নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৫ মার্চ৷৷ একাংশ চা বাগান মালিকদের নেতিবাচক ভূমিকায় রাজ্যে চা-শিল্প মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না৷ ফলে বিরাট ক্ষতিগ্রস্থ চা শ্রমিকরাও৷ শনিবার আগরতলায় চা-শিল্প বিষয়ক এক কর্মশালায় চা বাগান মালিকদের বিরুদ্ধে এভাবেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ তবে যারা চা বাগানের নাম করে জমি নিয়ে এর সদ্বব্যবহার করছেন না তাঁদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, রাজ্য সরকার সেই সমস্ত জমি পতিত জমি হিসেবে চিহ্ণিত করা হবে৷ ইতিমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে৷ কিন্তু সবচেয়ে অবাক করেছে কলকাতা স্থিত টি বোর্ডের অধিকর্তা সুন্দরাজনের দেওয়া তথ্য৷ তাঁর মতে, জাতীয় গড়ের মাত্র ১ শতাংশ চা রাজ্যে উৎপাদিত হয়৷ ফলে চা শ্রমিকদের চাহিদা অনুযায়ী সুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না৷ কিন্তু তাঁর দাবি, রাজ্যে এখনো এই শিল্পের সম্ভাবনা উজ্জ্বল৷ অবশ্য এর পেছনে তিনি রাজ্যের ভৌগলিক অবস্থানকেও চা শিল্পের রুগ্ণ দশার পেছনে আংশিক দায়ি করেছেন৷
তবে চা-শিল্পের মেরুদন্ড শক্ত করার প্রশ্ণে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ করে চা-বাগান মালিকদেরই সজাগ করার চেষ্টা করেছেন৷ তাঁর বক্তব্য, চা বাগানের নাম করে জমি নিয়ে অপব্যবহার করলে সরকার চুপ করে বসে থাকতে পারে না৷ সারা ভারতে চা শিল্পে ত্রিপুরা পঞ্চম স্থানে রয়েছে৷ ফলে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি এর অগ্রগতির বদলে চা-শিল্পকে রুগ্ণ করে তুলতে চাইলে তার বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই সরকার পদক্ষেপ নেবে৷ মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বক্তব্য, পিছিয়ে পড়া রাজ্য হিসেবে চিহ্ণিত ত্রিপুরার শিল্প সম্ভাবনা শূণ্যের কোঠায়৷ অবশ্য রাজ্যের ভৌগোলিক অবস্থান এর জন্য দায়ী বলে মুখ্যমন্ত্রীর দাবী৷ সেক্ষেত্রে রাজ্যে চা শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা সত্বেও কেবলমাত্র জনাকয়েক বাগান মালিকদের গাফিলতির কারণে এই শিল্প বেড়ে উঠতে পারছে না বলে তিনি উষ্মা প্রকাশ করেন৷
চা বাগান মালিকদের উদ্দেশ্যে তাঁর পরামর্শ, বাগানের পরিচর্যা করুন সঠিকভাবে৷ ৪০/৪৫ বছর আগে লাগানো চারা গাছ আজও একইভাবে ফলন দিবে তেমনটা ভাবা উচিৎ নয়৷ সেক্ষেত্রে চা-শিল্পকে পুনুরুজ্জিবিত করতে চা-বাগান মালিকদের বিনিয়োগের প্রতি জোর দেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সময়ে নতুন নতুন প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে চা-শিল্পের বিরাট উন্নতি ঘটনো সম্ভব৷ তাতে বিনিয়োগ বিশেষভাবে প্রয়োজন৷ চায়ের নতুন চারাগাছ এবং বাগানে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করলে এই শিল্পে মুনাফা হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল৷ তাতে চা-বাগান মালিকদের পাশাপাশি উপকৃত হবেন চা-শ্রমিকরাও৷
মূলতঃ চা-শিল্প আজ সারা দেশে চ্যালেঞ্জের মুখে৷ সে বিষয়টির বিশেষ গুরুত্ব অনুধাবন করেই রাজ্যে আয়োজিত হয় চা-শিল্পের ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে এক কর্মশালা৷ দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, তামিলনাড়ু, কেরালা এবং ত্রিপুরায় চা-শিল্পের প্রসার রয়েছে৷ এই রাজ্যগুলির মধ্যে তামিলনাড়ু এবং কেরালায় বিশেষ কোন সমস্যা না থাকলেও, উৎকৃষ্টমানের চা’র জন্য প্রসিদ্ধ পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামে বর্তমানে দারুন চ্যালেঞ্জের মুখে শতাব্দি প্রাচীন এই শিল্পটি৷ এই রাজ্যে এর দশা আরও করুন৷ ১৯১৬ সালে হীরাছড়া চা বাগান দিয়ে ত্রিপুরায় যাত্রা শুরু হয়েছিল চা-শিল্পের৷ কলকাতাস্থিত টি-বোর্ডের অধিকর্তার সুন্দরাজনের মুখে হীরাছড়া চা বাগানের শতবর্ষ পূর্তির বিষয়টি শুনেই তাৎক্ষনিক শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরকে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন করার জন্য অনুরোধ জানান৷
তবে, এদিনের কর্মশালায় বিশেষভাবে উঠে এসেছে সম্ভাবনাময় চা-শিল্পটি কেবলমাত্র উদাসীনতার কারণে রাজ্যে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না৷ স্বাগত ভাষণে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব এম নাগারাজু বলেন, চা-বাগানের জন্য ১ লক্ষ ৪০ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে৷ এর মধ্যে মাত্র ৫২ শতাংশ জমিতে চাপাতার ফলন হচ্ছে৷ বাকি জমির সদ্বব্যবহার হচ্ছে না৷ রাজ্যে প্রায় ১২ হাজার শ্রমিক রয়েছেন যারা চা-শিল্পের উপরই নির্ভরশীল৷ কিন্তু এঁদের মধ্যে অনেকেই ভাল বেতন পাচ্ছেন না৷ তাঁর বক্তব্যেও এদিন ফুটে উঠেছে চা বাগান মালিকদের দৈন্যতা৷
2016-03-06