পাথারকান্দি (অসম), ১৩ জানুয়ারি (হি.স.) : মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিশু, এক যুবতী এবং এক মহিলার মৃত্যু হওয়ার পাশাপাশি সাতজন ঘায়েল হয়েছেন। আহতদের করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা সংকটজনক বলে জানা গেছে। ঘটনা সোমবার বেলা প্রায় ২.১৫ মিনিট নাগাদ করিমগঞ্জ জেলার পাথারকান্দি বিধানসভা এলাকার সেপেনজুরি (মেদলি) চা বাগানে সংগঠিত হয়েছে। ঘাতক বলেরো পিকআপ ভ্যানে অগ্নিসংযোগ করে ভস্ম করে দিয়েছেন স্থানীয় উত্তেজিত জনতা।
প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, একটি যাত্রীবাহী অটো রিকশা এবং পোল্ট্রি-মোরগ বোঝাই বলেরো পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে এই দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। দুর্ঘটনায় দুই শিশু, এক যুবতী এবং এক মহিলা-সহ মোট চারজনের মৃত্যুর পাশাপাশি আহত হয়েছেন সাতজন। আহত সকলকে সংকটজনক অবস্থায় করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে তিনজনের শারীরিক অবস্থা অতি আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। পাথারকান্দি থানার সূত্রে নিহতদের নিলি হাজাম (১৮), নীতিন হাজাম (৩ মাস), ধনি মুড়া (৩৫) এবং সুলেখা মুড়া (৪) বলে পরিচয় পাওয়া গেছে। তাছাড়া আহতরা যথাক্রমে রানি গোয়ালা (২৫), সুরজ থাপা (১৯), রমেশ বার্মা (৩৫), শংকর বার্মা (২৬), সাথী যাদব (২৬), গোপাল যাদব (৩০) এবং নিমা হাজাম (২৬) বলে শনাক্ত করেছে পুলিশ। নিহতদের ময়না তদন্ত এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য করিমগঞ্জ অসামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এই খবর লেখা পর্যন্ত ময়না তদন্তের পর নিহতদের মৃতদেহ তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় শোক বিরাজ করছে।
একদিন পর মকর সংক্রান্তি। এর জন্য কেনাকাটা শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন এগারোজন। জানা গেছে, সোমবার বেলা সোয়া দুটো নাগাদ সোনাখিরা বাজার থেকে সংক্রান্তির কেনাকাটা শেষ করে চাঁদখিরা-কাঁঠালতলির ২০৮-এ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে এএস ১০ এসি ২৩২২ নম্বরের যাত্রীবাহী অটো ভ্যানে চেঁপে চালক-সহ মোট এগারোজন যাত্রী সেপেনজুরি (মেদলি) চা বাগানে তাঁদের বাড়ি ফিরছিলেন। অটোটি যথারীতি পিপলাগুল বাগান এলাকায় পৌঁছে। তখন ত্রিপুরা থেকে আগত টিআর ০৫ বি ১৬৮১ নম্বরের পোকল্ট্রি মোরগ বোঝাই একটি বলেরো পিকআপ ভ্যান দুরন্ত গতিতে সড়কের বাঁক নিতে গিয়ে আচমকা অটোতে প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা মারলে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। ধাক্কার চোটে যাত্রী-সহ অটোটি চিড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন দুই শিশু-সহ চার যাত্রী এবং আহত হন অন্য সাতজন।
ঘটনার পর সোনাখিরা পুলিশ চেকগেটের ইনচার্জ মলয় নাথ দলবল নিয়ে আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে ঘাতক বলেরো পিকআপ ভ্যানের চালককে আটক করেন। এদিকে ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত জনতা বলেরো গাড়িতে আগুন ধরিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছেন। এমন-কি উশৃঙ্খল কতিপয় যুবক ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী গৃহস্থদের বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুরের প্রচেষ্টা করার পাশাপাশি সোনাখিরা পুলিশ চেকগেটে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করেছে। উত্তেজিতরা পুলিশ এবং সংবাদকর্মীদের সাথেও অশুভ আচরণ করেছে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে প্রশাসনকে উদ্ধার ও তদন্তকার্যে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। পরে উপস্থিত পুলিশকর্মীদের ডাকে অকুস্থলে পাথারকান্দির ওসি ঘনকান্ত ভুইয়াঁ বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ছুটে আসেন। আসেন সার্কল অফিসার এল খিনতে, করিমগঞ্জের সদর ডিএসপি সুধন্য শুক্লবৈদ্যও। তাদের সম্মিলিত হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।