের অধিকর্তা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন৷ বৈঠকে জানানো হয়, ৪৪ নং জাতীয় সড়কে ২৮ এবং ২৯ জুন যানবাহন চলাচল না করলেও জরুরী ভিত্তিতে মেরামতির দরুণ ৩০ জুন ফের গাড়ী চলাচল শুরু হয়৷ এই দিনই এই সড়ক দিয়ে ৩০০-র উপর গাড়ী চলাচল করে৷ এখন যানবাহন চলাচল অব্যাহত রয়েছে৷ একই রকম ভাবে ২৯ জুন ২০৮ এ জাতীয় সড়কেও যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল৷ ৩০ জুন সন্ধ্যার পর এই সড়ক ফের চালু হয় এবং ২০০র মতো গাড়ী ত্রিপুরায় প্রবেশ করে৷ মেরামতির কাজ অব্যাহত থাকায় যানবাহন চলাচল বজায় রয়েছে৷
সাংবাদিক সম্মেলনে পূর্তমন্ত্রী বাদল চৌধুরী জানান, জাতীয় সড়কের অবস্থা এখনও খুবই করুণ৷ তাই পরিস্থিতির উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে৷ মুখ্যসচিব এবং পূর্ত দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান সচিব সড়ক ও পরিবহণ, জাতীয় সড়ক মন্ত্রকের সচিব, এন এইচ আই ডি সি এল র এম ডি এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের আধিকারিক, আসাম সরকারের মুখ্যসচিব ও অতিরিক্ত মুখ্যসচিব, পূর্ত দপ্তরের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন৷ গতকাল রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী বাদল চৌধুরীর সঙ্গে আসামের পূর্তমন্ত্রীরও টেলিফোনে কথা হয়৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আসাম সরকার সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ ত্রিপুরার পক্ষ থেকেও সহযোগিতা করার আশ্বাস দেয়া হয়েছে৷ এই লক্ষ্যে পূর্ত দপ্তরের জাতীয় সড়কের ভারপ্রাপ্ত চীফ ইঞ্জিনীয়ার এখন ধর্মনগরে ক্যাম্প করে রয়েছেন৷ পূর্তমন্ত্রী জানান, সড়ক পরিবহণ ও জাতীয় সড়ক মন্ত্রক জাতীয় সড়কের এই বিপর্যস্ত অংশ জরুরী ভিত্তিতে মেরামত করা জন্য এন এইচ আই ডি সি এলকে দায়িত্ব দিয়েছে বলে জানা গেছে৷ তিনি বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবাই একসঙ্গে উদ্যোগ নেয়ায় আমরা আশাবাদী৷ খুব সহসাই পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷ সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্য সরকারের প্রধান সচিব লোকরঞ্জনও বক্তব্য রাখেন৷