ঢাকা, ২১ মার্চ (হি.স.): আগামী ২৬-২৭ মার্চ বাংলাদেশ সফরে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাংলাদেশ সফরে গিয়ে, ২৭ মার্চ মতুয়া ধর্মের প্রবক্তা হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থান ওড়াকান্দি যাওয়ার কথা রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ওড়াকান্দি আগমণে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশের হিন্দু মতুয়া সম্প্রদায়। উচ্ছ্বাস ব্যক্ত করে মতুয়া সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “মোদীর এই আগমণ ভগবানের আশীর্বাদ।” হরিচাঁদ ঠাকুরের ষষ্ঠ বংশধর বাংলাদেশের কাশিয়ানী উপজেলার চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর হিল্টু বলেছেন, “শুধু বাংলাদেশ ও ভারত নয়, ওড়াকান্দি সফরের জন্য সমগ্র বিশ্বের মতুয়া সম্প্রদায় কৃতজ্ঞ থাকবে নরেন্দ্র মোদীর কাছে।” সুব্রত ঠাকুর বলেন, “এখনও পর্যন্ত ভারতের কোনও প্রধানমন্ত্রী পিছিয়ে পড়া হিন্দু সম্প্রদায় মতুয়াদের কোনও খোঁজ নেননি। যা নরেন্দ্র মোদী করতে চলেছেন।”
ওড়াকান্দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমণ নিয়ে কী মনে করছে বাংলাদেশে বসবাসরত মতুয়া সম্প্রদায়, এ বিষয়ে সুব্রত ঠাকুরের সঙ্গে কথা বলেছেন বহুভাষী সংবাদ সংস্থা হিন্দুস্থান সমাচার-এর বাংলাদেশের প্রতিনিধি কিশোর সরকার। হিন্দুস্থান সমাচার-এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় হরিচাঁদ ঠাকুরের ষষ্ঠ বংশধর সুব্রত ঠাকুর হিল্টু বলেছেন, “ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমণকে ঘিরে মতুয়াদের মধ্যে নব জাগরণের সৃষ্টি হয়েছে। শুধুমাত্র বাংলাদেশ ও ভারত নয়, ওড়াকান্দি সফরের জন্য সমগ্র বিশ্বের মতুয়া সম্প্রদায় কৃতজ্ঞ থাকবে নরেন্দ্র মোদীর কাছে।” তিনি আরও বলেছেন, “নরেন্দ্র মোদী শুধু ওড়াকান্দি নয়, কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের ঠাকুরনগরে ঠাকুরবাড়িতেও গিয়েছিলেন মতুয়া সম্মেলনে।”
পশ্চিমবঙ্গে কিছু দিন পরই বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ, ভোটের মুখে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীর ওড়াকান্দি সফর মতুয়া ভোট টানতে ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হবে বলে মনে করছেন অনেকেই। এ বিষয়ে সুব্রত ঠাকুরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “ভোটের রাজনীতিতে কাজে লাগানোর জন্য ভারতের প্রায় সব দলই মতুয়াদের ব্যবহার করেছে। তবে, নাগরিকত্ব প্রদানের ন্যায্য দাবি কেউ পূরণ করেনি। মোদী সরকার ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার আগে ভারতে বসবাসরত মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার অঙ্গিকার করেছিল। দেরিতে হলেও নাগরিকত্ব প্রদানের বিল পাস হয়েছে ভারতে। তাই মতুয়া সম্প্রদায় বিজেপিকে একটু বেশি পছন্দ করতেই পারে। এটা দোষের কিছু নয়। পশ্চিমবঙ্গের মতুয়াদের ভোট বিজেপি বেশি পেতেই পারে এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া বাংলাদেশে সফরে এসে ওড়াকান্দি ঠাকুরের মন্দির দর্শন করলে মোদীর প্রতি মতুয়াদের ভালোবাসা আরও বাড়বে।”
ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে এসে ধর্মীয় তীর্থস্থান পরিদর্শন করবেন, এ বিষয়ে সুব্রত ঠাকুরকে হিন্দুস্থান সমাচার-এর পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “যে যেই ধর্মের মানুষ সে তো সেই ধর্মের তীর্থস্থান দর্শন করবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। ভোটের রাজনীতি করা ভন্ডামি। প্রত্যেক ধর্মের মানুষের তাঁর নিজ নিজ ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা উচিত। এতদিন ভারতের যে সমস্ত হিন্দু নেতারা বাংলাদেশে সফরে এসে মন্দির পরিদর্শন করেননি, তাঁরা নিজ ধর্মের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।” ওড়াকান্দিতে এসে এখানকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে মোদী কথা বলতে পারেন এমনটাই মনে করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সুব্রত ঠাকুর বলেছেন, “শুনেছি ২৬ মার্চ বাংলাদেশে আসলেও, ২৭ মার্চ ওড়াকান্দি আসবেন মোদী এবং হরিমন্দিরে পুজো দেবেন। ঠাকুর পরিবারের ১৫ জন সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে মোদীর। এছাড়াও প্রায় ৪০০ ভক্তের তালিকা ভারতীয় হাইকমিশন তৈরি করেছে, তাঁদের সঙ্গেও সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে।”
উল্লেখ্য, আগামী ২৬ এপ্রিল সকালে বাংলাদেশে আসবেন নরেন্দ্র মোদী, ওই বিকেল ৪.৩০ মিনিট নাগাদ প্যারেড গ্রাউন্ডে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তিনি, পরবর্তী দিন ২৭ মার্চ সকালে সাতক্ষীরার যশোরেশ্বরী মায়ের মন্দির পরিদর্শন ও পূজার্চনা করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী, ওই দিন ওড়াকান্দিতে শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে পুজো দেবেন মোদী, কথা বলবেন মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে।