নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১১ অক্টোবর৷৷ বিলম্বে বোধদয়৷ এই পরম্পরা এখনো রয়েছে সিপিএমে৷ তাই হয়তো দলের
পলিটব্যুরো সদস্য তথা মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার অকপটে স্বীকার করেন, কমিউনিস্টদের শক্তির সাফল্য ঘটাতে পারছেন না৷ উপর্যুপরি দলের অনেক ক্ষয় হয়েছে৷ তিনি এও স্বীকার করেন, কমিউনিস্টরা এখনও অনেক দূর্বল৷ শুধু তাই নয়, অনেক জায়গায় অসংগঠিতও হয়ে রয়েছে৷ তাই পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে তিনি সংগঠনকে মজবুত করার জোরালো ডাক দিয়েছেন৷
বুধবার আগরতলায় রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে সিপিএম ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির উদ্যোগে মহান নভেম্বর বিপ্লব শতবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত হলসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মানিক সরকার বলেন, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দল ক্রমাগত কাজ করে চলেছে৷ কিন্তু, তাতে সাফল্য আসেনি, তাও তিনি মেনে নিয়েছেন৷ তিনি বলেন, লক্ষ্যে পৌঁছাতে কৌশল পরিবর্তন করা হয়েছে৷ সেক্ষেত্রে সাফল্য থাকলেও অনেক দূর্বলতাও রয়েছে৷ এদিন তিনি অকপটে জানান, আমরা কমিউনিস্ট শক্তির সাফল্য ঘটাতে পারছি না৷ উপর্যুপরি দলের অনেক ক্ষয় হয়েছে৷ লক্ষ্য সম্পর্কে কোন প্রশ্ণ নেই তবে, সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে কাঙ্খিত সাফল্য যে আসেনি তাও তিনি স্বীকার করেছেন৷ তিনি বলেন, সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করতে গিয়ে শ্রেণী শত্রুদের দূর্বল করার কৌশল নেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু, তাতে কাঙ্খিত সাফল্য আসেনি৷ ফলে, পার্টি কংগ্রেসে নতুন কৌশল নেওয়া হয়েছে৷ দল চাইছে বাম গণতান্ত্রিক শক্তিকে একজোট করে অভিন্ন কাঠামোতে নমনীয় কর্মসূচী তৈরী করা হোক৷
এদিন, সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য মানিক সরকার দলের ক্ষয়িষ্ণু অবস্থান ঢাকতে গিয়ে বিজেপির কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন৷ তাঁর মতে, বিকল্প এবং পরিবর্তনের শ্লোগান দিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় আসলেও বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি আগের তুলনায় আরও গভীর সংকটের দিকে এগিয়ে চলেছে৷ এদিন তাঁর বক্তব্যে অনেকটাই ফুটে উঠেছে, কমিউনিস্ট আন্দোলনের বদলে বিক্ষিপ্ত শ্রমিক সংগঠন এবং কৃষকদের আন্দোলন রাষ্ট্রশক্তিকে কড়া চ্যালেঞ্জ ছঁুড়ে দিতে সক্ষম হয়েছে৷ অবশ্য ওঁদের সাথে কমিউনিস্টরাও একই মঞ্চে রয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন৷
শ্রমিক ও কৃষক আজ সারা দেশে সবচেয়ে বেশী আক্রমণের শিকার, এই দাবি করে মানিক সরকার বলেন, এতদিন দেশে কৃষক আন্দোলনের কাঙ্খিত সাফল্য দেখা যায়নি৷ কিন্তু, গত কয়েক মাসে কৃষকদের সংঘবদ্ধ আন্দোলন সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে৷ একই ভাবে দেশব্যাপী শ্রমিকদের সংগঠন আগামী নভেম্বরে সংসদ ভবনের সামনে তিনদিন ব্যাপী লাগাতর ধর্ণা আন্দোলন সংগঠিত করবে বলে হুমকি দিয়েছে৷ এদিন তিনি অনেকটা কৌতুকের সুরে বলেন, ওঁরা কেউই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হোক চাইছেন না৷ কিন্তু, তাঁদের দাবী এবং এর প্রেক্ষিতে আন্দোলন সারা দেশে বিকল্প শক্তির পরিচয় দিচ্ছে৷
তিনি বলেন, দেশের ক্ষমতায় যাঁরা রয়েছেন তাঁরা এখন কাউকেই পরোয়া করতে চাইছেন না৷ বিজেপি-কে উদ্দেশ্য করে তাঁর কটাক্ষ, তোমাকে বধিবে যে গকুলে বাড়িছে সে৷ এই উপলব্ধিতেই সিপিএম কেন্দ্রীয় দপ্তরের বাইরে বিজেপি ধর্ণা প্রদর্শন করছে বলে মানিক সরকার দাবি করেন৷ তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতায় যাঁদের কোন ভূমিকা ছিল না তাঁরাই সিপিএম-কে দেশদ্রোহী বলে সমালোচনা করছে৷ তাঁর মতে, স্বাধীনতার পর এমন জনবিরোধী সরকার দেশবাসী কখনোই দেখেননি৷
এখন লড়াইয়ে শুধু টিকে থাকা নয়, নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে নতুন করে সংগঠন মজবুত করার ডাক দিয়েছেন মানিক সরকার৷ এদিন তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, কমিউনিস্টরা এখনো দেশের মধ্যে অনেকটাই দূর্বল৷ অনেক জায়গাতেই সংগঠন অসংগঠিত হয়ে রয়েছে৷ তাই সংগঠন মজবুত করতে তিনি জোড়ালো ভাবে ডাক দিয়েছেন৷