নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ ফেব্রুয়ারী৷৷ মোহভঙ্গ নাকি দলীয় অন্তর্কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ৷ বার এসোসিয়েশনের নির্বাচনে তা মূল্যায়ণের তাগিদ অনুভব করবে শাসক দল বিজেপি, এমনটা মনে করা হচ্ছে৷ কারণ, এক বছরের মধ্যেই বার এসোসিয়েশনের নির্বাচনে ফলাফল সম্পূর্ণ উল্টে গিয়েছে৷ আজ ত্রিপুরা বার এসোসিয়েশনের ২০২০-২১ বছরের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে৷ তাতে, সংবিধান বাঁচাও মঞ্চের আড়ালে শাসক বিরোধী জোট জয়ী হয়েছে৷ শাসক দল বিজেপি সমর্থীত আইনজীবিদের সংগঠন মাত্র ৩টি আসনে জয়ী হয়ে মুখ রক্ষা করতে পেড়েছে৷ সিপিএম ও কংগ্রেস ছয়টি করে আসনে জয়ী হয়েছে৷
বার এসোসিয়েশন নির্বাচনে কংগ্রেস সমর্থীত আইনজীবি মৃণাল কান্তি বিশ্বাস ২২২টি ভোট পেয়ে সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন৷ সহ সভাপতি পদে কংগ্রেস সমর্থীত আইনজীবি সুভাশিষ দে ১৭৯টি ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন৷ এদিকে, সম্পাদক পদে সিপিএম সমর্থীত আইনজীবি কৌশিক ইন্দু ২১৬টি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন৷ তেমনি সহ-সম্পাদক পদে সিপিএম সমর্থীত আইনজীবি মিতালি নন্দি ১৯৫টি এবং কংগ্রেস সমর্থীত আইনজীবি সুজয় সরকার ১৮১টি ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন৷ বার এসোসিয়েশনের নির্বাচনে পদাধিকারী আসনে শাসক দল বিজেপি সমর্থীত আইনজীবিরা খাতা খুলতে পারেননি৷ শুধু সদস্য পদে তিনটি আসনে বিজেপি লিগ্যাল সেল জয়ী হয়েছে৷ সদস্যপদে সিপিএম চারটি আসনে এবং কংগ্রেস তিনটি আসনে জয়ী হয়েছে৷
সদস্যপদে নির্বাচিতরা হলেন, অর্ঘ্য কুসুম পাল (২৪৪টি), দীপ্তনু দেবনাথ (২২০টি), মনিষা মজুমদার (১৮৭টি), প্রসেনজিৎ দেবনাথ (২১০টি), পুলক সাহা (২১৬টি), সৈকত রহমান (১৮৮টি), সোমা রায় (২১০টি), অনিমেষ ভৌমিক (১৮০টি), নন্দন পাল (১৮৩টি) এবং উৎপল দাস (২০৭টি)৷ এদিন বার এসোসিয়েশনে নির্বাচনে ৪০৮জন ভোটারদের মধ্যে ৩৮৯জন ভোট দিয়েছেন৷ তাদের মধ্যে ৩ জনের ভোট বাতিল বলে ঘোষণা দিয়েছেন রির্টানিং অফিসার৷
বার এসোসিয়েশন নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে রির্র্টনিং অফিসার বরিষ্ঠ আইনজীবি সন্দীপ দত্ত চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে সকলের সহযোগিতা মিলেছে৷ ফলে, শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোট পর্ব মিটেছে৷ তিনি বলেন, বার এসোসিয়েশনের নির্বাচনে সংবিধান বাচাও মঞ্চের আইনজীবিরা আইনজীবিরা জয়ী হয়েছেন৷ বিজেপি সমর্থীত আইনজীবি সংগঠন এই নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে৷ তাঁর কথায়, বিদায়ী কমিটির সহযোগিতায় শান্তি পূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন ও গণনা পর্ব সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে৷ তাঁর দাবি, আদালতকে রাজনীতি মুক্ত করার দীর্ঘদিনের প্রয়াস ক্রমশ সফল হবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ কারণ, আদালতকে রাজনীতি থেকে আলাদা রাখা হলে আইনের প্রতি মানুষের আস্থা দীর্ঘস্থায়ী হবে৷
এদিন বার এসোসিয়েশনের নির্বাচন নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস অস্থায়ী সভাপতি তথা বরিষ্ঠ আইনজীবি পিযুষ কান্তি বিশ্বাসের দাবি, বিজেপি লিগ্যাল সেলের প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই নির্বাচনে৷ তাঁর মতে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে৷ এদিন তিনি বলেন, বার এসোসিয়েশনের বিদায়ী কমিটির প্রতি আইনজীবিরা ক্ষোভে ফঁুসছিলেন৷ শুধু তাই নয়, সরকারের প্রতিও তাদের ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছিল৷ এই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পক্ষের কাছে প্রতিবাদের সুর তুলেছেন আইনজীবিরা৷ তাঁর দাবি, বিজেপি লিগ্যাল সেলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে৷ ক্ষমতার অপব্যবহার কিভাবে হচ্ছে বিজেপি লিগ্যাল সেল তার পরিচয় দিয়েছে৷ তিনি বলেন, পিপি-এপিপি নিয়োগে যোগ্যদের মূল্যায়ণ করা হচ্ছে না৷ তাতে বিজেপি সমর্থীত আইনজীবিরাই ক্ষোভে ফঁুসছেন৷ এদিন তিনি সাফ বোঝাতে চেয়েছেন, বিজেপিতে অন্তর্কোন্দল বার এসোসিয়েশনের নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছে৷
এদিকে, এডভোকেট জেনারেল অরুণ কান্তি ভৌমিক বার এসোসিয়েশনের নির্বাচনে রাজনৈতিক পরাজয় হয়নি বলে দাবি করেছেন৷ তাঁর বক্তব্য, আদালতে কংগ্রেস এবং সিপিএম সমর্থীত আইনজীবিদের সংখ্যা বরাবরই বেশি৷ সেই নিরীখে এই নির্বাচনে বিজেপি সমর্থীত আইনজীবি সংগঠন পরাজিত হয়েছে৷ সাথে তিনি কংগ্রেস-সিপিএম’র আতাঁতকে অনৈতিক জোট বলে কটাক্ষ করেছেন৷ তাঁর দাবি, ইতিপূর্বে রাজ্যে কখনই বার এসোসিয়েশনে নির্বাচনে কংগ্রেস ও সিপিএম’র মধ্যে জোট হয়নি৷
প্রসঙ্গত, বার এসোসিয়েশনের গত নির্বাচনে কংগ্রেস নিশ্চিহ্ণ হয়ে গেছিল৷ গেরুয়া সমর্থীত আইনজীবিদের ঝড়ে উড়ে গিয়েছিল বামপন্থীরা৷ ওই বছর বিজেপি লিগ্যাল সেলের ঝঁুলিতে পড়েছিল ১২টি আসন৷ বামেরা মাত্র ৩টি আসনে জয়ী হতে পেড়েছিল৷ এক বছরের মধ্যেই বার এসোসিয়েশনের নির্বাচনী ফলাফল সম্পূর্ণ উল্টো হয়ে গেল৷ স্বাভাবিকভাবেই, এক বছরে বিজেপির প্রতি আইনজীবিদের মোহভঙ্গ হয়েছে নাকি দলীয় অন্তর্কোন্দলের প্রতিফলন নির্বাচনী ফলাফলে দেখা গেছে৷ তা এখন বিজেপির মূল্যায়ণ করার সময় হয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷

