![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2019/08/3-1024x576.jpg)
নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ আগস্ট৷৷ ত্রিপুরায় পূর্ত দফতরের ৮০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে আজ বৃহস্পতিবার ভিজিলেন্স অফিসারদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হলেন প্রাক্তন পূর্তমন্ত্রী তথা বর্তমান বিরোধী উপ-নেতা বাদল চৌধুরী৷ ভিজিলেন্সের ডিএসপি জেরেমিয়া ডার্লং তাঁকে ২০০৮ থেকে ২০১৮ অর্থবছরে পূর্ত দফতরের বিভিন্ন কাজ সম্পর্কে বেশ কিছু সওয়াল করেছেন৷
বাম আমলের বহু বছর পুরনো সরকারি কাজের সমস্ত তথ্য, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের মেমো দিলে, তার ভিত্তিতে সমস্ত সওয়ালের জবাব দিতে পারবেন বলে ভিজিলেন্সের আধিকারিককে জানিয়ে দেন সিপিআইএম নেতা প্রাক্তন পূর্তমন্ত্রী বাদল চৌধুরী ৷ আজ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, যে কোনও জিজ্ঞাসাবাদে সবর্োতভাবে সাহায্যে প্রস্তুত আছেন ৷ তবে, পুরনো সরকারি কাজের ওই সময়কার সমস্ত তথ্য প্রদান করা হলে, সে সব তা খতিয়ে দেখে ভিজিলেন্সের প্রশ্ণের জবাব দিতে পারবেন তিনি৷
প্রসঙ্গত, তদানীন্তন বামফ্রন্ট আমলে পূর্ত দফতরে ৮০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে প্রাক্তন পূর্ত মন্ত্রী তথা বর্তমান বিরোধী উপ-নেতা বাদল চৌধুরীর বিরুদ্ধে৷ এর আগে আগরতলায় উড়ালপুল নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি ত্রিপুরা পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের জেরার মুখোমুখি হয়েছিলেন৷ পূর্ত দফতরে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ইতিপূর্বে ভিজিলেন্স তাঁকে দুই দফায় নোটিশ পাঠিয়েছিল৷ কিন্তু, শারীরিক অসুস্থতা এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনী কাজে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে তিনি এড়িয়ে গিয়েছিলেন ৷ ফলে, তাঁকে তৃতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ পাঠিয়েছিল ভিজিলেন্স ৷ অবশেষে আজ তিনি ভিজিলেন্সের মুখোমুখি হয়েছেন৷
আজ তিনি বলেন, ২০০৮ সালে তদানীন্তন বামফ্রন্ট আমলে পূর্ত দফতরে বিভিন্ন কাজের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল৷ সে-মোতাবেক কাজ রূপায়িত হয়েছে৷ কিন্তু, এখন ওই সমস্ত কাজের পুনর্মূল্যায়ণ করা হচ্ছে ৷ তাই, ভিজিলেন্স বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য ডেকেছে ৷ তাঁর দাবি, বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ত্রিপুরার উন্নয়নে যা কাজ করেছে তাতে গর্ব বোধ করি ৷ কিন্তু, ১০০ বছরের আয়ু সম্পন্ন বহুতল ভবন কিংবা সেতুর নির্মাণকাজ নিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলে তা ভীষণ দুর্ভাগ্যজনক, মন্তব্য করেন তিনি৷
তাঁর কথায়, সরকারি কাজের বরাত দেওয়ার এক্তিয়ার নেই মন্ত্রিদের ৷ সে-বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীও অবগত৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরা সরকার বরাবরই পূর্ত দফতরের কাজের বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নিয়ম অনুসরণ করে চলেছে৷ অতীতেও সমস্ত কাজের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে৷ ফলে, সরকারী পদস্থ আধিকারিকরাই কাজের বরাত দিয়ে থাকেন৷ মন্ত্রিসভা এবং সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী কেবল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা নিয়ে থাকেন৷
প্রাক্তন পূর্তমন্ত্রীর বক্তব্য, ভিজিলেন্স ইতিমধ্যে তদানীন্তন মুখ্যসচিব শশি প্রকাশ এবং পূর্ত দফতরের প্রধানসচিব ওয়াই পি সিংহকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে৷ রাজ্যের স্বার্থে তাতে কোনও আপত্তি নেই ৷ ফলে, আমিও তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে এসেছি, বলেন তিনি ৷ বাদলবাবুর কথায়, ভিজিলেন্সের যে কোনও প্রশ্ণের জবাব দিতে তিনি প্রস্তুত ৷ তাদের তদন্তে সব রকমের সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছি ৷ কিন্তু, সংশ্লিষ্ট কাজের সমস্ত তথ্য প্রদান করা হলে তবেই তাঁদের প্রশ্ণের সঠিক জবাব দেওয়া সম্ভব হবে, ভিজিলেন্সের ডিএসপি এ-কথাই তিনি জানিয়েছেন৷
তবে, এভাবে ভিজিলেন্সের খড়গ ঝোলানোর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে দাবি করেছেন বাদল চৌধুরী ৷ তাঁর কথায়, বাম আমলে পূর্ত দফতরে ৮০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে, এই গল্প কোথা থেকে এসেছে সে-বিষয়ে ওয়াকিবহাল নন তিনি ৷ কারণ, ভিজিলেন্সও নির্দিষ্ট করে টাকার পরিমাণ তুলে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি ৷ তিনি বলেন, দুর্নীতির অভিযোগে সাক্ষী কিংবা আসামী হিসেবে নয়, শুধু তথ্য জানার জন্যই ভিজিলেন্স তাঁকে ডেকেছে ৷ কিন্তু, এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে তিনি মনে করেন ৷ কটাক্ষের সুরে বাদল বলেন, গতকাল দেওয়াল টপকে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমকে সিবিআই গ্রেফতর করেছে ৷ ফলে, বিরোধীদের উপর হয়তো চাপ সৃষ্টি করার লক্ষ্যেই বার বার জিজ্ঞাসাবাদে ডাকা হচ্ছে ৷
তাঁর অভিযোগ, বামফ্রন্ট আমলে প্রচুর কাজ হয়েছে৷ বহুতল ভবন, সেতু, পাকা রাস্তা সবই করেছে বামফ্রন্ট সরকার৷ কিন্তু, এখন বহু পাকা রাস্তা সংস্কারের অভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ তবে সত্যিই কি সংস্কারের অভাবে পাকা রাস্তার বেহাল অবস্থা, নাকি নিম্নমানের কাজের ফলে এই দশা, ভিজিলেন্স সেই তদন্তই শুরু করেছে বলে সূত্রের খবর৷ কারণ, ত্রিপুরায় সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর বিভিন্ন রাস্তার হাল দেখে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ সূত্রের দাবি, শুধু পাকা রাস্তা নয়, প্রচুর বহুতল ভবনের নির্মাণকাজে অনিয়ম হয়েছে, সে-সব অভিযোগের তদন্ত চলছে৷ তাই, তদানীন্তন পূর্তমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে ভিজিলেন্স ৷