নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ মার্চ৷৷ আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্রাইমারি সেক্টরকে শক্তিশালী করা হয়েছে৷ রাজ্যবাসীর উপর অতিরিক্ত কর আরোপ করা হয়নি৷ রাজ্যের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ক’ষিক্ষেত্রে বরাদ্দ প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে৷ যেমন ২০১৭-১৮ সালে ক’ষিক্ষেত্রে বরাদ্দ ছিলো ৮৮৭.৯৩ কোটি টাকা৷ আগামী অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১,২৫০.৪৭ কোটি টাকা৷ ২০১৭-১৮-এর তুলনায় বরাদ্দ বেড়েছে ৩৬২ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা৷ আজ বিধানসভা অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে ২০২১-২২ আর্থিক বছরের ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাবের উপর আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন৷ উল্লেখ্য, গত ১৯ মার্চ অর্থ দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা বিধানসভায় ২০২১-২২ আর্থিক বছরের জন্য ২২,৭২৪ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব পেশ করেন৷ আজ বিধানসভায় ২০২১-২২ আর্থিক বছরের ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে৷
আজ বিধানসভা অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে বাজেটের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, বাজেটের উপর আলোচনায় বিরোধী দলনেতা বলেছিলেন এখানে রোজগার বাড়ানোর কোনও দিশা নেই৷ তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে রোজগার বাড়ানোর জন্য প্রাইমারি সেক্টরকে শক্তিশালী করা হয়েছে৷ ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরে বেতন ভাতার জন্য বরাদ্দ ছিলো ৫,৬০০ কোটি টাকা৷ ২০২১-২২ আর্থিক বছরে এক্ষেত্রে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৬,৯৯৫ কোটি টাকা৷ বরাদ্দ বেড়েছে ১,৩৯৫ কোটি টাকা৷ সরকারি চাকরির সংখ্যা বেড়েছে৷ বেতন বেড়েছে৷ পেনশন বেড়েছে৷ অতিমারির মধ্যেও বিভিন্ন রাজ্য অন্যান্য ব্যয় কমিয়েছে৷ আমাদের রাজ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে অন্যান্য ব্যয় ছিলো ১,৩৪৮.৫৮ কোটি টাকা৷ ২০২১-২২ আর্থিক বছরের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২,৪১২.৩২ কোটি টাকা৷ মানে হলো বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৭৯ শতাংশ৷ তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, পর্যটন ক্ষেত্রে বরাদ্দ ছিলো ৭.১৪ কোটি টাকা৷ আগামী অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৫.৫০ কোটি টাকা৷ বরাদ্দ বেড়েছে ১১৭ শতাংশ৷ তেমনি শিক্ষাক্ষেত্রে ৯ শতাংশ, আই টি ক্ষেত্রে ৯৭ শতাংশ, স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে ৩৭ শতাংশ বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের অভ্যন্তরীণ গড় উৎপাদনও তুলনায় অনেক বেড়েছে৷ যেমন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জি এস ডি পি ছিলো ৪৩,৭১৫.৮০ কোটি টাকা৷
