বুধবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতে পারবেন কিছু একটা হচ্ছে, রুদিজলার ক্ষুব্ধ কৃষকদের আশ্বাস দিলেন মন্ত্রী রতন নাথ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৪ নভেম্বর৷৷ আগামী বুধবার সকালেই রুদিজলার কৃষকদের ক্ষোভ প্রশমিত হতে পারে৷ এমনই আশার আলো দেখালেন আইনমন্ত্রী রতন লাল নাথ৷ কৃষকদের চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাক এমন কোন পথে এগুবে না রাজ্য সরকার৷ প্রয়োজনে রুদিজলাকে নিয়ে যে রামসা প্রকল্প রয়েছে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে৷


মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের নির্দেশে রবিবার রুদিজলার চারপাশের বটতলী, চন্দনমুড়া,বড়দোয়াল,চান্দিনাঢেপা,সাহেবমুড়া, কেমতলী, বংশীদ্বীপ,কেচ্ছামুড়া পরিদর্শন করেন আইনমন্ত্রী রতন লাল নাথ৷ পরিদর্শনকালে এলাকার বিধায়ক সুভাষ চন্দ্র দাস, রুদ্রসাগর মৎস্য সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান, মেলাঘর পুরসভার চেয়ারম্যান সহ ওই এলাকার স্থানীয় শত শত মহিলা, কৃষক ও মৎসচাষীরা ছিলেন৷ স্থানীয় বাসীন্দারা তাদের সমস্যা নিয়ে জড়ো হয় রতন লাল নাথের সামনে৷ জল ছাড়ার দাবী নিয়ে গঠিত কমিটির সদস্যদের সাথে ও বিস্তারিত আলোচনা করেন শ্রীনাথ৷


মুখ্যমন্ত্রী বর্তমানে রাজ্যের বাইরে অবস্থান করছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে ফেরত এলে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে তার বিভিন্ন আইনগত বিষয় পর্যালোচনা করে সমস্যার সমাধান করা হবে বলে জানান রতন লাল নাথ৷ তিনি আশা ব্যক্ত করে বলেন, আগামী ২-৩ দিনের মধ্যেই রাজ্য সরকার একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে৷ আইনমন্ত্রী আরও জানান, রুদিজলার বিষয়টি যেহেতু রামসা অধীন তাই আইনগত বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হবে৷ কৃষকদের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে সমস্যা হয় এমন কোন কাজ করবে না রাজ্য সরকার৷ প্রয়োজনে রামসা প্রকল্পটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে৷ তিনি জানান, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে আসবেন৷ ওইদিন রাতেই মুখ্যমন্ত্রীর সাথে বসে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করে নেওয়া হবে৷ আইনমন্ত্রী স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্বাস দিয়েছেন বুধবার সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখতে পারবেন কিছু একটা হচ্ছে৷


প্রসঙ্গত, মেলাঘরের রুদিজলায় জলস্তর বাড়ানোর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন প্রায় দুই হাজার পরিবার৷ চাষাবাদের উপরই ওই পরিবারগুলি নির্ভরশীল৷ রামসা প্রকল্পের অধীনে এই রুদিজলাকে নিয়ে আসায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের৷ ১৯৭১ সালে ইরানে আন্তর্জাতিক স্তরে একটি কনভেনশন হয়৷ সেখানে ভারতও প্রতিনিধিত্ব করেছিল৷ মূলত ওয়েটল্যান্ড তথা জলাভূমি নিয়ে এই কনভেনশন হয়৷ কিভাবে ওই জলাভূমিকে রক্ষা করা যায় তার জন্য কিছু গাইডলাইনও রয়েছে৷ ১৯৭১ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী ভারত ওই কনভেনশনে চুক্তি স্বাক্ষর করে৷ ১৯৭৫ সালের ২১ ডিসেম্বর দেশে এই চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ তাতে দেশের প্রায় পঞ্চাশটি জলাশয় চিহ্ণিত করা হয়৷ পরবর্তী সময়ে ত্রিপুরার রুদিজলা সহ দেশে ৮৭টি জলাশয় চিহ্ণিত হয়৷ সেই মোতাবেক ১৯৯৫ সালে রুদিজলা সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে চিহ্ণিত হয়৷ তখন থেকে রামসা প্রকল্পের আওতায় চলে আসে এই রুদিজলা৷

রামসার অধীনে রুদিজলাকে সংরক্ষিত করা ও সংরক্ষণ সহ পরিকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার তেমন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি৷ বিজেপি জোট সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর রামসা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়৷ এরই মধ্যে জনৈক ব্যক্তি হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেছিল৷ তখন হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল রুদিজলার জলস্তর ১১ মিটার করার জন্য৷ কিন্তু, তাও কার্যকর হয়নি৷ শেষে রাজ্য সরকারকে হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় যাতে একটি সুবিধাজনক জলস্তর সৃষ্টি করে৷ তাই রাজ্য সরকার ১০ মিটার জলস্তর করে৷ তাতে সমস্যার সৃষ্টি হয়৷ বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষিজমিতে জল জমে যায়৷ চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না৷ তাই কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়৷ গত কদিন ধরেই কৃষকরা আন্দোলন করে আসছে৷ শনিবার পথ অবরোধ আন্দোলনে নেমে পড়েছিলেন কৃষকরা৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *