আগরতলা, ৩ মার্চ (হি.স.) : ত্রিপুরায় দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন বিরোধী উপনেতা বাদল চৌধুরী৷ অভিযোগের তির শাসকদলের বিরুদ্ধে৷ কিন্তু বাদলবাবুর সমস্ত অভিযোগ পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছে বিজেপি৷ দলের মুখপাত্র নবেন্দু ভট্টাচার্যের সাফ কথা, হিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস রাখে না বিজেপি৷ হিংসা সিপিএম-এর অপসংসৃকতি৷ ত্রিপুরাকে ওই অপসংসৃকতির কালো ছায়া থেকে মুক্তির চেষ্টা চলছে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, বাদল চৌধুরীর উপর আক্রমণকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় সামনে আনুক সিপিএম৷ প্রয়োজনে থানায় মামলা করুক৷
আজ বুধবার নিজের বিধানসভা নির্বাচন ক্ষেত্র ঋষ্যমুখে আক্রান্ত হয়েছেন সিপিআই (এম)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা বিরোধী উপনেতা বাদল চৌধুরী৷ তিনি বলেন, পুলিশকে আগাম জানিয়ে পার্টির দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা কমিটির সম্পাদক প্রাক্তন বিধায়ক বাসুদেব মজুমদার, বিলোনিয়া মহকুমা কমিটির সম্পাদক তাপস দত্ত সহ ঋষ্যমুখ বিধানসভা কেন্দ্রের মণিরামপুরে রাজ্যে ষষ্ঠ তফশিলের উপজাতি এলাকা জেলা পরিষদ গঠন, ককবরক ভাষাকে রাজ্য ভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানাতে গিয়ে ১৯৭৫ সালে শহিদ ধনঞ্জয় ত্রিপুরার স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলাম৷ কিন্তু উপজাতি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত জনবসতিতে দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ মুহুরিপুর সহ অন্যান্য এলাকা থেকে বিজেপি-র অনুপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত বাইক বাহিনী পুলিশের উপস্থিতিতে আমাদের উপর আক্রমণ করেছে এবং গাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে৷ তাঁর দাবি, দুর্বৃত্তদের হামলা থেকে বাঁচতে কোনোক্রমে বিলোনিয়া শহরে এসে সরাসরি দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার এসপি অফিসে গিয়ে আজকের ঘটনা এবং অন্যান্য আক্রমণের ঘটনাগুলো জানিয়েছি৷
এ-বিষয়ে সিপিএম রাজ্য কমিটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২০১৮ সালের আজকের দিনটিতেই বিজেপি এবং তাদের নির্বাচনি-জোট বিধানসভা ভোটে জয়ী হয়ে পরিকল্পিতভাবে ফ্যাসিস্টসুলভ সন্ত্রাস শুরু করেছিল৷ গত তিন বছর ধরে প্রতিদিন বিজেপি দুর্বৃত্তদের হিংস্র আক্রমণ চলছে৷ কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিযুক্ত বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন না করে নিষ্ক্রিয় রয়েছে৷ রাজ্যে আইনের শাসনের কোনও অস্তিত্বই নেই৷ সিপিআই (এম)-এর রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী আজকের পুলিশের উপস্থিতিতে বাদল চৌধুরী ও অন্যান্য নেতৃত্বের ওপর বিজেপি-দুর্বৃত্তদের ফ্যাসিস্টসুলভ আক্রমণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ সাথে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ প্রকাশ করছে৷ শুধু তা-ই নয়, আক্রমণকারী দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার দাবি করেছে৷ সাথে গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে প্রতিবাদী হতে আহ্বান জানিয়েছে সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী৷
প্রসঙ্গত, গতকাল বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার ও বিরোধী উপনেতা বাদল চৌধুরী বিলোনিয়া সফরে গিয়ে চাকরিচ্যুত শিক্ষক এবং চিটফান্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন৷ তারা কালো পতাকা দেখিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিলেন৷ বিজেপি-র প্রদেশ মুখপাত্রের দাবি, ওই ঘটনার রেশ ধরেই আজ বাদল চৌধুরী আক্রান্ত হয়েছেন৷ এদিন তিনি বলেন, বাদল বাবুর উপর হামলাকারীরা বিজেপি কর্মী নন৷ কারণ, বিজেপি হিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস রাখে না৷ তিনি বলেন, যে কোনও হামলা কিংবা সন্ত্রাসের তীব্র বিরোধিতা করি আমরা৷ কিন্তু সিপিএম-এর ওই অপসংসৃকতি থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যাচ্ছে না৷ তাঁর দাবি, হিংসা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি ত্রিপুরা থেকে মুছে ফেলার কাজ চলছে৷ তাতে অনেকটাই সফলতা মিলেছে৷ কিন্তু অতি অল্প সময়ে ধুয়ে মুছে সাফ করা সম্ভব হচ্ছে না৷
নবেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ওই হামলার পেছনে করা রয়েছে তা সিপিএম ভালো বলতে পারবে৷ তাদের রাজনৈতিক পরিচয় কী সামনে আনুক সিপিএম৷ প্রয়োজনে তারা থানায় মামলা করুক৷ আমরাও চাইছি অপরাধী চিহ্ণিত হোক৷ তিনি জোর গলায় দাবি করেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস বিজেপির কোনও কার্যকর্তা বাদল চৌধুরীর উপর হামলা করেননি৷