নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪ জুন৷৷ বিদ্যা ব্যাপারীদের কোপে দিশেহারা রাজ্যের অভিভাবক মহল৷ বর্হিরাজ্যে নয়, এরাজ্যেই বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমের সুকলে সন্তানদের ভর্তি করাতে গিয়ে অভিভাবকদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে৷ অভিযোগ, রাজধানী আগরতলার বনেদি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমে ভর্তি করানোর ক্ষেত্রে উচ্চহারে ফি আদায় করা হচ্ছে৷ একেক সময় একেক হারে ফি নিচ্ছেন সুকল কর্তৃপক্ষ৷
অভিযোগ উঠেছে, রাজধানী আগরতলার শ্রীকৃষ্ণ মিশন, ভারতীয় বিদ্যাভবন, হিন্দি হায়ার সেকেন্ডারি সুকল সহ আরো কয়েকটি সুকলে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির ফি হঠাৎ বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ একজন ছাত্রকে ভর্তি করাতে কখনো ১৬ হাজার টাকা আবার কখনো অন্য আরেকজন ছাত্রের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে৷ তাতে অভিভাবক মহল মহা সমস্যায় পড়েছেন৷
রাজ্যে সরকারি সুকলগুলির মান ক্রমশ তলানিতে৷ স্বাভাবিকভাবেই ঝোঁক বেড়েছে বেসরকারি সুকলগুলোর দিকে৷ সম্প্রতি অডিট রিপোর্টেও তথ্য উঠে এসেছে সরকারি সুকলগুলির তুলনায় বেসরকারি সুকলগুলিতে ছাত্র ভর্তির হার অত্যাধিক ভাবে বেড়েছে৷ জনৈক অভিভাবক জানিয়েছেন, ছেলেকে ভর্তি করাতে শ্রীকৃষ্ণ মিশন সুকলে ১৬ হাজার টাকা ভর্তি ফি বাবদ তাকে দিতে হয়েছে৷ সুকলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক অভিভাবক জানিয়েছেন, তার মেয়েকে সুকলে ভর্তি করানোর সময় জানতে পারেন মাত্র দুটি সিট অবশিষ্ট রয়েছে৷ তখন সুকল কর্তৃপক্ষ নিলামী শুরু করেন৷ দুটি সিটের সর্বোচ্চ দর উঠেছে ২৫ হাজার টাকা করে৷ তিনি জানান, ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার সামর্থ্য তার ছিল না৷ ফলে, ঐ সুকলে তার মেয়েকে তিনি ভর্তি করাতে পারেননি৷ তবে রাজধানীর দুই বনেদি ব্যবসায়ী তাদের সন্তানদের ২৫ হাজার টাকা করে ফি দিয়ে ঐ সুকলে ভর্তি করেছেন৷
এদিকে, বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম সুকলগুলির পরিচালন কমিটির সদস্যরা কোন ধরনের অতিরিক্ত ফি নেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি করেন৷ তাদের বক্তব্য সুকলের নির্দিষ্ট যে ফি স্টাকচার রয়েছে সে অনুযায়ী ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি ফি আদায় করা হচ্ছে৷ তাতে, এক নতুন প্রশ্ণ জন্ম দিয়েছে৷ অভিভাবক মহলের মতে, বর্হিরাজ্যের কলেজগুলিতে ভর্তি করানোর মত রাজ্যের বনেদি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলিতেও একটি চক্র এই ফি বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন৷ তাদের সাথে মিলে সুকল পরিচালন কমিটির একাংশ কর্তারা ছাত্রছাত্রী ভর্তি করানোর নাম করে অভিভাবকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্ক হাতিয়ে নিচ্ছেন৷ অভিভাবকরাও সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অনেকটাই নিরূপায় হয়ে মোটা টাকা তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন৷
এধরনের ঘটনা কেবল এবছরই হচ্ছে তেমনটা নয়৷ বেশ কয়েক বছর ধরে এই প্রথা শুরু হয়েছে৷ কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় প্রশাসনের এবিষয়ে কোন নজরদারি রাখার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছে না৷ অভিভাবক মহলের অভিযোগ, ছাত্র ভর্তির নাম করে সুকল কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট ফি’র থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে এর সঠিক নজরদারি প্রয়োজন রয়েছে৷ সরকার এবিষয়ে কোন ধরনের খোঁজখবর রাখছে না৷ ফলে, সুকল কর্তৃপক্ষ যে যার মত করে ছাত্র ভর্তির নামে অভিভাবকদের পকেট কেটে চলেছেন৷ জনৈক অভিভাবক জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম সুকলগুলির প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন৷ ফলে, সুকলগুলি অভিভাবকদের উপর অতিরিক্ত অর্থের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে৷ দাবি উঠেছে, এসমস্ত বিষয়ে রাজ্য সরকার সুকলগুলির দিকে নজরদারি বাড়াতে হবে৷ এখনই ঐ সুকলগুলির লাগাম টানা না হলে আগামীদিনে আরো ভয়ংকর হয়ে উঠবে বলে অভিভাবক মহল আশঙ্কা করছে৷
2016-06-15
