বৃষ্টিতে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত, ত্রাণ শিবিরে বহু পরিবার

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা/ তেলিয়ামুড়া/ উদয়পুর, ৩০ জুন৷৷ বুধবার দুপুরের পর থেকে রাজ্যের সর্বত্রই ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে৷ মুশলধারে বৃষ্টিতে বিভিন্ন মহকুমা সদরগুলির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে৷ রাজধানী আগরতলা শহরের রাজপথে বরাবরের মতোই জল জমে যায়৷ তবে বৃষ্টি থামার কিছু সময়ের মধ্যেই জল নেমে গিয়েছে৷ এদিকে, তেলিয়ামুড়া দশমিঘাট, ঋষি পাড়া, রাজনগর ইত্যাদি এলাকা প্লাবিত হয়েছে৷ খোয়াই নদীর জল ওইসব এলাকায় ঢুকে পড়েছে৷ বাড়ি ঘরে জল জমে গিয়েছে৷


পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এইসব এলাকার লোকজনকে নিরাপদ স্থানে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ তেলিয়ামুড়ার আনন্দমার্গ সুকল এবং শিশু মালঞ্চ সুকলে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে৷ এই দুই জায়গায় পাঁচশ পরিবারকে স্থান দেওয়া হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে৷ মহকুমা প্রশাসনের তরফ থেকে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে৷ অন্যদিকে, উদয়পুরের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ণ হয়ে পড়েছে৷ এদিকে, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামীকাল ভারী বৃষ্টিপাত হবে রাজ্যে৷ আবহাওয়া দপ্তর থেকে আরও জানানো হয়েছে, বুধবারের বৃষ্টিতে রাজ্যের কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে৷ বিদ্যুৎ পরিষেবাও কোথাও কোথাও বিঘ্নিত হয়েছে৷


এদিকে, সারাদিনের ভারী বর্ষণে এক পরিবারের বসতঘরে ধবস ভেঙ্গে পড়ে আহত পরিবারের তিনজন সদস্য৷ ঘটনা তেলিয়ামুড়া মহাকুমার মুঙ্গিয়াকামি ব্লকের তুই কর্মা এলাকায় বুধবার রাত আনুমানিক সাড়ে নয়টা নাগাদ৷ প্রতিদিনের মত খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে ছিলেন এই পরিবারের লোকজন৷ বসত ঘরের পাশে ছিল টিলা৷ সারাদিনের বর্ষণের ফলে পাহাড়ের ধবস নামতে নামতে এক সময় বসত ঘরের মধ্যে পাহাড় থেকে মাটি ভেঙ্গে পড়ে৷ সেই সময় ঘুমিয়েছিল ৪২ বছর বয়সী সত্য লক্ষ্মী দেববর্মা, তার ১৬ বছরের মেয়ে ভূমিকা দেববর্মা এবং ১২ বছরের ছেলে চিরকুমার দেববর্মা৷ হঠাৎ করে তারা যেই ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন সেই ঘরের মধ্যেই মাটি ধসে পড়ে৷ তিনজন ঘর বসতঘরসহ মাটি চাপা পড়ে যায়৷ এদিকে এ খবর পেয়ে এলাকাবাসীরা ছুটে এসে তাদেরকে উদ্ধার করে এবং অ্যাম্বুলেন্সের সহযোগিতায় তেলিয়ামুড়া মহাকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসে৷


অন্যদিকে, আজকের বৃষ্টিতে উদয়পুর পুর এলাকা সহ শহর ও শহরতলি সংলগ্ণ বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ণ হয়ে পড়ে৷ যাতে কিছু কিছু এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়৷ উদয়পুর শহর ও শহরতলি সংলগ্ণ খিলপাড়া, গকুলপুর, জামজুড়ি, ফুলকুমারী রাজনগর, টেপানিয়া স্থিত গোমতি জেলা হাসপাতালের সামনের নীচু এলাকায় অবস্থিত ঔষধের দোকান সমূহ প্রবল বর্ষণে জলমগ্ণ রূপ নেয় – ফলে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়৷ রাতের মুষলধারে বৃষ্টি হয়তো আরো নীচু এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ বাগমা কমলা সাগর এলাকায় বেশ কিছু পরিবার নিকটবর্তী অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন, সেখানে ’বন্ধুর নাম সুদীপ ’ সংস্থার সদস্যরা জেলা পরিষদের সদস্য টিটন পালের নেতৃত্বে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছেন৷বিভিন্ন এলাকার নীচু জায়গা এবং বেশ কিছু পুকুর জলমগ্ণ হওয়ায় মাছ চাষে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়৷
আগামীকাল ১লা জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটায় রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী প্রনজিৎ সিংহ রায় প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করবেন৷ সাথে সরকারি আধিকারিকরাও যাবেন৷ উদয়পুর কিরণ পেট্রোলিয়াম সংলগ্ণ এলাকা থেকে তিনি জলমগ্ণ এলাকা পরিদর্শন শুরু করবেন৷ মহকুমা প্রশাসন ও ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টর কর্মীরা ত্রাণ ও উদ্ধার কার্ষের জন্য প্রস্তুত আছেন বল সূত্র মারফৎ জানা যায়৷