২০২০-২১-এ জি এস ডি পি-এর পরিমাণ ৭০,৬৭৩.৪০ কোটি টাকা৷ বৃদ্ধির হার ৬১.৬০ শতাংশ৷ এজন্য কোনও কর চাপানো হয়নি৷ ভ্রষ্টাচার বন্ধ করে উন্নত পদ্ধতি প্রয়োগ করে তা বাড়ানো হয়েছে৷ এটাই তো উন্নয়নেরই মাপকাঠি৷ তিনি বলেন, বিমানবন্দর তৈরি, জাতীয় সড়ক তৈরি, সাবমে আই সি পি, লজিস্টিক হাব, ১৯টি নগর এলাকায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর প্রভ’তি ক্ষেত্রে ২৩,৪৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে৷ আমাদের বাজেটের টাকার বাইরে কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্পে এই টাকা রাজ্যে ব্যয় হবে৷ গ্রামীণ রাস্তার উন্নয়নে ব্যয় হবে প্রায় ৩৬২ কোটি টাকা৷ এই রাস্তাগুলির কাজ শুরু হলেও শেষ হয়নি৷ পূর্বতন সরকার এই কাজগুলি করতে পারতো৷ কিন্তু উদ্যোগ নেয়নি৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এডিসি এলাকায় ৩৭টি রাস্তা পেপার ব্লক বা সিমেন্ট ব্লক দিয়ে করা হচ্ছে৷ তাতে ব্যয় হবে ৯৬ কোটি টাকা৷ এসব তথ্য এবং কাজ প্রমাণ করে এই সরকার নতুন দিশার সরকার৷ আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরাকে মডেল স্টেট হিসেবে গড়ে তোলার কথাও তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, রাজ্যের সরকার এন সি ই আর টি সিলেবাস চালু করেছে৷ পেরেন্ট টিচার্স মিটিং চালু করেছে৷ ’লক্ষ্য’ প্রকল্প চালু করেছে৷ শিক্ষাক্ষেত্রে এগুলি নতুন ভাবনা৷ শিল্পক্ষেত্রে এস ই জেড, আই সি পি, লজিস্টিক হাব তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ ইতিমধ্যেই ফেণী নদীর উপর মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে৷ এগুলি সব চালু হলে আগামী কয়েক বছরে সাবমের আশেপাশে প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে৷ ইতিমধ্যেই ১৭১টি পরিষেবা অনলাইন করা হয়েছে৷ ৩৬টি দপ্তর অনলাইন পরিষেবার আওতায় এসেছে৷ আগর প্ল্যান্টেশন বোর্ড তৈরি করা হচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে আগরকে কেন্দ্র করে উত্তর জেলায় দুই হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে৷ ’আত্মা’ প্রকল্পে ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্বা’লে রাবার ক্ষেত্রে ১,১০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে৷ রেগার মাধ্যমে ড্রাগন ফল চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ মডেল রাজ্য তৈরি করার কথা বলতে গিয়ে তিনি ক’ষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা, টুডা-এর মাধ্যমে ফ্ল্যাট তৈরি, লাইট হাউস প্রজেক্ট, অটল জলধারা মিশনে বিনামূল্যে পানীয়জলের সংযোগ প্রভ’তির কথাও তুলে ধরেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গোমতী ডেয়ারির উৎপাদন ১৫ হাজার লিটার হয়ে গেছে৷ শুধু দুধই নয়, ডেয়ারি, দই, আইসক্রিম, সন্দেশও তৈরি করছে৷ বামুটিয়াতে ৪০ হাজার লিটার ক্ষমতা সম্পন্ন আরেকটি ডেয়ারি তৈরি হবে৷ বোধজংনগরে বেসরকারি উদ্যোগে একটি ডেয়ারি তৈরি হবে৷ রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ৫০ হাজার বর্গাদারকে নাবার্ডের মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি যোজনায় ২৭২ কোটি টাকা ক’ষকদের অ্যাকাউন্টে গেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ললিপপ দিয়ে রাজনীতি করে না৷ জনকল্যাণে বর্তমান সরকার গত তিন বছরে ৮৩৮টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই সরকার জনজাতিদের রিসাকে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দিয়েছে৷ ২৩ বছরের পুরোনো ব-দের সমস্যার সমাধান করা হয়েছে৷ তাদের পুনর্বাসনের জন্য ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে৷ রাজ্যে সমাজপতিদের জন্য ২ হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ সবশেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী আর্থিক বছরের জন্য যে বাজেট পেশ করা হয়েছে তা যুবকদের বাজেট, রোজগারের বাজেট, জব ক্রিয়েশনের বাজেট, জব ক্রিয়েটরের বাজেট৷ এই সবগুলি প্রমাণ করে এই বাজেট পজিটিভ বাজেট৷