BRAKING NEWS

বন্ধুত্বের চরম পরীক্ষা

Congress CPIMকংগ্রেস আছে কংগ্রেসেই৷ এই দল আর কিছু করিতে সমর্থ হউক বা না হউক নিজের নাক কাটিয়া দলের অপর গোষ্ঠীর যাত্রা ভঙ্গ করিতে উস্তাদ৷ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিনহা বুধবার সাংবাদিক সম্মেলন ডাকিয়া বিরোধী দলনেতা সুদীপ রায় বর্মনের দাবীকে নস্যাৎ করিয়া দিলেন৷ বিরোধী নেতা বিধানসভার লবিতে বীরজিৎ সিনহাকে পাশে বসাইয়া সাংবাদিক সম্মেলন করিয়া অভিযোগ করিয়াছিলেন যে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিমল সিনহা হত্যার পিছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার দায়ী৷ কারণ, বিমল মুখ্যমন্ত্রীর দাবীদার ছিলেন৷ জীবদ্দশায় একটি পত্রিকা অফিসে তিনি নাকি আক্ষেপ করিয়া বলিয়াছিলেন আঠারজন বিধায়ক তাঁহার পক্ষে থাকা সত্বেও তিনি মুখ্যমন্ত্রী হইতে পারিলেন না৷ আর ‘মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্ণ দেখিবার’ অপরাধেই বিমল সিনহা খুন হইয়া গেলেন৷ বিরোধী দলনেতার এই অভিযোগ ঘিরিয়া সিপিএম পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়িয়া বলিয়াছেন প্রমাণ দিতে না পারিলে সুদীপ বর্মন ও রতন নাথরা বিধায়ক পদ হইতে পদত্যাগ করুন৷ এই যখন অবস্থা, বিধানসভা যখন উত্তপ্ত, তখন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিনহা আরেক ধাপ আগাইয়া কি সুদীপ বর্মনের অভিযোগকে ম্লান করিতে চেষ্টা করিলেন না? বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিমল সিনহার মৃত্যুর জন্য তিনি নিজেই দায়ী বলিয়া মন্তব্য করিয়াছেন৷ অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে দায়ী করিয়া সুদীপ বর্মন যে গুরুতর অভিযোগ তুলিয়াছেন তাহাকেই বীরজিৎ সিনহা কার্য্যত নাকচ করিয়া দিলেন৷ গোষ্ঠী রাজনীতি কংগ্রেসকে কোথায় নিয়া গিয়াছে এই ঘটনা তাহার জ্বলন্ত উদাহরণ বলিলে বোধহয় ভুল বলা হইবে না৷ ইউসুফ কমিশনের রিপোর্টে বিমল সিনহা হত্যার পিছনে জঙ্গী যোগই যে মুখ্য তাহার বর্ণনা যেমন আছে, তেমনি তদন্তে পুলিশ ও রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার বিষয়ও উল্লেখ রহিয়াছে৷ তবু, কমিশন চাঞ্চল্যকর বহু তথ্য দেওয়ার কারণেই যে দীর্ঘ ষোল বছর রাজ্য সরকার রিপোর্ট চাপিয়া রাখিয়াছিলেন তাহাও স্পষ্ট৷ হাইকোর্টের দাবড়ানি খাইয়া রিপোর্ট প্রকাশের পর বিরোধী কংগ্রেসের গোষ্ঠী রাজনীতির কারণে বাম সরকার ও সিপিএম দল অনায়াসে পাড় পাইয়া যাইবে সে বিষয়ে সন্দেহ নাই৷
বিমল সিনহার হত্যাকান্ডের পরই কংগ্রেস সিবিআই তদন্তের দাবী জানাইয়াছিল৷ কিন্তু সেদিন এই দাবীও বাম সরকার প্রত্যাখান করিয়া চাপে পড়িয়া তদন্ত কমিশন গঠন করেন৷ দুই হাজার সালে রিপোর্ট জমা পড়িলেও এই রিপোর্ট প্রকাশ না করিয়া সম্পূর্ণ অনৈতিক কাজের নজীর হইয়াছে৷ প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিমল সিনহার এই কলংক জনসাধারণ্যে প্রকাশ হইলে দলের ও সরকারের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশংকাতেই রিপোর্ট চাপিয়া যাওয়ার অনৈতিক পথেই হাটিয়াছে বাম সরকার৷ এতবড় ঘটনাকে কংগ্রেসের গোষ্ঠী রাজনীতি ও গোপন সমঝোতার কারণে অনায়াসে সিপিএম বা বাম সরকার স্বমহিমায় উৎরাইয়া যাইবে সন্দেহ নাই৷ এতবড় ঘটনা সম্পর্কে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপি দল কিন্তু একেবারে মৌনংব্রত পালন করিয়া যাইতেছে৷ যেখানে কংগ্রেস সিপিএম দোস্তি৷ এই লড়াইও যে লোক দেখানো তাহাও জনসাধারণের মনে সন্দেহ জাগা অস্বাভাবিক নহে৷ বিরোধী নেতা যে অভিযোগ তুলিয়া পাদ প্রদীপের আলোতে উজ্জল হইয়া