নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৯ মার্চ:
রাজ্যে রূপায়িত কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির কাজ গুণমান বজায় রেখে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে শেষ করতে হবে। প্রকল্প রূপায়ণকারী সংস্থাগুলিকে এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে কাজ করা আবশ্যক। প্রকল্পগুলির রক্ষণাবেক্ষণেও সংশ্লিষ্টদের গুরুদায়িত্ব রয়েছে। আজ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজ্যস্তরীয় দিশা কমিটির সভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। সচিবালয়ের ২নং সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এই সভায় অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়, সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য্য, বিধায়ক কিশোর বর্মন, বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা, বিধায়ক মনোজ কান্তি দেব, বিধায়ক শৈলেন্দ্র চন্দ্র নাথ, প্রধান মুখ্য বন সংরক্ষক আর কে. সামাল প্রমুখ উপস্থিত থেকে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। সভায় রাজ্যে রূপায়িত কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির বর্তমান অবস্থা, অগ্রগতি, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নতুন উদ্যোগসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সচিবগণ রাজ্যে চলমান কেন্দ্রীয় প্রকল্পসমূহের বর্তমান অবস্থার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
সভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে সরকার পরিচালনায় বিশ্বাস করে। জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে রূপায়ণে জনগণকে প্রকল্পসমূহের সুবিধা সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেসব সুবিধাগুলি রয়েছে তা রাজ্যের জনগণকে অবগত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, প্রকল্প রূপায়ণে কোনও ধরণের সমস্যা এলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে এগিয়ে যেতে হবে। সভায় মুখ্যমন্ত্রী বাল্য বিবাহ রোধে সমাজে আরও বেশি সচেতনতা বাড়াতে গুরুত্ব আরোপ করেন। সভায় সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য্য রাজ্যে রূপায়িত বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজগুলি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সচিবদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি রাজ্যের কৃষকদের উৎসাহিত করতে লেবু ও আনারসকে কেন্দ্র করে বাইরের ক্রেতাদের নিয়ে রাজ্যে একটি সামিট আয়োজন করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
সভায় গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং রাজ্যে রূপায়িত বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সহায়ক প্রকল্পগুলির বর্তমান অবস্থা সচিত্র প্রতিবেদনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০২১-২২ অর্থবর্ষ থেকে এখন পর্যন্ত রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (গ্রামীণ) ৩ লক্ষ ৭৬ হাজার ঘর অনুমোদিত হয়েছে।
এরমধ্যে ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার ঘর নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। শতাংশের নিরিখে তা ৯৮ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (গ্রামীণ) ২.০ রাজ্যে ২ লক্ষ ৫২ হাজার ঘরের সমীক্ষা ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। পিএম-জনমন প্রকল্পে রাজ্যে অনুমোদিত ১৭ হাজার ২৪১টি ঘরের মধ্যে ৮ হাজার ৯০৭টি অর্থাৎ ৫১ শতাংশ ঘর নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে প্রায় ৩.৪৯ কোটি শ্রমদিবসের কাজ হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে রাজ্যের জন্য ৩ কোটি ৫০ লক্ষ লেবার বাজেট অনুমোদিত হয়েছে। ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ১ হাজার ১৬২টি স্বসহায়ক দল গঠন ও পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। ১ লক্ষ ১৪ হাজার লাখপতি দিদি করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। সভায় নগরোন্নয়ন দপ্তরের সচিব জানান, আমরুত ২.০ প্রকল্পে ৮টি নগর এলাকায় পানীয়জল সরবরাহের কাজ চলছে। বাকি ১২টি নগর এলাকায় এডিবি-র অর্থানুকূল্যে পানীয়জল সরবরাহের কাজ চলছে। সভায় রাজ্যে স্বচ্ছ ভারত মিশন (আরবান) প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। স্মার্ট সিটি মিশন প্রকল্পে রাজ্যে ৬৫টি কাজের মধ্যে ৬২টি কাজ শেষ হয়েছে এবং বাকি ৩টির কাজ চলছে। মূলত বন্যা নিয়ন্ত্রণে এই প্রকল্পে কাজ করা হয়েছে। সভায় এন.এইচ.আই.ডি.সি.এল.’র প্রতিনিধি জানান, রাজ্যে ৩০৭ কিমি জাতীয় মহাসড়ক তৈরির কাজ চলছে। সভায় নির্মীয়মান জাতীয় সড়কগুলির পাশে পাকা ড্রেন সহ ভূমিয়স প্রবণ স্থানগুলিতে দেওয়াল নির্মাণে গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
সভায় পূর্ত দপ্তরের (পানীয়জল ও স্বাস্থ্যবিধান) সচিব ব্রিজেশ পান্ডে জানান, স্বচ্ছ ভারত মিশন (গ্রামীণ) ২.০ প্রকল্পে রাজ্যের ৭৪৭টি গ্রামকে ইতিমধ্যেই মডেল ভিলেজ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। জল জীবন মিশন চালু হওয়ার পর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত রাজ্যের গ্রামীণ এলাকার ৬ লক্ষ ৪২ হাজার ১৫৮-টি পরিবারে নলের মাধ্যমে পানীয়জলের সংযোগ পৌছে দেওয়া হয়েছে। শতাংশের নিরিখে তা ৮৫.৫২ শতাংশ। সভায় স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে জানান, আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় রাজ্যের ১৫ লক্ষ ৭২ হাজার জন এবং মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় ৪ লক্ষ ৯৪ হাজার জন আয়ুষ্মান কার্ড পেয়েছেন। সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের সচিব তাপস রায় রাজ্যে চালু সক্ষম অঙ্গনওয়াড়ি এবং পোষণ মিশন ২.০ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, রাজ্যে নতুন ৩৩৭টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালু করা হয়েছে এবং পিএম-জনমন প্রকল্পে আরও ৫৩টি নতুন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র নির্মাণের জন্য অনুমোদন পাওয়া গেছে। এছাড়াও তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের চালু সামাজিক ভাতাগুলির কথা উল্লেখ করেন। কৃষি দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায় জানান, ২০ হাজার ১৬১ হেক্টর এলাকা অর্গানিক সার্টিফাইড এরিয়া হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। রাজ্যের কৃষকদের জৈব চাষে উৎসাহিত করতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ১০টি অর্গানিক আউটলেট খোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঞ্চাই যোজনায় নতুন পুকুর খনন, পুরোনো পুকুর সংস্কার, পাম্প সেট বিতরণ ইত্যাদি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়াও প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা এবং রাজ্যে মিলেট উৎপাদনের প্রসারে সভায় আলোচনা করা হয়। তাছাড়াও নালকাটায় ন্যারামেক ফল প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করার উদ্যোগের বিষয়েও সভায় আলোচনা হয়। এছাড়াও সভায় রাজ্যে রূপায়িত প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সমৃদ্ধি যোজনা, পিএম সূর্যঘর, পি.এম.ই.জি.পি, পিএম-পোষণ (মিড-ডে-মিল), পি.এম.জি.এস.ওয়াই, ভারত নেট, প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা ইত্যাদি কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।