নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৬ নভেম্বর৷৷ ধারা ১৪৪ জারি থাকা সত্ত্বেও ব্রু শরণার্থীরা অবরোধ করলেন দশদা-আনন্দবাজার রাস্তা৷ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সত্ত্বেও অবরোধকারীদের বলপূর্বক তোলে দেওয়ার কোন চেষ্টা করেনি প্রশাসন৷ ফলে, পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক রয়েছে এবং প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মন ওই অবরোধস্থলে গিয়ে সভাও করেছেন৷ তিনি ব্রু শরণার্থীদের পাশে আছেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ শুধু তাই নয়, সরকার জমি দিলে শরণার্থীদের জন্য সেই জমি তিনি নিজের টাকায় কিনবেন৷ সাথে তিনি হুমকি দিয়েছেন, শরণার্থীদের রেশন বন্ধ করে দেওয়ার অমানবিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ত্রিপুরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন৷ ব্রু শরণার্থীদের অবরোধকে ঘিরে উদ্ভুত পরিস্থিতির জেরে বৃহস্পতিবার কাঞ্চনপুর ছুটে যাচ্ছেন উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা সহ রাজ্য মন্ত্রিসভার চার সদস্য ও রাজ্যের দুই সাংসদ৷ ব্রু শরণার্থীদের সাথে তাঁরা বৈঠক করবেন এবং সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2019/11/11112222222222-1024x576.jpg)
টানা সাতদিন ধরে কাঞ্চনপুরের লক্ষীপুর এলাকায় দশদা-আনন্দবাজার রাস্তা অবরোধ করছেন ব্রু শরণার্থীরা৷ বিনামূল্যে রেশন ও নগদ আর্থিক সহায়তা চালু করার দাবিতে তারা ওই রাস্তা অবরোধ করছেন৷ সকাল ৫টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ওই অবরোধের জেরে এলাকায় পরিবেশ থমথমে হয়ে রয়েছে৷
আজ সকাল ৫টা থেকে যথারীতি অবরোধ শুরু করেন ব্রু শরণার্থীরা৷ দশদা-আনন্দবাজার রাস্তায় অবরোধে আজ অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে৷ এমবিডিপিএফ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ব্রোনো মিশা জানিয়েছেন, বিনামূল্যে রেশন ও নগদ আর্থিক সহায়তার চালু করার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের রাস্তা অবরোধ কর্মসূচি যে কোন মূল্যে জারি রাখা হবে৷ ওই অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে না৷ তিনি জানান, আজ চারজন ব্রু নেতা দিল্লী গেছেন৷ তাঁরা প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে দেখা করে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে রেশন ও নগদ আর্থিক সহায়তা পুনরায় চাল করার দাবি জানাবেন৷
এদিকে, গতকাল রাত থেকেই এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে৷ তবে, আজ সকালে নিরাপত্তা বাহিনীর গতিবিধি খুব একটা নজরে আসেনি৷ হাতে গুনা কয়েকজন টিএসআর ও সিআরপিএফ জওয়ান অবরোধস্থলে মোতায়েন রয়েছেন৷ মহকুমা প্রশাসন সূত্রে খবর, ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও এখনই ব্রু শরণার্থীদের বল প্রয়োগ করে তুলে দেওয়ার জন্য উপরতলা থেকে কোন আদেশ আসেনি৷
এদিন সকালে ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস প্রাক্তন সভাপতি প্রদ্যুৎ কিশোর কাঞ্চনপুরে ব্রু শরণার্থীদের অবরোধস্থলে গিয়েছেন৷ তিনি তাঁদের সাথে কথা বলেছেন এবং সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ তিনি অবরোধস্থলে অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেছেন, সমস্ত ব্রু শরণার্থী ভারতের নাগরিক৷ তাঁদেরও এদেশে সম্মানের সাথে বসবাসের অধিকার রয়েছে৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরা সরকার সম্মত হলে ব্রু শরণার্থীদের জন্য তিনি জমি কিনবেন৷ সেখানে ব্রু শরণার্থীরা থাকতে পারবেন৷ অন্তত, বিএসএফের ফায়ারিং রেঞ্জের জন্য ২৭০০ একর জমি বরাদ্দ করার চাইতে শরণার্থীদের বন্দোবস্ত করা অনেক বেশি জরুরি, মনে করেন তিনি৷ এদিন প্রদ্যুৎ আরো বলেন, ব্রু শরণার্থীদের রেশন বন্ধ করে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে৷ তাই, এর বিচারের জন্য তিনি ত্রিপুরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন৷
এদিকে, বিভিন্ন রাজনৈতিক এই ইস্যুতে রাজনীতির বাজার গরম করে দিয়েছে৷ রেশন বন্ধ করে দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করার অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা৷ ফলে, ব্রু শরণার্থী ইস্যুতে ত্রিপুরা সরকার কিছুটা চাপে রয়েছে৷ তাই, পরিস্থিতি মোকাবিলায় ছুটে যাচ্ছেন ত্রিপুরার উপমুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার চার সদস্য ও দুই সাংসদ৷ জানা গিয়েছে, উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা, আইন মন্ত্রী রতন লাল নাথ, রাজস্ব মন্ত্রী এন সি দেববর্মা, সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা মন্ত্রী শান্তনা চাকমা, সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক এবং সাংসদ রেবতি ত্রিপুরা৷ আগামীকাল দুপুর ১২টা নাগাদ তাঁরা ব্রু শরণার্থীদের সাথে বৈঠক করবেন৷