নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১২ জুলাই৷৷ ত্রিপুরা সহ পূর্বোত্তরের রাজ্যগুলিতে স্বাস্থ্য বিপ্লবের মুখোশ খুলে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব মনোহর আগনানি৷ তাঁর কথায়, স্বাস্থ্যখাতে কেন্দ্রের বরাদ্দ অর্থ এই অঞ্চলের রাজ্যগুলি খরচ করতে পারে না৷ তাই, কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে রাজ্য বরাদ্দ অর্থ খরচ করতে ব্যর্থ হবে, তাদের বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হবে৷
বৃহস্পতিবার আগরতলায় প্রজ্ঞা ভবনে দু’দিনব্যাপী জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের উত্তর-পূর্ব আঞ্চলিক পর্যালোচনা সভা কর্মশালায় কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য প্রকল্পগুলি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত করছে না, এমনকি প্রদত্ত টাকাও খরচ করতে পারছে না, এমন অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্মসচিব মনোহর আগনানি৷ তাই কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ ব্যয়ের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে চলেছে, সেকথা তিনি জানিয়েছেন৷ তাঁর কথায়, জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা মিশনের বহু প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজগুলি ব্যয় করছে না৷ কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ সত্ত্বেও তা কার্যকর হচ্ছে না৷ ফলে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিবছরই অর্থ বরাদ্দ হ্রাস করতে বাধ্য হচ্ছে৷ ত্রিপুরা, মণিপুর এবং নাগাল্যান্ডে গত তিনটি অর্থ বছরে ব্যয়ের পরিমাণ ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার বরাদ্দের পরিমাণ হ্রাস করে দিয়েছে৷ কিন্তু, এ বছর পুনরায় কেন্দ্রীয় সরকার বরাদ্দের পরিমাণ বাড়িয়েছে৷ তাঁর কথায়, কেন্দ্রীয় সরকার পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে, বরাদ্দ কেন্দ্রীয় অর্থ ব্যয় করতে না পারলে পরবর্তী বছর বরাদ্দের পরিমাণ আবার হ্রাস করা হবে৷ সাথে যোগ করেন, প্রায় সবকটি প্রকল্পের ৯০ শতাংশ অর্থ কেন্দ্র দিচ্ছে৷ শুধু ১০ শতাংশ অর্থ রাজ্যকে দিতে হচ্ছে৷ কিন্তু তার পরও রাজ্য সরকারগুলি এই ক্ষুদ্রাংশ দিতে চায় না৷ তাঁর দাবি, সেদিক থেকে অরুণাচল ও সিকিমে ভালো কাজ হচ্ছে৷ তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, রাজ্য সরকারগুলিকে এখন এ সমস্ত বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে৷ অন্যথায় সাফল্য সম্ভব নয়৷ কেন্দ্রীয় সরকার সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলিতে অর্থ ব্যয় করতে কার্পণ্য করছে না৷ বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাগশীল প্রোগ্রামগুলি রূপায়ণে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে৷ আয়ুষ্মান ভারত কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য পরিষেবাকে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে এই কর্মসূচি সহায়ক ভূমিকা নেবে৷ তিনি জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধীনে আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও কর্মসূচি রূপায়ণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন৷ কিন্তু রাজ্য সরকারগুলিকে এ বিষয়ে উপযোগী ভূমিকা নিতে হবে৷
পর্যালোচনা সভা ও কর্মশালার উদ্বোধন করে প্রধান অতিথির ভাষণে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য ও সুস্থতা কেন্দ্রগুলিকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানে সক্ষম করে তোলা হবে৷ এই সেন্টারগুলি বিশেষভাবে যোগ্য, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে গঠন করা হবে৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মণ বলেন, আয়ুস্মান ভারত জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা মিশন রাজ্যে ট্রাস্ট পদ্ধতিতে রূপায়ণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ এই কাজে ৮৬ শতাংশ তথ্য ইতিমধ্যেই সংগ্রহ হয়েছে৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য পরিষেবার সম্প্রসারণ ও উন্নত করার ক্ষেত্রে অর্থের যোগানে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন অন্যতম ও সহজ মাধ্যম৷ তিনি জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন থেকে জি বি পি হাসপাতালের পরিকাঠামোর উন্নয়ন ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন৷ রাজ্যে ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মেটারন্যাল এন্ড চাইল্ড হেলথ (এম সি এইচ) উইং স্থাপনের অনুমোদন দেওয়ায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মণ স্বাস্থ্য মন্ত্রককে ধন্যবাদ জানান৷ তিনি নির্মাণ সহ অন্যান্য সামগ্রীর মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এম সি এইচ স্থাপনের জন্য বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে ৬০ কোটি টাকা করার অনুরোধ জানান৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ ধরণের কর্মশালার আয়োজন রাজ্যে করতে পেরে আমরা সম্মানিত বোধ করছি৷ জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন চালু হওয়ার পর থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক থেকে রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে সক্রিয় সহায়তা পাওয়া গেছে৷ রাজ্যে ৪৪৯টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৪৩টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৮টি কমিউনিটি হেলথ সেন্টার ও ১টি মহকুমা হাসপাতাল জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধীনে নির্মিত হয়েছে৷ মহকুমা ও জেলা হাসপাতালগুলিতে উন্নত যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে৷ ৪টি জেলা হাসপাতালে স্পেশাল নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিট (এস এন সি ইউ) স্থাপন করা হয়েছে৷
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি, ২০১৭-য় জনবসতির শেষ প্রান্ত স্বাস্থ্য ও সুস্থতা কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিষেবার সম্প্রসারণকে নিশ্চিত করা হয়েছে৷ আয়স্মান ভারত চালু হওয়ায় আমাদের রাজ্যে ৪৬ টি এ ধরণের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা কেন্দ্র চালুর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে৷ বর্তমান অর্থবছরেই রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে এই কেন্দ্রের মাধ্যমে উন্নত করা হবে৷
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথায়, রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন-এর ত্রিপুরা শাখা নিরলসভাবে কাজ করছে৷ এন এইচ এম-এর কর্মীরা এক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখছেন৷ বিশেষ শ্রেণীভুক্ত রাজ্য হিসেবে ত্রিপুরার কথা বিবেচনা করে এ রাজ্যের এন এইচ এম-এর কর্মীদের নিয়মিত করার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন৷

