ব্রু শরণার্থী প্রত্যাবর্তন এবং ত্রিপুরায় বাঙালির নিরাপদ জীবন সুনিশ্চিতের দাবিতে সুর চড়ালো নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চ, এডিসি ভোট বয়কট ও জাতীয় সড়ক অবরোধের হুমকি

আগরতলা, ১০ জানুয়ারি (হি. স.) : ত্রিপুরায় আশ্রিত ব্রু শরণার্থীদের মিজোরামে প্রত্যাবর্তন এবং কাঞ্চনপুরে বাঙালি উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে সুর চড়ালো নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চ। দাবি পূরণ না হলে জাতীয় সড়ক অবরোধের পাশাপাশি এডিসি ভোট বয়কট এবং আইনি লড়াইয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মঞ্চের সভাপতি রঞ্জিত নাথ। তিনি জোর গলায় বলেন, বাঙালি ত্রিপুরার প্রকৃত নাগরিক। তাঁদের এই রাজ্যে নিরাপদে থাকা সুনিশ্চিত করতেই হবে। সে-ক্ষেত্রে উপজাতি ভাবাবেগে সুড়সূড়িয়ে দিয়ে যারা জাতি-উপজাতির মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে চাইছেন তাঁদের চাঁচা-ছোলা ভাষায় সমালোচনা করেন তিনি। রঞ্জিতবাবুর কথায়, আন্দোলনের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে আগামীকাল কাঞ্চনপুর মহকুমায় লালঝুরি বাজারে ৬ ঘন্টার গন অবস্থানে বসবে নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চ। এরপর বিভিন্ন জেলায় ওই আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

আজ সাংবাদিক সম্মেলনে রঞ্জিতবাবু বলেন, ত্রিপুরার মূল অধিবাসী ও ভূমিপুত্র হয়েও বাঙালিদের উদ্বাস্তু হিসেবে যাতনা সহ্য করতে হচ্ছে। তাঁর কথায়, ত্রিপুরার মহারাজা দ্বিতীয় ধর্ম মাণিক্যের আমলে ত্রিপুরা রাজ্যের সীমানা মেঘনা নদীর পূর্ব পাড় পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সেই সমতল অঞ্চল চাকলারোসনাবাদ অধুনা বাংলাদেশ নামে পরিচিত ছিল। তাঁর দাবি, ওই সময় ওই অঞ্চলের শতকরা ৯৭ ভাগ ছিল বাঙালি। তিনি বলেন, স্বাধীনতার সময় ভারত ভাগের ফলে ত্রিপুরার বিস্তীর্ন এলাকা পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। চাকলারোসনাবাদ থেকে মেঘনা পূর্ব পাড় এরই অংশ বিশেষ ছিল। তাঁর দাবি, পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যালঘু বাঙালীরা ধর্মীয় কারণে নির্যাতিত হয়ে ত্রিপুরায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁর আরও দাবি, ওই বাঙালীরা ত্রিপুরার মূল অধিবাসী ও ভূমিপুত্র। সে-জন্যই ১৯৪৯ সালে কাঞ্চনপুরে ওপার বাংলা থেকে আসা বাঙালীদের ১ হাজার দ্রোণ জমি দান করেছিলেন মহারানী কাঞ্চনপ্রভা দেবী। তাঁর সাফ কথা, বাঙালীরা ত্রিপুরারই অধিবাসী মহারানী জমি দান করে তার নিদর্শন রেখেছিলেন। সে-জন্যই কাঞ্চনপুরে স্বস্তি সমবায় সমিতি স্থাপন হয়েছিল।

রঞ্জিতবাবুর অভিযোগ, ব্রু শরণার্থীদের কাঞ্চনপুরে আশ্রয় দেওয়ার পর থেকেই সমস্যা শুরু হয়েছে। ২০০০ সাল থেকে ৩ দফায় বাঙালীরা ব্রু শরণার্থীদের উপদ্রবে ভিটেমাটি ছাড়া হয়েছেন। তাঁর আরো অভিযোগ, ব্রু শরণার্থীরা হামলা-হুজ্জুতি করলেও বাঙালীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হচ্ছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি আইপিএফটি এবং জয়েন্ট মুভমেন্টের ডাকা বনধে ব্রু শরণার্থীরা বাঙালিদের উপর আক্রমণ করেছে। তাঁদের বাড়িঘরে ভাংচুর, দোকান লুটপাট করে বাঙালীদের পথে বসিয়েছে। তাঁর দাবি, এখনো ৯২ পরিবারের ৪০০ জন বাঙালী আনন্দবাজার থানায় আশ্রয় নিয়ে আছেন। তাঁরা ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন না। রঞ্জিতবাবুর বক্তব্য, কাঞ্চনপুরে উগ্র উপজাতি নেতৃত্ব শান্তি বিঘ্নিত করতে চাইছেন। আইপিএফটি-র উগ্র বক্তব্য সমগ্র মহকুমা জুড়ে পরিবেশ অশান্ত করে রেখেছে।

রঞ্জিতবাবু আজ সাফ জানিয়েছেন, ব্রু শরণার্থীদের মিজোরামে প্রত্যাবর্তন, বাঙালি উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের সাথে ক্ষতিপূরণ এবং ত্রিপুরায় বাঙালিদের নিরাপদ জীবনযাপন সুনিশ্চিত করা না হলে নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চ জাতীয় সড়ক অবরোধে বাধ্য হবে। এখানেই থেমে থাকবে না তাঁরা। এডিসি নির্বাচন বয়কটের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। সাথে তিনি যোগ করেন, দাবি আদায়ে আইনি লড়াইয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চ। প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টের দরজায় কড়া নাড়তেও প্রস্তুত, দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে বলেন রঞ্জিত নাথ। তিনি জানান, আগামীকাল কাঞ্চনপুর মহকুমায় লালঝুরি বাজারে ৬ ঘন্টার গন অবস্থান করবে নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চ। কারণ, প্রশাসনের প্রতিশ্রুতিতে ২৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে কাঞ্চনপুরে অনির্দিষ্টকালের বনধ প্রত্যাহার করা হয়েছিল। সময়সীমা অতিক্রান্ত হলেও দাবি পুরান হয়নি। তাই, আবারো আন্দোলনের পথেই নামছি আমরা, বলেন তিনি। এ-বিষয়ে মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক দীপ্তেন্দু নাথ বলেন, সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াই নিয়ে গতকাল আইনজীবীদের কাছ থেকে মতামত সংগ্রহ করেছি। তাঁর দাবি, বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠন এবং ইয়ুথ মিজো এসোসিয়েশন তাদের আন্দোলনকে সমর্থন করেছে। তাই, আগামী ২৩ জানুয়ারি দেশপ্রেম দিবসের অঙ্গ হিসেবে কাঞ্চনপুরে বিশাল জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *