কলকাতা, ১৭ এপ্রিল : বিক্ষিপ্ত অশান্তি, সংঘর্ষের মধ্যেই শেষ হল দ্বিতীয় দফার ভোট । দ্বিতীয় দফায় ৮০ শতাংশ ভোট পড়ল পশ্চিমবঙ্গে । আজ দিনের শেষে জানালেন নির্বাচন কমিশন। বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ৫৬ কেন্দ্রে গড় ভোট পড়ে্ছে ৭৫ শতাংশ। আর দুপুর ৩ টা পর্যন্ত ভোটের হার ছিল–বীরভূমে ৭৩.৫৯ শতাংশ, উত্তর দিনাজপুরে ৭০.৩৭ শতাংশ, দক্ষিণ দিনাজপুরে ৭৪.৭৮ শতাংশ, আলিপুরদুয়ারে ৭৩.৬৫ শতাংশ, দার্জিলিং ৬৬.৭৩ শতাংশ, মালদায় ৬৮.৬৭ শতাংশ ,জলপাইগুড়ি ৬৭.৯২ শতাংশ । সুষ্ঠু ও অবাধ ভোটের প্রতিশ্রুতিই সার প্রথম দফার দুই পর্যাগয়ের মতো রক্তাক্ত দ্বিতীয় দফার ভোটও| ভোটের দ্বিতীয় দফাতেও সারাদিন এটাই ছিল আবহ। তুলনামূলকভাবে দিনের শুরুতে ভোট ঘিরে অনেকটাই ঠান্ডা আবহাওয়া ছিল উত্তরবঙ্গে। তবে বেলা বাড়তেই জলপাইগুড়ির কিছু জায়গা থেকে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর মেলে।
এদিন কমিশনের কড়া নজরদারির মধ্যেই শুরু হয় দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ।পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে রবিবার ভোটগ্রহণ চলছে ৫৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে । সকাল সাতটা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। সকাল থেকেই বুথের বাইরে লম্বা লাইন। দুপুর ১ টা পর্যন্ত গড় ভোটের হার ৫৫.২৮ শতাংশ । দুপুর ১ টা পর্যন্ত বীরভূমে ভোট পড়েছে ৬২.৪৯ শতাংশ, উত্তর দিনাজপুরে ৫৫.৫০ শতাংশ, দক্ষিণ দিনাজপুরে ৫৬.০৯ শতাংশ, আলিপুরদুয়ারে ৪৫.৪৬ শতাংশ, দার্জিলিং ৫৩.০৩ শতাংশ, মালদায় ৫৪.৩৩ শতাংশ , জলপাইগুড়ি ৫৯.৯৮ শতাংশ । রবিবাসরীয় নির্বাচনে উত্তরবঙ্গ মোটের উপর শান্তিপূর্ণ থাকলেও অনুব্রত মণ্ডলের বীরভূম সকাল থেকেই উত্তপ্ত। বোলপুর আর ইলামবাজারে বিরোধী দলের দুই এজেন্টকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হল। যথারীতি অভিযুক্ত তৃণমূল। নানুর এবং দুবরাজপুরে অনেকগুলি বুথে বিরোধী এজেন্টদের বসতে দেওয়া হয়নি বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।
অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করানোর আশ্বাস দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বহু জায়গায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট ও বুথ জ্যামের চেষ্টার অভিযোগ উঠল! পাশাপাশি কমিশনের আশ্বাস, খাতায়–কলমে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও এড়ানো গেল না ভোট–সন্ত্রাস! বিরোধী এজেন্টদের মাথা ফাটিয়ে এদিন সন্ত্রাসের সূচনা হয় বীরভূমে। ইলামবাজারের ডুমরুট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঢুকতে গিয়ে বাধা পান সিপিএম–বিজেপির এজেন্টরা। প্রতিবাদ করলে নেমে আসে আক্রমণ। মারধরের জেরে জখম ৮। গ্রেফতার চার তৃণমূলকর্মী।
ইংরেজবাজারের অক্রুমণি হাইস্কুলের ১৬৩ নম্বর বুথটিকে আদর্শ ভোটকেন্দ্র ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। এদিন সেখানেই অন্য মহিলার হয়ে ভোট দিলেন তৃণমূলকর্মী! অপসারিত প্রিসাইডিং অফিসার। যদিও কমিশনের দাবি, ‘মক পোলিং’ চলাকালীন এমনটা হয়েছে, তখনও ভোট শুরু হয়নি। যেহেতু ঘটনার ছবি ক্যামেরাবন্দি হয়েছে, তাই প্রিসাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুজাপুরের ১৫৬ নম্বর বুথ দখলে অভিযুক্ত হয়েছে তৃণমূল। পোলিং এজেন্ট পরিচয় দেওয়া তিনজনের কাছে ভোটার লিস্ট ছিল। ক্যামেরা দেখেই পালায় বাকি তিনজন! কোন দলের এজেন্ট, প্রশ্ন করা হলে বলতে পারেনি একজন। প্রার্থীর নাম কী, প্রশ্ন করা হলে দেখে নাম বলেন তিনি।
