ত্রিপুরার রাজনীতির আকাশকে ঘোর অন্ধকার গ্রাস করিতেছে৷ রাজ্যে রাজণ্য শাসনের অবসানের পরই গণতন্ত্রের জয়যাত্রায় যে দল বিজয় রথ চালাইয়াছিল সেই দল কংগ্রেস৷ ত্রিপুরায় পঞ্চাশের দশকে কংগ্রেসের একচ্ছত্র আধিপত্যের ইতিহাস৷ তিলে তিলে ক্ষয়িষ্ণু দশায় রূপান্তরীত হইবে তাহা তো ভাবা যায় নাই৷ আজ প্রাচীনতম এই দলটি ত্রিপুরায় প্রায় নিশ্চিহ্ণের পথে৷ এতকাল এই দলে থাকিয়া যাহারা দুধ ঘি খাইয়া বর্ধিত হইয়াছেন তাহাদের অনেকেই আজ ভিন্ন দলে নাম লিখাইয়াছেন৷ অনেক লড়াকু নেতা কর্মী দল ছাড়িয়াছেন৷ কেহ বিজেপিতে যোগ দিয়াছেন, কেহ তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিবার প্রশ্ণে উদ্যোগ জারী রাখিয়াছেন৷ এ রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস যেন চিরনিদ্রায় শায়িত৷ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনী যুদ্ধ নিয়া দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন ব্যতিব্যস্ত৷ প্রার্থী মনোনয়ন নিয়া চলিতেছে ঝড়ের দাপট৷ এই ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতিও চলিতেছে৷ সুতরাং ত্রিপুরায় দলকে ঘুম পাতাইয়া পশ্চিমবঙ্গ নিয়াই সর্বশক্তি নিয়োগে ঝাপাইয়া পড়িয়াছেন৷ ত্রিপুরায় কংগ্রেসের ঘর এখন শূন্য হইবার কি কারণ তাহা সকলেই কমবেশী জানেন৷ সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের জোটের চেষ্টার সংবাদ যে প্রকৃত কংগ্রেসীদের মারাত্মকভাবে আহত করিয়াছে সে বিষয়ে সন্দেহ নাই৷ আর এজন্যই ত্রিপুরায় কংগ্রেসের হাল একেবারেই বেহাল হইয়া গিয়াছে৷ এই অবস্থার পুরো সুযোগ বিজেপিও নিতে পারিয়াছে বা পারিবে বলিয়া মনে হয় না৷ কারণ এই দলেরও রাজ্যস্তরে তেমন জনপ্রিয় নেতা নাই৷ কংগ্রেস ছাড়িয়া এই দলে আশ্রয় নিয়াছেন তাহাদেরও জনভিত্তি তেমন নাই৷ এই পরিস্থিতিতে সারা দেশে বামেদের প্রভাব ক্ষুন্ন হইলেও ত্রিপুরায় জয়যাত্রা অব্যাহত থাকিতেছে ইহা কম কথা নহে৷ রাজনীতির আকাশে চলিতেছে ঘূর্ণাবর্ত৷ ইহাতে রাজ্যের রাজনীতিতে ঝড়ের সংকেত কি লক্ষ্য করা যাইতেছে?
প্রদেশ বিজেপির নতুন সভাপতি জাম্বু কমিটি গঠন করিয়াছেন৷ ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য জয়ের স্বপ্ণ ঘোষণা করিয়াছেন৷ কিন্তু দেড় দুই বছরের মধ্যেই গ্রাম পাহাড়ে এই গেরুয়া পার্টি শিকড় পঁুতিতে পারিবে? সংগঠন তৃণমূল স্তরে গড়িয়া তোলা যাইবে? কংগ্রেস ত্যাগীরা বিজেপি ও অন্যান্য দলে যোগ দিয়া কতখানি সাফল্য কুড়াইবেন, সেই রাজনীতির হিসাব হতাশ করিবে না তো? ত্রিপুরায় ভারতীয় জনতা পার্টির দীর্ঘ ইতিহাসেও জনমনে তেমন রেখাপত করিতে পারিয়াছে এমন দাবী করা যাইবে না৷ পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভার নির্বাচনী ফলাফলের উপরও ত্রিপুরার রাজনীতির নতুন দিশা দেখা যাইতে পারে৷ পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস-সিপিএম জোটের এই বার্তা উভয় দলের ক্ষতি যাহা করিবার তাহা সম্পন্ন করিয়াছে৷ সেই বঙ্গে বিজেপি কি কিছু মাটি পাইবে? যদি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির উত্থান হয় তাহা হইলে ত্রিপুরায় প্রভাব পড়িতে পারে৷ আর যদি বঙ্গে বিজেপি একেবারেই খালি হাত হইয়া পড়ে তাহা হইলে ত্রিপুরায় তাহার বিরূপ প্রভাব পড়িবে সে বিষয়ে সন্দেহ নাই৷ আর ইহা অনেকাংশেই সত্যি যে, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির দোলা ত্রিপুরাকে প্রভাবিত করে৷ কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের উত্থান সত্বেও ত্রিপুরায় একথাও সর্বাংশে মানিয়া নেওয়া যাইবে না যে, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির প্রভাব ত্রিপুরায় আছড়াইয়া পড়ে৷ একথা হয়তো জোর দিয়া বলা যাইতে পারে যে, ত্রিপুরায় সিপিএমের প্রতিদ্বন্দ্বি হিসাবে বিজেপির উঠিয়া আসা সহজ কাজ নহে৷ সাম্প্রতিক কালেও বহু কংগ্রেস কর্মী সিপিএম দলে যোগ দিয়াছেন৷ তাহারা কত শতাংশ বিজেপির ঘরে নাম লিখাইয়াছেন সেই হিসাব নিতে পারিলেই রাজনীতির অংক কষা সহজ হইবে৷ একথা ভুলিয়া গেলে চলিবে না যে, ত্রিপুরায় সিপিএম প্রতিনিয়ত মাটির সঙ্গে থাকিতেছে৷ বিজেপি নেতা কর্মীরা তাহার সামান্য ধারে কাছে না থাকিয়াই স্বপ্ণ দেখা শুরু করিয়া দিয়াছেন৷ স্বপ্ণ দেখা ভাল৷ সেই স্বপ্ণের বাস্তবায়নে উদ্যোগ কতখানি? জাম্বু কমিটির কয়জনের জনভিত্তি আছে? তাহাদের ব্যাক্তি ইমেজ কি গেরুয়া দলকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করিতে পারিবে?
2016-03-07