প্রয়াত বাজুবন রিয়াংকে শেষ শ্রদ্ধা, দেহদান

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ ফেব্রুয়ারি৷৷ প্রয়াত হয়েছেন প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ বাজুবন রিয়াং৷ তাঁর প্রয়াণে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এবং বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার শোক প্রকাশ করেছেন৷ শুক্রবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বাজুবন রিয়াং৷ তিনি ত্রিপুরার সাতবারের সিপিআই (এম) সাংসদ ছিলেন৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর৷ তিনি স্ত্রী, দুই পুত্র ও কন্যা রেখে গেছেন৷ বাজুবন রিয়াং জীবিত অবস্থায় দেহদান করেছিলেন৷ তাই আজ জি বি হাসপাতালে তাঁর মরদেহ দান করা হবে৷
ত্রিপুরার প্রাক্তন সাংসদ বাজুবন রিয়াঙের জীবনাবসানে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব শোক প্রকাশ করেছেন৷ তিনি এক টুইট বার্তায় বলেন, ত্রিপুরার প্রাক্তন সাংসদের প্রয়াণে আমি শোকাহত৷ তাঁর আত্মার চিরশান্তি কামনা করছি এবং তাঁর পরিবার পরিজনদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি৷


প্রাক্তন সংসদের প্রয়াণে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা সিপিআইএম নেতা মানিক সরকার শোক ব্যক্ত করে প্রয়াতের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং পরিবার পরিজনদের আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন৷ সিপিএম-এর ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীও বাজুবন রিয়াঙের মৃত্যতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে৷ তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ দলীয় পতাকা অর্ধনর্মিত রেখেছে সিপিএম৷ এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন তাঁর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছে৷


আজ সন্ধ্যায় রাজ্য সচিবালয়ে নিয়ে আসা হয়, সেখানে প্রয়াতের মরদেহে পূপার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধা’াপন করেন রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা, রাজস্ব মন্ত্রী নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা, সচিব টি কে চাকমা, যুগ্ম সচিব সুুমিত রায় চৌধুরী৷ শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা বলেন, প্রয়াত প্রাক্তন সাংসদ বাজবন রিয়াং ছিলেন রাজ্যের একজন জনপ্রিয় নেতা৷ তিনি সহজ সরল উদার মানসিকতার ব্যাক্তি হিসাবে পরিচিত ছিলেন৷ বিশেষ করে জনজাতিদের কল্যাণে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন তারজন্য মানুষ তাঁকে মনে রাখবে৷ সচিবালয় থেকে প্রয়াত প্রাক্তন সাংসদ বাজবন রিয়াং-র মরদেহে বিধানসভায় নিয়ে আসা হয়৷ সেখানে প্রয়াত বাজবন রিয়াং-র মরদেহে পুপার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন বিধানসভার অধ্যক্ষ রেবতী মোহন দাস, সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক, বিধায়ক সুুদীপ রায় বর্মন, বিধায়ক আশিস কুমার সাহা, বিধায়ক বাদল চৌধুরী, বিধায়ক সুুধন দাস, বিধায়ক রতন ভৌমিক৷ এছাড়াও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন বিধানসভার সচিব বিষ্ণুপদ কর্মকার, অতিরিক্ত সচিব সুুবিকাশ দেববর্মা সহ অন্যান্য কর্মীগণ৷


ক্রবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি৷ ত্রিপুরার সাতবারের সাংসদ ছিলেন প্রয়াত বাজুবন৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর৷ বাজুবন রিয়াং জীবিত অবস্থায় দেহদান করেছিলেন৷ তাই আজ জিবি হাসপাতালে তাঁর মরদেহ দান করা হয়েছে৷
সিপিআই (এম)-এর ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন তিনি৷ পরবর্তী সময়ে তিনি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও হন৷ শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত বছর দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী এবং কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে অব্যাহতি নেন তিনি৷ ১৯৪১ সালের ১৩ মার্চ দক্ষিণ ত্রিপুরার বকাফা গ্রামে জন্ম বাজুবন রিয়াঙের৷ আগরতলার মহারাজা বীরবিক্রম কলেজ থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক হন তিনি৷
সংসদীয় রাজনীতিতে তাঁর অভিজ্ঞতা চার দশকেরও বেশি সময়ের৷ কংগ্রেসের হাত ধরে রাজনৈতিক জীবন জীবন শুরু করেন তিনি৷ ১৯৬৭ সালে তিনি কংগ্রেস বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন৷

পরবর্তী সময়ে যোগ দেন সিপিআই (এম) দলে৷ তার পর সিপিএম থেকেই থেকেই বেশ কয়েকবার তিনি বিধায়ক হন৷ ১৯৭৮ সালে প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের আমলে তিনি কৃষি মন্ত্রীর দায়িত্ব পান৷ কিন্তু, ১৯৮০ সালে লোকসভা নির্বাচনে দল তাঁকে পূর্ব ত্রিপুরা প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে৷ তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং নির্বাচনে বিজয়ী হন৷ ১৯৮৯ পর্যন্ত তিনি লোকসভার সদস্য ছিলেন৷ তার পর ১৯৯৬ সালে পুনরায় তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন এবং একটানা ২০১৪ সাল পর্যন্ত লোকসভার সাংসদ ছিলেন৷


১৯৮৫ থেকে ১৯৮৯, এই সময়ে তিনি লোকসভায় সিপিআই (এম)-এর উপনেতার দায়িত্ব পালন করেছেন৷ আদিবাসী অধিকার রাষ্ট্রীয় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি৷ তাছাড়া, তিনি দীর্ঘদিন ত্রিপুরা রাজ্য উপজাতি গণমুক্তি পরিষদের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন৷ সারা ভারত কৃষকসভার কেন্দ্রীয় নেতাও ছিলেন তিনি৷ প্রথম ইউপিএ সরকারের সময় ‘বনাধিকার আইন’কে বাস্তব রূপ দিতে যে কয়েকজন সাংসদ কাজ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বাজুবন রিয়াং৷


তাঁর মৃত্যুতে সিপিএম শোক প্রকাশ করেছে৷ রাতেই তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান বিরোধী উপনেতা বাদল চৌধুরী, বিধায়ক সুধন দাস এবং প্রাক্তন সাংসদ জিতেন্দ্র চৌধুরী৷ আজ সকালে তাঁর মরদেহ প্রথমে নন্দননগরস্থিত ছেলের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখান থেকে তাঁর পৈতৃক ভিটে বকাফায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ তাঁর মরদেহ বিকেলে সিপিএম পার্টি অফিস আনা হয়৷ তার পর জি বি হাসপাতালে তাঁর দেহ দান করা হয়৷