অভিযোগ, লাভপুরের দরবারপুরে প্রিসাইডিং অফিসারের পাশে বসে ভোট করান তৃণমূল নেতা শোয়েব আলি! তৃণমূলের পোলিং এজেন্ট বলে দাবি করে তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন প্রিসাইডিং অফিসার। পরিচয়পত্র দেখাতে ব্যর্থ তৃণমূল নেতা। আলিপুরদুয়ারে ১৩১ নম্বর বুথের গেটে অনুগামীদের নিয়ে টহল দেন জেলা তৃণমূল নেতা। একজনের বুকে ছিল তৃণমূলের প্রতীক। বিরোধী ভোটারদের ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ভোট দিতে আসার সাফাই দেন তৃণমূল নেতা।
ইটাহারের কাপাসিয়ায় ভোটারদের বুথে যেতে বাধা দেয় বহিরাগতরা। হঠিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। বুথ জ্যামের চেষ্টার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার করে তারা। রাজগঞ্জের কুকুরজানে সিপিএম সমর্থক ভোটারদের বুথে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ছাপ্পা ভোটে মদত ও ভোটকেন্দ্রে অশান্তি সৃষ্টির অভিযোগ। গোয়ালপোখরের ১০১ নম্বর বুথের বিজেপি পোলিং এজেন্ট গ্রেফতার। শিলিগুড়িতে সিপিএম প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্যর সামনেই ভোটারদের চোখ রাঙান তৃণমূল নেতা। পরে তাঁকে সরিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। ইংরেজবাজারে ১৯৬ ও ১৯৭ নম্বর বুথের ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বাধা দিলে আক্রান্ত কাউন্সিলর–সহ বেশ কয়েকজন সিপিএম কর্মী। ইংরেজবাজার আইটিআই কলেজের ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টার অভিযোগ ঘিরে সংঘর্ষ। তৃণমূল–সিপিএম সংঘর্ষে জখম ২।
পরিবারের অন্যদের হয়ে ভোট দেওয়ার দাবিতে লাভপুরের ১১৬ ও ১১৭ নম্বর বুথে তাণ্ডব তৃণমূলকর্মীদের। ইটের আঘাতে মাথা ফাটে পুলিশকর্মীর। কেন্দ্রীয় বাহিনীর গাড়ি ভাঙচুর। নানুরের সিমাইতের একটি বুথে সিপিএমের পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ঢুকতে বাধা। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর হস্তক্ষেপে বুথে ঢুকতে পারেন সিপিএমের পোলিং এজেন্ট ও ভোটাররা। অভিযোগ অস্বীকার তৃণমূলের।
ভোট শুরুর আগে রায়গঞ্জের সেবক পল্লিতে আক্রান্ত হয় কংগ্রেস। অস্থায়ী ক্যাম্প ও কংগ্রেস কর্মীদের বাড়িতে ভাঙচুর। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে কংগ্রেস সমর্থকদের হুমকির অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এজেন্টদের পরিচয়পত্র নিয়ে বচসার জের। জলপাইগুড়ি রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়ের বুথের বাইরে কংগ্রেস ও সিপিএম কর্মীদের মারধর তৃণমূলের।
শিলিগুড়ি হিন্দি গার্লস হাইস্কুলের বুথে বাম প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্যকে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ। ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিপিএম–তৃণমূল হাতাহাতি। হেমতাবাদের ঠাকুরবাড়িতে বিজেপি কর্মীকে মারধর। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। নকল ইভিএম নিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ। গ্রেফতার ইটাহারের তৃণমূলপ্রার্থীর পোলিং এজেন্ট। তৃণমূল ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ। প্রতিবাদ করলে হাসানের উজিরপুরে তৃণমূলকর্মীদের সঙ্গে গ্রামবাসীদের ধস্তাধস্তি। তৃণমূল নেতার গাড়ি ভাঙচুর। সরকারি প্রকল্প থেকে নাম বাদ যাবে। তৃণমূল নেতাদের এই হুমকি উপেক্ষা করেই গ্রামপাহারায় নামেন রামপুরহাটের আরান্দা গ্রামের বাসিন্দারা।
আজ ভোটগ্রহণ হয় ৭ জেলার মোট ৫৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে । এর মধ্যে রয়েছে আলিপুরদুয়ারের ৫টি, জলপাইগুড়ির ৭টি, দার্জিলিঙের ৬টি, উত্তর দিনাজপুরের ৯টি, দক্ষিণ দিনাজপুরের ৬টি, মালদহের ১২টি ও বীরভূমের ১১টি বিধানসভা কেন্দ্র। ভাগ্য নির্ধারণ হবে ৩৮৪ জন প্রার্থীর। সকাল ১১ টা পর্যন্ত বীরভূমে ভোট পড়েছে ৪৪.৮৮ শতাংশ, উত্তর দিনাজপুরে ৩৬.০৬ শতাংশ, দক্ষিণ দিনাজপুরে ৪০.০৮ শতাংশ,

