করিমগঞ্জ (অসম), ১৮ মার্চ (হি.স.) : ২০২২ সালের মার্চ মাসের আগ রাজ্যের এক লক্ষ বেকার যুবক যুবতীদের সরাকারি চাকরি দেবে বিজেপি সরকার। অরুণোদয় প্রকল্পে যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁদেরও এই প্রকল্পের আওতায় আনার পাশাপাশি মাসিক ৮৩০ টাকার পরিবর্তে ৩,০০০ টাকা করে প্রতি মাসে দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ম প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের পাঁচ লক্ষ যুবকদের লাভান্বিত করা হবে। এটা হলো রাজ্যবাসীর প্রতি বিজেপির প্রতিশ্রুতি।
বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিলে তা রক্ষা করতে জানে। গ্যারান্টি তো ব্যবসায়ীরা দেন। বিজেপি রাজনীতির মাধ্যমে জনসেবা করে। আর কংগ্রেস রাজনীতির নামে ব্যবসা করে। তাই কংগ্রেসি নেতারা গ্যারান্টি দেন। বৃহস্পতিবার করিমগঞ্জের ভাটগ্রামে বিজয় সংকল্প সমাবেশে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে এভাবেই কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন অর্থ-স্বাস্থ্য সহ বহু দফতরের মন্ত্রী তথা নেডা-র আহ্বায়ক হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। বরাকের পনেরোটি আসনের মধ্যে চৌদ্দটি আসনে দলীয় প্রার্থী এবং একটি আসনে মিত্রদল অগপর প্রার্থীকে জয়ী করার আহ্বান জানান হিমন্তবিশ্ব।
মন্ত্রী বলেন, বিজেপি সরকারের আমলে যে সকল প্রকল্পের সুবিধা জনগণ সরাসরি লাভ করেছেন, গত ৭০ বছরে রাজ্যবাসী তা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি। অরুণোদয় প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের ২২ লক্ষাধিক মহিলা মাসিক ৮৩০ টাকা করে পেয়ে যাচ্ছেন। প্রতি মাসে সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এই টাকা জমা হচ্ছে। এর জন্য কোনও দালাল ধরতে হচ্ছে না। রাজ্যে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে ৮৩০ টাকার হার বাড়িয়ে প্রতি মাসে ৩,০০০ টাকা করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার নিশ্চয়তা দেন মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
সরকারের সেকেন্ড ইন কমান্ড বলে রাজ্যে পরিচিত মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা প্রচণ্ড মুসলিম বিদ্ধেষী। এমন অভিযোগের প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন, আমার প্রতিটি জনসভায় ইসলাম ধর্মাবলম্বী লোকজন উপস্থিত থাকেন। সুতরাং আমি সাম্প্রদায়িকও নই আর আমি কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধেও নই। হিমন্তবিশ্ব জোর গলায় বলেন, আমার দায়িত্বে যে সব বিভাগ রয়েছে সেগুলি থেকে বেশি মাত্রায় লাভান্বিত হয়েছেন ইসলাম ধর্মাবলম্বী লোকেরা। শুধুমাত্র রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য কংগ্রেসিরা আমাকে মুসলিম বিদ্ধেষী বলে প্রচার করে চলছেন।
বিজয় সংকল্প সমাবেশে উপস্থিত বিশাল সংখ্যক জনতার উদ্দেশ্যে হিমন্তবিশ্ব শর্মা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, রাজ্যে সরকার বিজেপির হবেই হবে। এতে কোনও সন্দেহ বা দ্বিমত নেই। আজকের এই বিশাল সমাবেশই প্রমাণ করতে যথেষ্ট যে, জনগণ বিজেপিকে সরকারে ফিরিয়ে আনতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। প্রচণ্ড দাবদাহ উপেক্ষা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনার জন্য যাঁরা অপেক্ষায় ছিলেন, সেই সকল বিজেপি প্রেমীদের ডেডিকেশনকে স্যালুট জানান নেডা-র আহ্বায়ক ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
বিজেপির রাষ্ট্রীয় উপ-সভাপতি তথা অসমে দলের প্রভারি বৈজয়ন্তজয় পাণ্ডা সমাবেশে উপস্থিত বিশাল সংখ্যক জনতাকে প্রথমেই করজোরে নমস্কার জানান। তিনি উপস্থিত জনতা সহ রাজ্যবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসামের কৃষ্টি, সংস্কৃতি রক্ষা করা সহ সুরক্ষা ও বিকাশের জন্য পুনরায় রাজ্যে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া একান্ত আবশ্যক। আজকের এই বিজয় সংকল্প সমাবেশে বিশাল সংখ্যক জনতার উপস্থিতিই প্রমাণ করে, সমগ্র রাজ্যের সঙ্গে বরাক উপত্যকার জনগণও বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে সংকল্পবদ্ধ। বৈজয়ন্তজয় রও বলেন স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে রাজ্যে সিংহভাগ সময় কংগ্রেস সরকার ছিল। অথচ আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ রাজ্যের উন্নয়ন যতটুকু হওয়া প্রয়োজন ছিল, ততটুকু হয়নি। ২০১৬ সালে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের নেতৃত্বে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, কার্যত এ রাজ্যে প্রকৃত উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। বলতে গেলে রাজ্যের জনগণ স্বাধীনতার ৭০ বছর স্বাধীনতার আসল স্বাদ পেয়েছেন। বিজেপি শাসনামলে গত পাঁচ বছরে রাজ্যে উন্নয়ন ও বিকাশে যে গতি এসেছে, সেই গতি অব্যাহত রাখতে পুনরায় বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে রাজ্যবাসীর প্রতি আহ্বান জানান বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা বৈজয়ন্ত জয় পাণ্ডা।
কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্রসিং তোমর বিজয় সংকল্প সমাবেশে উপস্থিত জনতার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিজেপি সরকারের আমলে রাজ্যে ন্যায় এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের নেতৃত্বে রাজ্যবাসী সম্মানের সঙ্গে বাস করছেন। গত পাঁচ বছরে রাজ্যে কোনও ধরনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংগঠিত হয়নি। কোনও ধর্মাবলম্বী লোকেদের সঙ্গে ভেদাভেদ করা হয়নি। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সমাজের সকল স্তরের জনগণের সমহারে উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে, কংগ্রেস শাসনামলে একের পর এক ঘোটালা সংগঠিত হলেও, বিজেপি আমলে রাজ্যে কোনও ধরনের ঘোটালা সংঘটিত হয়নি। এতেই প্রমাণিত হয় রাজ্যে প্রকৃত সুশাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তাই এই সুশাসন বহাল রাখতে দলীয় প্রার্থী সহ মিত্রজোটের প্রার্থীদের জয়ী করার আহ্বান জানান কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্রসিং তোমর।
এদিনের বিজয় সংকল্প সমাবেশে উপত্যকার ১৪ জন বিজেপি প্রার্থী নিজ নিজ বক্তব্যে তাঁদেরকে জয়ী করার আহ্বান জানান। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বিজয় সংকল্প সমাবেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা প্রদেশ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক শিলচরের সাংসদ ডা. রাজদীপ রায়, সাংসদ কৃপানাথ মালাহ, মিশনরঞ্জন দাস। উপস্থিত ছিলেন বরাক বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক নিত্যভূষণ দে, হাইলাকান্দি জেলা বিজেপির কার্যনির্বাহী সভাপতি স্বপন চক্রবর্তী, কাছাড় জেলা বিজেপির কার্যনির্বাহী সভাপতি বিমলেন্দু রায়। গোটা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন করিমগঞ্জ জেলা বিজেপি সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য।