উঠিয়াছেন, সেখানে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পিছনে থাকিবেন কি করিয়া? তিনিও সাংবাদিক সম্মেলন করিয়া বিরোধী নেতার চাইতেও গলার সুর চাড়াইলেন৷ বিমল হত্যার বিষয়ে রাজ্য সরকার সব জানিয়াও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া ইত্যাদি, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং মূল রহস্য উদ্ঘাটনে সিবিআই তদন্তের দাবীতে ১৮ই এপ্রিল চবিবশ ঘন্টার ত্রিপুরা বন্ধ ডাকিয়া রাজনীতির তেমন ফায়দা যে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ঘরে তুলিতে পারিবেন না তাহা স্পষ্ট৷
সিপিএম ‘কংগ্রেসের কুৎসার’ বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ময়দানে নামিয়া পড়িয়াছে৷ অন্যদিকে ক্ষীণবল কংগ্রেসের সহজ পথ বন্ধের ঘোষণা দেওয়া৷ বীরজিৎবাবুরা ভাল করিয়া জানেন যে, তাহাদের পায়ের তলার মাটি নাই৷ পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস-সিপিএম দোস্তি আর ত্রিপুরাতে কি দুশমন হইয়া থাকিতে পারিবেন? বীরজিৎ বাবু, সুদীপ বাবুদের চাকুরীই নট হইয়া যাইবে৷ ত্রিপুরায় ধরাশায়ী কংগ্রেস সামান্য হইলেও উঠিয়া দাঁড়াইতে পারে কিনা কিংবা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়া যায় কিনা সেই লক্ষ্যই তো তাঁহাদের কাছে মুখ্য৷ আর এজন্যই একদিনের কর্মনাশা বন্ধ ডাকিয়া রাজনীতির দৈন্যতাই প্রকাশ করিয়া দিলেন বীরজিৎ বাবুরা৷ সিবিআই তদন্তের দাবীতে কংগ্রেস কোথাও একটি মিছিল, পথসভা বা বিক্ষোভ আন্দোলন করিতে পারিয়াছে? আসলে, কংগ্রেসে নেতাদের মধ্যে ন্যুনতম বুঝাপড়া নাই৷ নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে যে সিদ্ধান্ত হয় না তাহার বহু প্রমাণ আছে৷ বিমল সিনহা হত্যার পরই যে সিবিআই তদন্তের দাবী বাম সরকার নস্যাৎ করিয়া দিয়াছিল আজ কমিশনের রিপোর্ট পাইবার পর সিবিআই যে বাম সরকার কোনও অবস্থাতেই মানিবে না তাহাও বীরজিৎ বাবুরা ভাল করিয়া জানেন৷ আর ঘটনার ১৮/১৯ বছর পর সিবিআই তদন্তও অর্থহীন হইবে৷ অনেক তথ্য ইত্যাদি তো আর পাওয়া অসম্ভব৷ অনেকেই পৃথিবীতে নাই৷ সুতরাং এখন সিবিআই তদন্তের দাবীর যৌক্তিকতা কতখানি এই প্রশ্ণ উঠিতে পারে৷ কংগ্রেস-সিপিএম যেখানে ভাই ভাই সেখানে ত্রিপুরায় অন্য ভুমিকাকে কি লোক দেখানো নাটক বলিয়া ভাবিলে অন্যায় হইবে? ত্রিপুরার মানুষই শুধু নহে দেশের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ এই বন্ধের রাজনীতির ঘোর বিরোধী৷ গণতান্ত্রিক পথে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচীর বিন্দুমাত্র ক্ষমতা যে দল হারায় সেই দলই বন্ধ ডাকিয়া অস্তিত্বের জানান দেয়৷ বন্ধ ডাকিবার আগে বীরজিৎ বাবুরা কি সব বিষয় ভাবিয়া দেখিয়াছেন? কারণ সিপিএম ময়দানে প্রচারে নামিয়া গিয়াছে৷ কংগ্রেস তো ময়দানে নাই৷ বন্ধ এখন আর মানুষ চোখ বুঝিয়া মানিয়া নেয় না৷ সিপিএম তো ময়দানে থাকিয়া বন্ধের বারোটা বাজাইবেই৷ কংগ্রেস নেতারা ঘরে বসিয়া তামাসা দেখিবেন? কথায় আছে ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না৷ ইউসুফ কমিশনের রিপোর্ট ও বিমল হত্যায় মুখ্যমন্ত্রীর হাত থাকিবার অভিযোগ তুলিয়া বিরোধী নেতা যে পথে হাটিতে চাহিয়াছেন বীরজিৎ সিনহা উল্টো পথ ধরিয়াছেন৷ আসলে, ইউসুফ কমিশনের রিপোর্টের বিস্ফোরক তথ্যে কার্য্যত কংগ্রেস জল ঢালিয়া দিয়া বন্ধুত্বের চরম পরীক্ষায় নয়া ইতিহাস সৃষ্টি করিলেন৷ দলের হাইকমান্ড সেই বীরজিৎ বাবুদের হাতেই এরাজ্যে কংগ্রেস সিপিএম ঐক্য মজবুত হইবার সম্ভাবনায়, আরও বেশী উজ্জীবনী শক্তির অধিকারী হইতে পারেন, সে বিষয়ে বোধহয় সন্দেহ নাই৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *