BRAKING NEWS

রেগা শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধির দাবীতে প্রতিনিধি দল দিল্লির দরবারে যাবে, বর্মনের প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ, বীরজিৎ বাবুকে মুখ্যমন্ত্রীর অভিনন্দন, বিধাসনভায় দোস্তির আবহ

TLAনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ মার্চ৷৷ রেগা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে বিধানসভায় এক সুর শাসক ও বিরোধী কংগ্রেসের৷ বিরোধী দলনেতা সুদীপ রায় বর্মনের প্রস্তাব প্রায় লুফে নিয়ে এক কথায় রাজী হয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ সেই মতো এক প্রতিনিধি দল দিল্লিতে দরবার করার জন্য যাবেন সেই প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হয়৷ শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর সুপারিশে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী নরেশ জমাতিয়ার নেতৃত্বে সেই প্রতিনিধি দলে থাকবেন বিরোধী দলনেতা সুদীপ রায় বর্মনও৷ এদিন, রেগা শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধি নিয়ে বিধানসভায় দৃষ্টি আকর্ষনী নোটিশ আনার জন্য কংগ্রেস বিধায়ক বীরজিৎ সিনহাকে অভিনন্দন জানান মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷
রেগা শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধির দরবারে দিল্লিতে টিম পাঠানোর জন্য সুদীপ রায় বর্মনের প্রস্তাব যেমন মুখ্যমন্ত্রী তৎক্ষনাত মেনে নেন৷ তেমনি দৃষ্টি আকর্ষনী নোটিশ আনার জন্য কংগ্রেস বিধায়ক বীরজিৎ বাবুকে অভিনন্দন জানানোর ঘটনাও অনেকটাই অর্থবহ৷ বিরোধীদের প্রতি শাসক দলের এমন দরাজ অবস্থান ইতিপূর্বে দেখা যায়নি৷
মঙ্গলবার বিধানসভা অধিবেশনে বীরজিৎবাবুর দৃষ্টি আকর্ষনী নোটিশের জবাবে শ্রমমন্ত্রী সহীদ চৌধুরী জানান, রাজ্যে বর্তমানে কৃষি শ্রমিকদের মজুরী ২৭১ টাকা, কিন্তু রেগা শ্রমিকদের মজুরী ১৬৭ টাকা৷ এনিয়ে দিল্লিতে বহু দরবার করা হলেও কেন্দ্রীয় সরকার রেগা শ্রমিকদের মজুরী কৃষি শ্রমিকদের মজুরীর সমান করছে না৷ তাতে বিরোধী দলনেতা সুদীপ রায় বর্মন রেগা আইনের উল্লেখ করে জানান, আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, রেগা শ্রমিকদের মজুরী নির্ভর করবে সে রাজ্যের কৃষি শ্রমিকদের মজুরীর উপর৷ কিন্তু, রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কৃষি শ্রমিকদের মজুরী উল্লেখ করে সঠিকভাবে তদ্বির করছে না যার কারণে রেগা শ্রমিকদের মজুরীও বৃদ্ধি হচ্ছে না৷ এরজন্য তিনি গ্রামোন্নয়ন দপ্তরকেও দায়ী করেন৷ তাতে, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী তথ্য তুলে ধরে জানান, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে কৃষি শ্রমিকদের মজুরী ছিল ১৫০ টাকা, কেন্দ্র রেগা শ্রমিকদের জন্য মজুরী বরাদ্দ করেছে ১৩৫ টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে কৃষি শ্রমিকদের মজুরী ছিল ১৬৯ টাকা, কেন্দ্র রেগা শ্রমিকদের জন্য মজুরী বরাদ্দ করেছে ১৫৫ টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে কৃষি শ্রমিকদের মজুরী ছিল ২৫০ টাকা, কেন্দ্র রেগা শ্রমিকদের জন্য মজুরী বরাদ্দ করেছে ১৬৭ টাকা৷ কিন্তু কোনসময়ই রাজ্যের দাবী মেনে কৃষি শ্রমিকদের সমান মজুরী রেগা শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ করছে না কেন্দ্র৷ এবছর কৃষি শ্রমিকদের মজুরী নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭১, কিন্তু রেগা শ্রমিকদের জন্য কি মজুরী মঞ্জুর করে সেটাই এখন দেখার বিষয় বলে জানান তিনি৷
এই দৃষ্টি আকর্ষনী নোটিশের আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেন, প্রথম যখন রেগা রাজ্যে চালু হয় তখন সারা দেশে রেগার মজুরী একই হারে ছিল৷ কিন্তু এক পর্যায়ে দেখা যায় বিভিন্ন রাজ্যে পৃথক পৃথক হারে মজুরী দেওয়া হচ্ছে৷ কেরালায় সবচেয়ে মজুরী দেওয়া হয় রেগা শ্রমিকদের৷ কারণ সেখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচুর কাজের সুযোগ রয়েছে যেখানে রেগার মজুরীর থেকে অনেক বেশী মজুরী পান শ্রমিকরা৷ ফলে সেখানে রেগায় কাজ করার শ্রমিক পাওয়া যায় না৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, ত্রিপুরা সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার কৃষি শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরীর হারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তা রেগার ক্ষেত্রে চালু করার দাবী জানানো হয়েছে৷ কিন্তু এই দাবী মানে নি কেন্দ্রীয় সরকার৷ এসমস্ত দিক বিবেচনা করে মুখ্যমন্ত্রী এদিন এবিষয়ে দিল্লিতে দরবার করার জন্য রাজ্য বিধানসভা থেকে একটি সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব পাঠানোর জন্য সুপারিশ করেন৷ তাতে এক কদম এগিয়ে বিরোধী দলনেতা রাজ্য থেকে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর প্রস্তাব দেন৷ তিনি বলেন, যেহেতু সংসদে বাজেট অধিবেশন চলছে, সে মোতাবেক রাজ্যের প্রতিনিধি দল কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর সাথে দেখা করে রেগা শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধির দাবী জানালে তাতে ইতিবাচক সাড়া মিলতেও পারে৷ মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে তা গ্রহণ করে বলেন, গ্রামোন্নয়নমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিরোধী দলনেতা এবং একজন আধিকারীকের প্রতিনিধি দল খুব সহসাই দিল্লির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবেন৷ সম্ভব হলে রাজ্য বিধানসভার চলতি বাজেট অধিবেশনের সময়ই এবিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীকে বলেন৷ পাশাপাশি এও বলেন, এই প্রতিনিধি দল দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সাথে দেখা করে একটি রিপোর্ট যাতে রাজ্য বিধানসভায় পেশ করেন৷ পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস সিপিএমের বন্ধুত্বের পরিপ্রেক্ষিতে ত্রিপুরাতেও যে সেই আবহাওয়া অনেকটাই তা রাজ্য বিধানসভায় লক্ষ্য করা গেছে বলে কোনও কোনও মহল মনে করছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *