সুবিন্যস্ত চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে ডাক্তারদের পরামর্শ মুখ্যমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ মার্চ৷৷ একদিকে শিক্ষা ও অন্যদিকে স্বাস্থ্য – এ দুটো বিষয়েই রাজ্যের মানুষের কল্যাণে সরকার অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে৷ দুটো বিষয়ই মানুষের সাথে যুক্ত৷ সমাজ ও সভ্যতার ধারক ও বাহক৷ আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ২ নং হলে ইন্ডিয়ান মেডিকেল এসোসিয়েশনের, ত্রিপুরা রাজ্য শাখার ৪৬তম অল ত্রিপুরা মেডিকেল কনফারেন্সের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার একথা বলেন৷ সম্মেলনের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে DSC_0868স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন অনেকটাই হয়েছে৷ দেশের অন্যান্য রাজ্যের সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে আমরা খুব একটা পিছিয়ে নেই৷ তিনি বলেন, রাজ্যের ডাক্তাদের সচেতনভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে৷ যাতে রোগীরা এখানেই পরিষেবাটা পান৷ পরিকাঠামোর যা উন্নতি হয়েছে তাকে কাজে লাগাতে হবে৷ অনেক প্রবীণ ডাক্তাররাই মনে করেন আমাদের যা পরিকাঠামো রয়েছে তাতে আরও ভালো পরিষেবা দেওয়া যায়৷ এই বিষয়টা আই এম এ কে ভেবে দেখতে হবে৷ তিনি  বলেন, আই এম এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করুক৷ উদ্যোগ নিক৷ যাতে পদ্ধতিটা কার্যকর হতে পারে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে৷ রয়েছে পাকা বাড়ী প্যারামেডিকেল স্টাফ দেওয়া হয়েছে৷ প্রাথমিক স্বাস্থ্য্য কেন্দ্র রয়েছে ৯৫টি৷ আরও ৩০ টির মতো প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র হবে৷ রয়েছে কমিউনিটি হেলথ সেন্টার৷ তিনি বলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিই হচ্ছে চিকিৎসা পরিষেবার মূল ভিত৷ এই ক্ষেত্রে চিকিৎসকগণ সুবিন্যস্ত চিকিৎসা পরিষেবা দিতে পারলে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করা যাবে৷ জুনিয়র চিকিৎসকদের সাহসী করে তুলতে হবে৷ যাতে প্রতিষ্ঠানিক প্রসবে কোন ভীতি না থাকে৷ মা ও নবজাতককে সুস্থ ও নিরাপদ রাখতে এটা জরুরী৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে আমাদের সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য রয়েছে৷ কেন্দ্রীয় বাজেটে ৩৫টি জীবনদায়ী ঔষধের দাম বাড়ানো হয়েছে৷ এতে দারুন অসুবিধা হবে মানুষের৷ সেখানে আমরা চাইছি হাসপাতালে আরও তিন চারটি ঔষধ দেওয়া যায় কি না৷ গতকাল বিধানসভায় যে বাজেট পেশ হয়েছে তাতে এজন্য অতিরিক্ত অর্থ রাখার প্রস্তাব রয়েছে৷ স্বাস্থ্য পরিষেবায় মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতালের পরিষ্কার -পরিচ্ছন্নতার উপরও গুরুত্ব আরোপ করেছেন৷
সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরী বলেন, আই এম এ এমন একটি সংগঠন যার পরিচয় রয়েছে সারা দেশেই৷ মানুষের স্বার্থে স্বাস্থ্য নীতি নিয়ে এই সংগঠন কাজ রয়েছে৷ নানা সামাজিক দায়িত্বও তারা পালন করেন৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যখন স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো ক্ষেত্রও কর্পোরেটদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত, সেখানে সীমিত ক্ষমতায় রাজ্যে আমাদের সরকার সকলের জন্য স্বাস্থ্য নীতি নিয়ে কাজ করছে৷ এই কর্মসূচী রূপায়নের সূফল আমরা পাচ্ছি৷ তিনি বলেন, রাজ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব মেটানোর জন্য প্রচেষ্টা জারি রয়েছে৷ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অর্গানাইজিং চেয়ারম্যান ডা, এস আর দেববর্মা৷ বক্তব্য রাখেন মেডিকেল এডুকেশনের  অধিকর্তা ডা, বাসুদেব ভট্টাচার্য্য, স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা, জে কে দেববর্মণ, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধক দপ্তরের অধিকর্তা ডা, কে এল ভৌমিক৷ সম্মেলনে রাজ্যের ১২১ জন প্রবীণ চিকিৎসককে সংবর্দ্ধনা জানানো হয়৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার তাদেরকে মানপত্র, পুষ্পস্তবক ও উত্তরীয় দিয়ে সংবর্দ্ধনা জ্ঞাপন করেন৷ সংবর্দ্ধনা পেলেন ডা, পি কে ভট্টাচার্য্য, ডা, নিরোদ দাস, ডা, বি কে সাহা, ডা, পরিতোষ গাঙ্গুলী, ডা, গৌতম রায়চৌধূরী, ডা, স্বপন দেব গুপ্ত, ডা, সুকুমার দেবনাথ, ডা, মধুসূদন মজুমদার, ডা, অনিমে, ঘোষ, ডা, জীবন চক্রবর্তী, ডা, এম এম দাস ও ডা, হীতাংশু ভট্টাচার্য্য৷ সম্মেলন উপলক্ষে স্মরণিকার অনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরী৷ দেওয়া হয়েছে ডা, কুশাঙ্ক দেববর্মণ স্মৃতি ফ্রি পেপার প্রেজেনটেশন পুরষ্কার৷ এক্ষেত্রে প্রথম পুরষ্কার পেয়েছেন ডা, অর্কদীপ চৌধুরী, দ্বিতীয় পুরষ্কার পেয়েছেন ডা, সুবর্ণা ভট্টাচার্য্য এবং যুগ্মভাবে তৃতীয় পুরষ্কার পেয়েছেন ডা, অনামিকা দাস ও ডা, হর্ষ এইচ লাঠিয়া৷ আই এম এ এওয়ার্ড পেয়েছে ডা, শিব শেখর দত্ত এবং বেষ্ট পোষ্টার প্রেজেনটেশন পুরষ্কার পেয়েছেন  ডা, অনামিকা নাথ৷ তাদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরী৷ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ডা, প্রদীপ ভৌমিক৷