নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১ সেপ্ঢেম্বর৷৷ বিধানসভা নির্র্বচন যত এগিয়ে আসছে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশ ততই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে৷ প্রায় প্রতিদিন রাজনৈতিক সংঘর্ষে রাজ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ শুক্রবার রাজধানী আগরতলা এবং দক্ষিণ জেলার শান্তিরবাজারে মনপাথরে পৃথক

রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন৷ শাসক দল সিপিএম এবং ক্রমশ প্রধান বিরোধী দল হয়ে ওঠা বিজেপির মধ্যে লাগাতর সংঘর্ষ চলছে৷ মনপাথরে সিপিএম ও বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষে ৩ জন টিএসআর কর্মীসহ মোট ১১ জন আহত হয়েছেন৷ এদিকে, রাজধানী আগরতলায় বামপন্থি ছাত্রসংগঠন এসএফআই এবং বিজেপির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এভিবিপির মধ্যে সংঘর্ষে এমবিবি কলেজ চত্ত্বরে দিনভর উত্তেজনা বিরাজ করেছে৷ উভয় সংগঠনের মোট ৫ জন আহত হয়েছেন৷
কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছে৷ শুক্রবার এম বি বি কলেজে মনোনয়নপত্র সহ ফি কার্ড অনূকূলে আনার তদ্বিরতা ঘিরে বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ তথা এ বি ভি পি এবং বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এস এফ আই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে৷ আচমকা শুরু হয় কলেজে হৈ হট্টগোল৷ অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ এস এফ আই’র বাধাদানের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধ গড়তেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে৷ ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে পরস্পরের বিরুদ্ধে দুই ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা৷ কলেজ পড়ুয়ারা ভয়ে পালাতে শুরু করে৷ কলেজ চৌমুহনী পর্যন্ত গিয়ে গড়ায় দুই ছাত্র গোষ্ঠীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ৷ এস এফ আই’র অভিযোগ, অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের কার্যকর্তারা বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে অশান্তি পাকাচ্ছে৷ কলেজ ক্যাম্পাসে কোন ধরনের সাংগঠনিক ভিত্তি নেই এ বি ভি পি’র৷ এস এফ আই’র হামলায় অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের কর্মী জখম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷
সকাল থেকে শুরু হওয়া খন্ডযুদ্ধ বিকাল পর্যন্ত গড়িয়েছে৷ ঘটনার খবর পেয়ে কলেজে মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশ ও টি এস আর বাহিনী৷ হতচকিত ঘটনা, পুলিশের সামনে দুই ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা হামলা পাল্টা হামলা চালিয়েছে৷ দুপুরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতেই টি এস আর মৃদু লাঠি চার্জ করে বিক্ষুব্ধদের ছত্রভঙ্গ করতে৷ লাঠিচার্জে এম বি বি কলেজের পরিস্থিতি শান্ত হতে না হতেই খন্ডযুদ্ধ শুরু হয় বি বি এম কলেজে৷ অভিযোগ, সমস্ত ইউনিটের এস এফ আই কর্মীরা এ বি ভি পি’র উপর হামলা চালিয়েছে৷ শিক্ষার পরিবেশকে বিষিয়ে তোলে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের নামে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়৷ দুই কলেজে উভয় ছাত্র সংগঠনের সংঘর্ষে জখম হয়েছে ৫ জন৷ এ বি ভি পি’র রাকেশ দাসের মাথায় গুরুতর চোট লাগে৷ অভিযোগ, পুলিশ অসহায় অবস্থায় দাড়িয়ে থাকায় ছোটখাট গোলযোগ বড়সড় আকার নিয়েছে৷ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে একছত্র দাপট খাটিয়ে দখলে রাখার অভিযোগ এস এফ আই’র বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই তোলছে ছাত্রছাত্রীরা৷ বিরোধী ছাত্র সংগঠনের ব্যানারে অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন এ বি ভি পি’র উত্থান৷ সন্ধ্যার পর থেকে পরিস্থিতি শান্ত হলেও দুই শিবির কাউকে হাল্কাভাবে নিচ্ছেনা৷ এ বি ভি পি’র বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সভানেত্রী লিপিকা রায় ছাত্র ফেডারেশনের বিরুদ্ধে কলেজে গুন্ডারাজ কায়েমের অভিযোগ তোলেছেন৷ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনে বিতশ্রদ্ধ বামপন্থী ছাত্র সংগঠন৷ ভয়ভীতি, হামলা, হুজ্জতি চালানো এবং দলদাস পুলিশ প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে এ বি ভি পি’র উপর হামলা চালানো হলে পাল্টা প্রতিরোধে নামার হুশিয়ারী দিয়েছেন লিপিকা রায়৷ দিনভর দুই ছাত্র সংগঠনের মারমুখী সংঘর্ষে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে কলেজ চৌমুহনীতে৷ এদিকে, দুপুরের পর এ বি ভি পি কর্মীরা রাজধানী আগরতলায় মোটরস্ট্যান্ডে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে৷ সেখানে টায়ার পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়৷ যদিও, কলেজে এদিন হামলা পাল্টা হামলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ছুটে গিয়েছিলেন সদরের মহকুমা শাসক সমিত রায় চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সর্মিষ্টা চক্রবর্তী সহ পুলিশের পদস্থ আধিকারীকরা৷
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিজেপির বিক্ষোভ মিছিলের উপর সিপিএম আক্রমণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ তাতে ৩ জন বিজেপি কর্মী আহত হয়েছেন৷ পাল্টা আক্রমণে সিপিএমের ৫ জন কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন৷ ২ রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষে ৩ জন টিএসআর জওয়ান আহত হয়েছেন৷ তাদেরকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷
মনপাথরে বিজেপি কর্মীকে কয়েকদিন আগে মারধরের ফলেই আজকের ঘটনার সূত্রপাত৷ এদিন মনপাথরে সন্ধ্যায় বিজেপি এক বিক্ষোভ মিছিল বের করে৷ বিজেপির বক্তব্য, মিছিলটি মনপাথর সিপিএম পার্টি অফিসের সামনে আসতেই তাদের উপর ঢিল ছুঁড়তে থাকেন সিপিএম ক্যাডাররা৷ তাতে ৩ জন বিজেপি কর্মী আহত হন৷ এই ঘটনায় মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়৷ কিন্তু, কিছুক্ষণের মধ্যেই বিজেপি কর্মীরা সিপিএম পার্টি অফিসের ভেতরে ঢুকে পাল্টা আক্রমণ করেন৷ তাতে ৫জন সিপিএম কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন৷ এই মিছিলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হতে পারে তা পূর্ব অনুমান ছিল পুলিশের৷ তাই বিশাল পুলিশ বাহিনী সহ টিএসআরও মোতায়েন করা হয়েছিল৷ তা সত্বেও সিপিএম ও বিজেপির মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ সংগঠিত হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, দুই দলের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে তিন জন টি এস আর জওয়ান গুরুতর আহত হয়েছেন৷ আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷
ঘটনার খবর পেয়ে দক্ষিণ জেলার পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে ছুটে যান৷ এলাকায় বিশাল পুলিশ ও টিএসআর বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে৷ যে কোন সময় পুনরায় সংঘর্ষ বাঁধতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশ৷ এলাকার টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে৷

