অভিযোগ ও তার স্পষ্টিকরণ, অতি চালাকি করতে গিয়ে ফেঁসে গেছে রাজ্য সরকার ঃ সুদীপ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৪ নভেম্বর৷৷ অতি চালাকি করতে গিয়ে ফেঁসে গেছে রাজ্য সরকার৷ সরকারি পোর্টালে দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্য

শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন৷ ছবি নিজস্ব৷

সরকারের দেওয়া স্পষ্টিকরণকে কেন্দ্র করে এইভাবেই বিদ্রুপ করেন বিজেপি বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ৷ শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে সুদীপবাবু বলেন, সরকারি পোর্টালে দেওয়া স্পষ্টিকরণ মূলত দুর্নীতির প্রশ্ণে রাজ্য সরকারের স্বীকারোক্তি৷

এদিন তিনি বলেন, রাজ্য সরকার আপদমস্তক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত৷ তাই তিনি মনে করেন, দুর্নীতির প্রশ্ণে স্পষ্টিকরণ দিতে গিয়ে পরোক্ষে সত্যতা স্বীকার করেছে রাজ্য সরকার৷ তাঁর সাফ কথা, ১০ টি অভিযোগের স্পষ্টিকরণে অসম্পূর্ণতা রয়েছে৷ বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তার কোন স্পষ্টিকরণ দেওয়া হয়নি৷ তাঁর মতে, ১০টি অভিযোগের বিষয়ে রাজ্য সরকার যে বয়ান দিয়েছে তা স্বীকারোক্তি ভিন্ন অন্য কিছু নয়৷ এমনকি মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতিতে যুক্ত নয় বলে কোন শব্দও ব্যয় করা হয়নি৷ উপরন্তু, বিষয়গুলি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যাতে রাজ্য সরকার সমস্ত দোষ স্বীকার করে নিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে৷

তিনি মনে করেন, সরকারি পোর্টালে ইচ্ছাকৃতভাবে রোজভ্যালি কেবলমাত্র ৩৫ কোটি টাকা লুঠ করে পালিয়েছে বলে দেখানো হয়েছে৷ তাঁর বক্তব্য, বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, পশ্চিম আগরতলা থানায় রোজভ্যালির বিরুদ্ধে তিনটি মামলায় তদন্তক্রমে ৯৭ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা ঐ সংস্থা লুঠ করে পালিয়েছে বলে তথ্য মিলেছে৷ অথছ, সরকারি পোর্টালে লুঠ করা টাকার অঙ্ক কম দেখানো হয়েছে৷ তিনি আরো বলেন, মুখ্যমন্ত্রী রোজভ্যালির প্রশংসা করেননি এবং মন্ত্রী বিজিতা নাথকে সিবিআই জেরা করেনি এ বিষয়ে কোন স্পষ্টিকরণ দেওয়া হয়নি৷ তাতে, এই অভিযোগ রাজ্য সরকার অকপটে স্বীকার করেছে বলে সুদীপরায় বর্মণ দাবি করেন৷

সুদীপবাবুর মতে, মুখ্যমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভায় দুই সদস্যের বিরুদ্ধে রোজভ্যালি কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ ছিল৷ এখন রাজ্য সরকার স্বচ্ছতা প্রমাণ করতে গিয়ে পাঁচ মন্ত্রীর কথা বলেছে৷ এই অবস্থায় বাকি মন্ত্রিদের মধ্যে কারা রোজভ্যালি কেলেঙ্কারিতে যুক্ত তা রাজ্যের মানুষকে জানানো উচিত৷

সুদীপবাবু আরো বলেন, বিশালগড়ে কেবলমাত্র ২ কোটি ২ লক্ষ টাকা অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ সরকারি পোর্টালে সাফাইনামায় উল্লেখ করা হয়েছে৷ অথচ, এজাহার মোতাবেক পঞ্চাশ কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে৷ তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে ব্লক দুর্নীতি ঘোটালায় চার্টার্ড একাউন্টেন্ট দিয়ে স্পেশাল অডিটে ১০৫ জন আধিকারিক জড়িত রয়েছেন বলে পর্যবেক্ষণ রিপোর্টে উঠে এসেছে৷ কিন্তু, বিমল চক্রবর্তী ছাড়া বাকি যারা জড়িত রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে সরকার কেন কোন পদক্ষেপ নেয়নি সে বিষয়ে কোন স্পষ্টিকরণ দেয়নি রাজ্য সরকার৷ একইভাবে পেঁচারথল এবং রূপাইছড়ি ব্লকে প্রচুর টাকা নয়ছয় হয়েছে৷ স্পষ্টিকরণে টাকা উদ্ধারের নির্দেশ দেওয়ার বিষয়ে উল্লেখ করা হলেও দোষিদের বিরুদ্ধে মামলা কেন করা হয়নি, প্রশ্ণ তুলেন সুদীপ রায় বর্মণ৷

এদিকে, রাজ্য সরকার অশোক কেলেঙ্কারিতে বর্ধমান ফার্মার কথা স্পষ্টিকরণে উল্লেখ করে নতুনভাবে আইনি বেড়াজালে পড়তে চলেছে বলে দাবি করেন সুদীপবাবু৷ তাঁর মতে, বিষয়টি এখনো আদালতে বিচারাধিন৷ এর স্পষ্টিকরণ দিতে গিয়ে রাজ্য সরকার নিজেদের দুর্নীতিকে ঢাকার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে৷

এদিন তিনি বিদ্রুপ করে বলেন, রাজ্য সরকার অতি চালাকি করতে গিয়ে এখন ফেঁসে গেছে৷ ১০৩২৩ জন শিক্ষকের চাকরি চ্যুতির ঘটনায় অনিয়ম হয়েছে সেকথাও রাজ্য সরকার মেনে নিয়েছে৷ এছাড়াও জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনে দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের উচ্চ আদালতের নির্দেশে চিহ্ণিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু, আজপর্যন্ত এবিষয়ে রাজ্য সরকার কোন পদক্ষেপ নেয়নি৷ তাই তিনি জোর গলায় দাবি করেন, স্পষ্টিকরণ দিয়ে রাজ্য সরকার নিজেদেরকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে৷