নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১২ মে৷৷ রাজ্যে গ্রাম পাহাড়ে সাধারণ মানুষের আর্থিক উন্নয়ন, প্রগতি কাঙ্খিত পথে এগুতে পারেনি তার আভাসই লক্ষ্য করা গিয়েছে৷ বৃহস্পতিবার দিল্লীতে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী চৌধুরী বীরেন্দ্র সিংয়ের সাথে ত্রিপুরার তিন সাংসদ এক সাক্ষাৎকারে মিলিত হয়ে রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কট ও তীব্র অভাবের চিত্র তুলে ধরেছেন৷ এই অভাবের পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ রেগার বরাদ্দ কমানো এবং শ্রম দিবসে কাটছাঁট৷ সাংসদদের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে গেল যে রেগা না থাকলে রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতি একেবারেই ভেঙ্গে পড়বে৷ দারিদ্র ও অভাবকে ঢাকতে রাজ্যে গ্রামীণ এলাকায় রেগাই যে অবলম্বন সেটাই আবার তিন সাংসদের ডেপুটেশনের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট৷
বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রামোন্নয়নের বিভিন্ন স্কীমের অর্থ দ্রুত মঞ্জুরীর দাবীতে রাজ্যের তিন সাংসদ জীতেন্দ্র চৌধুরী, শঙ্কর প্রসাদ দত্ত এবং ঝর্ণা দাস বৈদ্য কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী চৌধুরী বীরেন্দ্র সিংয়ের সাথে তাঁর কৃষিভবনস্থিত অফিসে মিলিত হন৷ রাজ্যের সাংসদরা চলতি অর্থ বছরের অর্থ এখনও পর্য্যন্ত রিলিজ না হওয়ার জন্য গ্রামাঞ্চলে অভাব পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান৷ তাঁরা আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় কাজ পড়ে থাকা এবং সার্বিক একটি অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে৷ রেগা আইন তৈরী হওয়ার শুরু থেকেই এবং গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে শ্রমদিবস সৃষ্টিতে সারা দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে থাকা সত্বেও চলতি বছরে মোট শ্রমদিবস কমিয়ে দেবার জন্য মন্ত্রক যে একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তা প্রত্যাহার করে গড়ে ১০০ শ্রমদিবস এবং পাহাড়ী এলাকার জন্য আরো ৫০ শ্রমদিবস বাড়িয়ে দেবার জন্য দাবী জানান৷ সাংসদরা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীকে আরও জানান, রেগার কর্মসূচী রূপায়নে যেসকল ইঞ্জিনীয়ার ও কর্মীরা স্বল্প বেতনে এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা না পেয়েও অক্লান্ত কাজ করছেন তাদের নিয়মিত করার জন্য একটি জাতীয় নীতি গ্রহণে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবী জানান৷
রেগা প্রকল্প নিয়ে রাজ্যের তিন সাংসদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে আরও জানান, অন্যান্য কিছু রাজ্য থেকে বিগত বছরের অর্থব্যয়ে অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে চলতি বছরে অর্থ মঞ্জুরীতে কিছু কড়াকড়ি হচ্ছে৷ সাংসদরা অন্য রাজ্যের পাপে ত্রিপুরার জনগণকে শাস্তি দেওয়া অনুচিত বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে জানিয়েছেন৷ সাংসদরা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ত্রিপুরা সফর করে কর্মসূচী রূপায়নে গ্রামীণ জনগণ এবং ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ও এডিসির আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা স্বচক্ষে দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানান৷ মন্ত্রী জুন মাসের প্রথম পক্ষে ত্রিপুরায় আসার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছে৷
রেগায় বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া এবং শ্রম দিবসে কাটছাঁট করায় রাজ্যের গ্রাম পাহাড়ে যে আর্থিক দৈনতা দেখা দিয়েছে তা তিন সাংসদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়েছে৷ রেগা নির্ভর রাজ্যে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ায় হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে৷ রেগার মধ্য দিয়েই রাজ্যের মানুষের আর্থিক দৈনতাকে ঢেকে রাখা হয়েছিল এতোদিন৷ বরাদ্দ কমতেই প্রকৃত রূপ প্রকাশ পাচ্ছে৷ গ্রামীণ এলাকার জনগণের আর্থিক দুরাবস্থা নিরসনে রাজ্য সরকারের নিজস্ব উদ্যোগ যে তেমন কিছুই নেই তা রেগার বরাদ্দ কমে যেতেই সামনে এসেছে৷
এদিকে, রেগা নিয়ে শাসক দল সিপিএম রীতিমতো উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে৷ গ্রাম পাহাড়ে রেগার উপর ভিত্তি করেই বছরের পর বছর রাজনীতির ময়দান সরগরম করে আসছিল দল৷ বরাদ্দ কমতেই দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছে৷ দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ধলাই জেলার গন্ডাছড়া ও লংতরাইভ্যালি মহকুমায় রেগায় কোনও কাজ নেই৷ কাজ না থাকায় দূরবর্তী এলাকার মানুষ অসুবিধানর সম্মুখীন হয়েছেন৷ এমনিতেই এবার আগাম বৃষ্টির কারণে জুম চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায়, বিশেষ করে উপজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে রেগার কাজ শুরু করার জন্য দলের রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে৷
দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার চলতি বছরে ত্রিপুরার ক্ষেত্রে প্রায় দুই কোটি শ্রমদিবস কমিয়ে দিয়েছে৷ দেশের মধ্যে রেগা কর্মসূচী রূপায়ণে ত্রিপুরা এক নম্বরে থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকারের এই বিমাতৃসুলভ আচরণের বিরুদ্ধে এবং কমানো শ্রমদিবস ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে চলতি গণআন্দোলনকে আরও জোরদার করার জন্য রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী রেগা শ্রমিক এবং গণতান্ত্রিক, ধর্ম নিরপেক্ষ ও উন্নয়নকামী জনগণের কাছে আবেদন জানিয়েছে৷
2016-05-13
